খেলা ডেস্ক: তিনি আরো বলেন, তুষার ইমরান যদি মধ্য তিরিশে গিয়েও ‘এ’ দলে ডাক পেতে পারে, তবে আশরাফুল কেন পাবে না? সে যদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার মতো শারীরিক সক্ষমতা দেখাতে পারে এবং ঘরের ক্রিকেটে খুব ভালো পারফর্ম করে, তাহলে হয়তো তাকে বিবেচনায় আনা হতেও পারে। সন্দেহ নেই, আশরাফুল অনেক মেধাবী ব্যাটসম্যান। দেশকে কিছু ম্যাচ সে একাই জিতিয়েছে। তার আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা আছে, সে জানে কখন কি করতে হবে। যার প্রমাণও সে দিয়েছে।
আশরাফুল প্রসঙ্গে জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলেন, অনেক ধরেই সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে নেই। সুতরাং ঘরোয়া ক্রিকেটে সব ফরম্যাটে তাকে খেলতে হবে। ওর ফিটনেস আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জন্য ঠিক আছে কিনা, সেটা দেখতে হবে। সাসপেসশন যাওয়ার পর সব ফরম্যাটে খেলুক, তারপর এক বছর যাওয়ার বোঝা যাবে তার ফিটনেস কোন লেভেলে আছে।’
তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে যদি বলতে হয়, তাহলে বলব এই মুহূর্তে দলে কোনো জায়গা নেই। আমাদের যে ফিটনেস লেভেল আছে, এইচপি থেকে শুরু করে ‘এ’ দল ও জাতীয় দলের ফিটনেসের সাথে সে অ্যাটাচড না। এই জায়গায় আসতে হলে তাকে কিছু সময় দিতে হবে। এই লেভেলটা যদি থাকে, তাহলে চিন্তা করা যাবে। সুতরাং এই মুহূর্তে আমরা চিন্তা ভাবনা করছি না।
আশরাফুলের আশা একেবারেই ফুরিয়ে যায়নি উল্লেখ করে নান্নু বলেন, ৩২ বছর বয়স, এটা কোনো বিষয় না। যদি ফিটনেস আন্তর্জাতিক মানের হয়, তাহলে যে কোন ক্রিকেটারই আসতে পারে। ফিটনেস জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের পর্যায়ে আনতে হবে। আর পারফরমেন্স অন্যদের তুলনায় অনেক ভালো হতে হবে। কারণ সে যে জায়গায় ব্যাট করে, সে জায়গায় অনেক ক্রিকেটার স্থায়ী হয়ে গেছে। জাতীয় দলের জন্য কোনো ক্রিকেটারকে যদি দেখা হয়, তাকে বিশেষ পারফরম্যান্স করেই আসতে হবে।
আশরাফুলকে আবারও স্কোয়াডে পেলে খুশি হবেন সতীর্থরা
পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসার মোহাম্মদ আমির। আশরাফুল কেন পারবেন না ভুল মানুষই করে, আশরাফুলও করেছে এবং সেই ভুলের মাশুল তাকে দিতে হয়েছে। সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাকে আবারও লাল-সবুজের জার্সিতে দেখতে চান জাতীয় দলের সদস্যরা।
এ প্রসঙ্গে টাইগারদের ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল বলেন, আশরাফুলের ব্যাপারটা খুবেই সেনসেটিভ ইস্যু, আমরা সবাই জানি। সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর উনি আমাদের মতোই একজন থাকবেন। যে কারণে উনাকে সাজা দেওয়া হয়েছিল, সেই সাজা কাটিয়েই আবার ক্রিকেট মাঠে নামবেন। ফলে এখন আর তাকে অন্য চোখে দেখা উচিত হবে না। কারণ তিনি তাঁর সাজাটা পুরোপুরি ভোগ করেই ফিরছেন। আশা করি ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করে জাতীয় দলে ফিরতে পারবেন।
আশরাফুল প্রসঙ্গে তামিম আরো বলেন, আশরাফুলের মতো প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে জন্মায়নি। সাজার মেয়াদ কাটিয়ে ফেরার পর যেকোনো কিছুই হতে পারে। সে আবারও জ্বলে ওঠতে পারে।
বাংলাদেশে ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও চান, আশরাফুল অাবার আগের মতোই আশার ফুল হয়ে উঠুক। আশরাফুল প্রসঙ্গে তিনি বললেন, এখন তার নিজের ফিটনেসের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।
ফিরে দেখা: আশরাফুলের ক্যারিয়ার
২০০১ সালের ১১ এপ্রিল জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে আশরাফুলের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়। প্রথম ম্যাচটিতে আশরাফুল মাত্র ৯ রান করেন, সে ম্যাচে বাংলাদেশ হারে ৩৬ রানে। নিজের প্রথম বিশ্বকাপেও তার পারফরম্যান্স খুব একটা আলো ছড়াতে পারেননি ।বিশ্বকাপের পুরো টুর্নামেন্টে ১৪.২০ গড়ে মাত্র ৭১ রান করেন তিনি। বাংলাদেশ গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়।
আশরাফুল বিশ্বের কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট শতক করার রেকর্ডের অধিকারী। নিজের ১৭তম জন্মদিনের একদিন আগে ২০০১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে হওয়া এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে অভিষেক টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১১৪ রান করে এই রেকর্ডের মালিক হন।
২০০৪ সালে জাতীয় দলে ভারতের বিরুদ্ধে ১৫৮* রান করেন।শতকটি ছিল ঐ সময় তার ব্যক্তিগত দ্বিতীয় শতক এবং কোন বাংলাদেশি ক্রিকেটারের সর্বোচ্চ টেস্ট রান।
২০০৫ সালের ১৮ জুন তারিখে ইংল্যান্ডের কার্ডিফে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে তৎকালীন বিশ্বের একনাম্বার ক্রিকেট পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্মরণীয় জয়ে আশরাফুল ১০০ রান করেন। এটি তার একমাত্র শতক এবং সেই ম্যাচের খেলাটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে স্মরণীয় ম্যাচ।
২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনি ১৩৬ রান করেন।শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০০৭ সালে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে তার অভিষেক হয়। অধিনায়ক হিসেবে তার শুরুটা ভালো হয়নি। প্রথম টেস্টের দু’ ইনিংসে তিনি যথাক্রমে ৭ ও ৩৭ রান করেন এবং দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। দ্বিতীয় ইনিংসেই তিনি ১২৯ রানের এক ইনিংস খেলন। অপরাজিত থেকে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ৪টি সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন। এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে আশরাফুল বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান স্কোরার। তার উপরে আছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার।
২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৮৩ বলে ৮৭ রান করেন আশরাফুল, যা বাংলাদেশকে আরেকটি স্মরণীয় জয় উপহার দেয়। এতে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন। ২৪ গড়ে ২১৬ রান করে আশরাফুল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান স্কোরার হন।
বিশ্বকাপের পর শাহরিয়ার নাফিসের জায়গায় বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক নির্বাচিত হন। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সিরিজের পর টেস্ট ও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দলের অধিনায়ক হিসেবে আশরাফুলকে নির্বাচিত করা হয়।সেই সময় তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয় কনিষ্ঠতম অধিনায়ক হন।
২০০৭ সালে সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা টি-২০ বিশ্বকাপের আয়োজন করে। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের দরকার হয় বাংলাদেশের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আশরাফুল মাত্র ২০ বলে অর্ধ-শতক করে রেকর্ড করেন। শেষ পর্যন্ত পুরো সিরিজে এটাই বাংলাদেশের একমাত্র জয়। রেকর্ডের ছয়দিন পরেই ভারতের যুবরাজ সিং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ১২ বলে অর্ধ-শতক করে রেকর্ডটি ভেঙ্গে দেন। ২০১৭-১৮ মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে লিস্ট ‘এ’-তে পাঁচটি সেঞ্চুরি করেছেন আশরাফুল। একটি ‘লিস্ট’-এ টুর্নামেন্টে মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি এই কীর্তি গড়েন। আশরাফুলের ওপরে রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার আলভিরো পিটারসন। তিনি ২০১৫-১৬ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া টুর্নামেন্ট মোমেন্টাম ওয়ানডে কাপে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি মেরেছেন।
২৩টি লিস্ট-‘এ’ ম্যাচ খেলা আশরাফুলের গড় ৪৭.৬৩। এই সময়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনি খুব একটা ভালো করতে পারেননি। ১৩ ম্যাচ খেলা আশরাফুলের গড় এখানে ২১.৮৫। সেঞ্চুরি মোটে একটি।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স
গত দুই মৌসুমে আশরাফুলের সেরা পারফরম্যান্স, ২০১৭-১৮ মৌসুমে লিস্ট-এ’ তে পাঁচটি সেঞ্চুরি।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে করা তার পাঁচ সেঞ্চুরি একটি রেকর্ড। কোন লিস্ট-এ টুর্নামেন্টে পাঁচটি সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় ক্রিকেটার তিনি।
২০১৫-১৬ মৌসুমে মোমেন্টাম ওয়ানডে কাপে দক্ষিণ আফ্রিকার আলভারো পিটারসন পাঁচটি সেঞ্চুরি করেছিলেন।
নিষেধাজ্ঞা উঠার পর ২৩টি লিস্ট-এ ম্যাচে আশরাফুলের গড় ৪৭.৬৩ হলেও তবে এ সময়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সময়ে ১৩ ম্যাচে তার গড় ২১.৮৫।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/জেএন