নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মাঝখানে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আবারো রোগী ও লাশবাহী গাড়ীর দখলে চলে গেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর। যেখানে বাহিরে থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের গাড়ী রাখার কথা সেখানেই গাড়ী রেখে স্ট্যান্ড দখল করে রাখছে চালক ও দালালরা। হুমকি-ধামকির ভয়ে বাহিরে থেকে আসা গাড়ীর চালকরা কিছু বলতে পারে না। স্থানীয় প্রভাবশালী গাড়ীর চালকরা রামেক হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনের চত্বরটি দখল করে নিজেদের মাইক্রো রাখছে। যেগুলো এ্যাম্বুলেন্স না হয়েও তারা এ্যাম্বুলেন্স বলে চালিয়ে দেয়। তারা ভাড়াও নেয় অন্যান্য গাড়ীর দুই থেকে তিন গুণ। বাধ্য হয়েই রোগীর স্বজনরা তাদের গাড়ীতে যায়। অথচ
প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। রাজশাহীর স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় এ সংক্রান্ত খবর একাধিকবার প্রকাশিত হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় একবছর আগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরের সামনের রাস্তায় থাকা রোগী ও লাশবাহী গাড়ী এবং হাসপাতাল চত্বর থেকে স্ট্যান্ড হটিয়ে দেয়। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের তৎকালীন কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান এর নির্দেশে মাইক্রো স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করা হলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার দখল হতে শুরু করে। বর্তমানে পুরো মাইক্রো স্ট্যান্ড দখল হয়ে গেছে। স্থানীয় চালক ও দালালদের মাইক্রোবাসের কারণে বাইরে থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীবাহী গাড়ী রাখার জায়গা থাকেনা। তাদের আবার হাসপাতাল থেকে কোনো রোগী ও লাশ নিয়ে যেতে বারণ করা হয়। আর কোন রোগী যেতে
চাইলে বা গাড়ীর চালক নিয়ে যেতে চাইলে হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় তাকে স্ট্যান্ডের খরচ বাবদ টাকা দিতে হয়। এ কারণে বাইরে থেকে আসা চালকরা কোনো ভাড়া নিয়ে যেতে পারেন না। এভাবে বছরের পর বছর চলে আসলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তারা রোগী ও লাশ জিম্মি করে নিজেদের গাড়ীতে যেতে বাধ্য করে।
হাসপাতালের স্ট্যান্ডে বর্তমান সময়ে গাড়ী রাখতে পারার কারণে তারা হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে লোক পাঠিয়ে রোগী মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়। হাসপাতালে গেট পাশ সিস্টেমের কারণে খোদ রোগীর লোক যেতে না পারলেও দালালরা ঠিকই ওয়ার্ডে প্রবেশ করতে পারে। এতকিছুর পরও এসব গাড়ী চালক ও চিহ্নিত দালালরা বহাল তবিয়তে তাদের কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল রোববার রামেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোগী ও
লাশবাহী গাড়ীতে হাসপাতাল চত্বর ভর্তি রয়েছে। বাহিরে থেকে আসা রোগী বহনকারী গাড়ী সেখানে প্রবেশ করতে হিমসিম খাচ্ছে। আর চিহ্নিত গাড়ী সিন্ডিকেটের দালালরা সেখানে অবস্থান করছেন। তাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না।
রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক রোগীর স্বজন বলেন, আসার সময় আমরা নিজেদের গাড়ীতে এসেছিলাম। কিন্ত যাওয়ার সময় তারা আমাদের গাড়ীতে যেতে বাধা দেয়। গেলে তাদের স্ট্যান্ডের খরচ এমনকি সেই ভাড়া পর্যন্ত দেওয়ার দাবি করে। আরেক রোগীর স্বজন লায়েব বলেন, দেড় হাজার টাকার ভাড়া স্ট্যান্ডের গাড়ী চালকরা ৩ হাজার টাকা চায়। আরেক মৃত রোগীর স্বজন বলেন, আমার রোগী মারা গেলে তারা দুই হাজার টাকার ভাড়া ৬ হাজার টাকা দাবি করে। কোনো গাড়ীই যেতে না চাইলে বাধ্য হয়েই সেই টাকা দিয়ে গ্রামে যায়।
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল চত্বর থেকে রোগী ও লাশবাহী গাড়ী হঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তারা ভাড়া দ্বিগুণ নেয় সেও বিষয়টি আমরা জানি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (বোয়ালিয়া) আমির জাফর বলেন, স্ট্যান্ড থেকে স্থায়ীভাবে গাড়ী হঠিয়ে দেওয়া। আরএমপির ট্রাফিক বিভাগ ও রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে বসেই বিষয়টি ঠিক করা হবে। ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে বলেন, দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অচিরেই সেটি বাস্তবায়ন হবে।
এস/আর