নজরুল ইসলাম জুলু : ৫ই আগষ্টে ছাত্র-জনতার গণ অভ্যূত্থানে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের হুকুমজারি, আন্দোলনে সাধারণ মানুষের উপর অমানবিক নির্যাতন জুলুম, গুলিবর্ষণ, আগুন দিয়ে লাশ পোড়ানো ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশ পুলিশ জনরোষের মুখে পড়ে।
১৬ বছর ধরে স্বৈরাচার সরকারের মন মর্জি মতো কাজ করার ফলে পুলিশের উপর জনগণের মনে অনাস্থা ও ক্ষোভ তৈরির হয়েছিল।সে জমে থাকা ক্ষোভের জন্যই ৫ই আগষ্ট বিক্ষুব্ধ জনগণ দেশের প্রায় সর্বত্রই থানা গুলোতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় পুলিশ বাহিনীর ব্যবহৃত গাড়ি ও থানা। লুটপাট হয় থানায় থাকা গোলাবারুদ। সারাদেশেই পুলিশ বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে। পুলিশহীন বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। জনরোষে শিকার হয়ে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভেঙে পড়ে। পরবর্তীতে পুলিশ বাহিনীর কার্যত সংস্কার ও দোষী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সারাদেশের পুলিশ কর্মবিরতিতে চলে যান। ফলপ্রসূতে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর পালিশ বিহীন দেশের আইনশৃঙ্খলা, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ সব প্রতিষ্ঠানের কাঠামো ভেঙে পড়ে।
সারা দেশে খুন, ছিনতাই লুটপাট, জমি দখল, চুরি, ডাকাতি, মব কিলিং ইত্যাদি অপকর্ম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। অন্তর্বর্তী সরকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও এখনো কোনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এইদিকে পুলিশ বাহিনীকে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের তাবেদার পুলিশ সদস্যদের প্রভাবমুক্ত করতে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সারাদেশেই দীর্ঘদিন ধরে পদবঞ্চিত পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, অভিযুক্ত দোষী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, বদলি, পদায়নের মতো ব্যবস্থা ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও নতুন উদ্যমে পুরোনো দিনের হৃদয় বিদারক স্মৃতি ভুলে প্রকৃত অর্থে জনগণের সেবক হওয়ার লক্ষ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। কিন্তু, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেষ্টার পরও কেন যেন থামতেই চাইছে না সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। সারা দেশে এখনো অস্থির এবং অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সবক্ষেত্রেই কেমন যেন হ য ব র ল অবস্থা। জনমনে নেই স্বস্তির চিহ্ন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষত পুলিশবাহিনী কে। অনেকে আবার অভিযোগ করছেন পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখাচ্ছেন না। অনেকের ধারণা ৫ই আগষ্টে বিক্ষুব্ধ জনগণের রোষানলে পড়ে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা যে ট্রমার মধ্যে ছিল তা এখনো কাটেনি। এখনো তাদের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। এইদিকে ৫ই আগষ্ট বিক্ষুব্ধ জনগণ সারাদেশে পুলিশের অধিকাংশ গাড়িতে আগুন দেয় ও ভাংচুর করে। ফলে, থানায় মামলা, জিডি হলেও বা কোথাও অপরাধ সংঘটিত হলেও গাড়ির অভাব, পরিপূর্ণভাবে হারানো মনোবল ফিরে না পাওয়া এবং জনরোষের ভয়ের ফলে মাঠে পুলিশের উপস্থিতি এবং তৎপরতা খুবই কম। পুলিশের তৎপরতা ও পর্যাপ্ত পুলিশি টহল না হওয়ায় ফলে জনজীবনে স্বস্তি ফিরছে না। যারফলে খুন, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মব কিলিং, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে হরহামেশা। রাজশাহীতেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হওয়ার কোনো লক্ষন চোখে পড়ছে না ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কিছু সদস্যরা বলছেন, এখনও রাস্তায় তাদের দেখলে মানুষ নানান রকমের মধ্যে মন্তব্য করছে। নানান বিরূপ মন্তব্য শুনতে হচ্ছে তাদের। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ধৈর্য্য ধরছে পুলিশ সদস্যরা। এর মধ্যেই আসামি ধরতে যেতে হচ্ছে একাধিক পুলিশ সদস্যকে। জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের নিরাপত্তাও এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তারা। পুলিশের সঙ্গে জনগণের সুসম্পর্ক গড়তে বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। এছাড়াও বিগত স্বৈরাচার শাসনের সময় কিছু উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের আচরণের জন্য জনসাধারণের মধ্যে পুলিশের প্রতি যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তা দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অনেক পুলিশ সদস্যরাই বলছেন আন্দোলনে সৃষ্ট সংঘর্ষ ও সহিংসতায় ব্যাপক প্রাণহানির পর পুলিশের মধ্যে যে ভীতি এবং আতঙ্ক তৈরি হয়েছে তা এখনো কাটেনি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশ যেভাবে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে, লাশের স্তূপ বানিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে, এসব ঘটনায় জনমনে বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়েছে। জনগণ ধরেই নিয়েছে, পেশাদারিত্ব নয়, কোনো পক্ষের হয়ে কাজ করে পুলিশ। পুলিশের এই নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে অজানা আতঙ্ক ও আস্থার অভাব দেখা দেয়ায় মাঠ পর্যায়ে সেভাবে কাজ করতে পারছে না বাহিনীটি। তবে অচিরেই পুলিশ-জনতা সম্পর্ক আবারও আস্থাশীল হবে বলে সবাই প্রত্যাশা করছেন। বর্তমানে পুলিশ কর্মকর্তারা যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে ও অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে তাদের কোনো চেষ্টাই যেন কাজে আসছে না। কিছুতেই লাগাম টানা যাচ্ছে না অপরাধীদের। রাজশাহী মহানগরীতে চিহ্নিত কিশোর গ্যাং,ছিনতাইকারী, সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের চক্র গুলো পূর্বের চেয়ে এখন অনেক বেশি সক্রিয় রয়েছে। শহরে আশংকাজনক ভাবে ছিনতাই, চুরি, ও হত্যার মতো ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে ।
উল্লেখ্য, ৫ই আগষ্টে দেশের অন্যান্য জায়গার মতো রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের থানা গুলো জনরোষের মুখে পড়ে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরএমপি ও জেলা পুলিশের একাধিক সূত্র মারফত জানা যায় , আরএমপির ১২টি থানার মধ্যে সদর দপ্তরসহ অন্তত ৪টি ও ৩টি ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। জেলা পুলিশের ৮টির মধ্যে দুই থানায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ সময় আরএমপি ৩০টি ও জেলা পুলিশের ১১টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। জেলা পুলিশ তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১ মোটি ২৬ লাখ টাকা নিশ্চিত করতে পারলেও আরএমপি তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
তবে প্রাথমিকভাবে ধারণ করা হচ্ছে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৫০ কোটি টাকা। অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ও দাপ্তরিক কাগজপত্র ভস্মীভূত হয়েছে। এসবের মধ্যে বিভিন্ন মামলার নথিসহ আসামিদের তথ্য ছিল। সূত্রটি জানিয়েছে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাজশাহী নগরীতে বিভিন্ন থানায় হামলা হয়। মহানগর (আরএমপি) ও জেলা পুলিশের বিভিন্ন থানায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। ঘটে লুটপাটের ঘটনা। অগ্নিসংযোগে পুলিশের ৪১টি গাড়ি ভস্মীভূত হয়ে। খোয়া যায় ১৬২টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৭০০ রাউন্ড গুলি । এখন পর্যন্ত ১৪২টি অস্ত্র উদ্ধার হলেও সন্ধান মেলেনি বাকিগুলোর। নগরবাসীর নিরাপত্তায় বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ মোড়ে স্থাপিত ৪০০ সিসি ক্যামেরা অকেজো হয়ে পড়েছে। আগুনে ভস্মীভূত আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট। ফলে রাজশাহী মহানগরী মূলত অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা গুলো ভেঙে বা পুড়ে যাওয়ায় কোনো এলাকায় অপরাধ সংঘটিত হলে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়াও অগ্নিসংযোগের কারণে অপরাধীদের গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট পুড়ে গেছে। ফলে দাগী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নামধারী অসাধু ব্যক্তিদের অপতৎপরতা, পুলিশের দূর্বল মনোবল ও মাঠ পর্যায়ে পর্যাপ্ত টহল ও নজরদারির অভাবে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। শান্ত মহানগর হয়ে উঠেছে অশান্ত। রাজশাহী মহানগরী পরিণত হয়েছে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে। ৫ই আগষ্টের পর নগরীর সাধুর মোড়, শেখের চর, বাস টার্মিনাল, আম চত্বর, লক্ষ্মিপুর, সাহেব বাজার, নিউমার্কেট রোড, সিএন্ডবি মোড়, খুলিপাড়া, পঞ্চবটি, আলুপট্টি, বিনোদপুর, রেলগেট সহ প্রায় প্রতিটি পয়েন্টে ছিনতাইকারী চক্র মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিদিনই নগরের বিভিন্ন জায়গায় হামলার ঘটনা ঘটছে। প্রকাশ্যে দিবালোকে চলছে ধারালো অস্ত্রের ঝলকানি, চাঁদাবাজি, জমি দখল, ছিনতাই, ও হত্যার অপচেষ্টা ও বিভিন্ন গ্রুপের সংঘর্ষ। বর্তমানে কিশোর গ্যাং গুলোর অপতৎপরতাও চোখে পড়ার মতো। বিগত স্বৈরাচার শাসনের সময় দেখা যায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসীদের নিজেদের প্রয়োজনে প্রভাব বিস্তারে বিভিন্ন অপকর্মে ব্যবহৃত করেছে। এখনো এই সমস্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিশেষ মহল ব্যবহার করছে।
এছাড়াও ৫ই আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যূত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নগরের আনাচে-কানাচেতে নব্য নেতার উৎপত্তি দেখা দিয়েছে। স্বঘোষিত এই সমস্ত নেতারাই মূলত প্রভাববিস্তার করছে। কিশোর গ্যাং গুলো, সন্ত্রাসীদের দিয়ে চাঁদাবাজি, জমিদখল, হামলা, হুমকি প্রদান করছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় যে, কিছু অসাধু ব্যক্তি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সাথে সুকৌশলে ছবি তুলে নিজেকে সে দলের নেতা বা নেতার অনুসারী হিসেবে ফেসবুকে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা করছে। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি , জমি জোর জবরদখল করছে। পাড়া মহল্লায় প্রভাব বিস্তারের জন্য ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও দূধর্ষ কিশোর গ্যাং দিয়ে প্রতিপক্ষকে হামলা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখলসহ জমিদখলের মতো অপরাধ করছে। অপরাধীদের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতা বিশেষ করে বিএনপির সংশ্লিষ্টতার বিষয় রাজশাহী মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মো: বজলুল হক মন্টু বলেন, ” আমরা সব বিষয়ে অবগত আছি। কিছু ব্যক্তি বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে অতীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সেল্ফি বা ছবি তুলেছে সেই ছবি ব্যবহার করে এখন তারা বিএনপির নাম ভাঙিয়ে নানান অপকর্ম করছে। আমাদের দলের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা আছে আমরা কোনোভাবেই কোনো বিশৃঙ্খলাকারীদের বরদাস্ত করবো না। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আমাদের দলের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কেউ চাদাবাজি, জমি দখল সহ কোনো আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড করলে আমরা তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করার আহবান জানিয়েছে। প্রতিনিয়ত দলের নেতাকর্মীরা মিলে মিটিং করে এইসব বিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।” মন্টু আরও জানান, ” এমন অনেক ব্যক্তি আছে যারা অনেক বছর আগে দল থেকে পদত্যাগ দিয়েছে। বর্তমানে দলের সাথে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তারাও ৫ই আগষ্টের পর নিজেদের বিএনপি কর্মী/নেতা দাবি করে আমাদের দলের সুনাম নষ্ট করছে। আমাদের দলের নাম ভাঙিয়ে যারা এইসব অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা সতর্ক রয়েছি। এখন যে কেউ বিএনপির নেতা দাবি করলেই তো আর তারা বিএনপির কেউ হয়ে যায় না। আপনারাও খোঁজ নিয়ে আসল পরিচয় জেনে দয়াকরে নউজ করবেন।”
এইদিকে, ধীরে ধীরে আরএমপি’র থানা পুলিশ তাদের কার্মকাণ্ড শুরু করলেও এখন পর্যন্ত সড়কে ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্টের উপস্থিতি কম। এ ছাড়া নগর ও উপজেলাগুলোতে পুলিশের টহলও কম। পুলিশ সদস্যরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের মধ্যে মনোবলের ঘাটতি রয়েছে। এই প্যানিক কাটিয়ে উঠতে তারা চেষ্টা করছেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমদ সফিউদ্দিন বলেন, শুনছি নগরীর নিরাপত্তায় স্থাপিত সিসি ক্যামেরাগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সার্ভার রুম পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। পুলিশ নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। নাগরিক হিসেবে এটি আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার। আগের এক কমিশনার নগরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে নিজ উদ্যোগে নগরে ৪ শতাধিক সিকিউরিটি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেন। সরকারি সহায়তা ছাড়াই তিনি সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে এই কাজটি করেন। এতে করে নগরবাসী দারুণভাবে উপকৃত হয়; নগরীতে অপরাধ কমে আসে। ওই সময়ে নগরীতে কোনো অপরাধের ঘটনা ঘটলে সিসি ক্যামেরার সাহায্যে অপরাধীদের ধরতে বা শনাক্ত করতে সুবিধা হয়েছে প্রশাসনের। তবে এক বছর ধরে পর্যায়ক্রমে এই সিসি ক্যামেরাগুলো নষ্ট হতে থাকে। এগুলো সংস্কারেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এটা আমাদের একটা সমস্যা। একজনের একটা ভালো উদ্যোগ অন্যজন আসলে তা ঠিক থাকে না।
রাজশাহী জেলা পুলিশের নবনিযুক্ত পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান বলেন, পুলিশ কিছুটা ট্রমার মধ্যে ছিল। তবে পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। জেলা পুলিশের কোনো আগ্নেয়াস্ত্র চুরি যায়নি। তবে সাড়ে ৬০০ রাউন্ড গুলি লুট এবং ১১টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যৌথ বাহিনী পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং অবৈধ আগ্নেয়ান্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি চিহ্নিত অপরাধীদের ধরতে মাঠে কাজ করছে। এ সময় তিনি আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অবকাঠামো সংস্কার ও পুনঃস্থাপনে কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে কমিশনার আরও বলেন, সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অধীনে প্রায় ৪০০টা ক্যামেরা ছিল, যা দিয়ে আরএমপি তার এলাকা পর্যবেক্ষণ করত। অপরাধ কমাতে ও অপরাধীদের ধরতে এটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন চাহিদা ৫০০টি সিসি ক্যামেরার। গত ৫ আগস্টে এই ইউনিটের ডেটা সার্ভার, স্টোরেজ ও মনিটর সব পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এত টাকার জোগান দেওয়া এখন আমাদের (আরএমপি) পক্ষে সম্ভব না। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে এগুলো পুনঃস্থাপনের জন্য।
রাজশাহী উপ-পুলিশ কমিশনার অনির্বাণ চাকমা বলেন, শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা সজাগ রয়েছি। খুব দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এইজন্য সকলের সহযোগিতা আশা করছি। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বর্তমান পুলিশ কমিশনার জনাব মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান যোগদানের পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। নিয়মিত তিনি তার টিম মেম্বার দিয়ে নিয়ে মিটিং করছেন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বর্তমান কর্ম পরিবেশ নিয়ে রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি মো: মেহেদী মাসুদ জানান, আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি। পুলিশ সদস্যদের হারানো মনোবল ফিরিয়ে আনতেও চেষ্টা করছি। প্রতিদিন সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি যেন জনগণের আস্থা ফিরে পায়। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারি। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন আমাদের থানায় দলে দলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ছাত্র সংগঠনের পরিচয়ে লোকজন আসছেন বিভিন্ন বিষয়সহ মামলা সংক্রান্ত বিষয় গুলো নিয়ে কথা বলতে। তাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতে হচ্ছে। এতে করে অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ যারা থানায় সেবা নিতে আসছেন তাদেরকে ঠিক মতো সময় দিতে পারছি না। সারাদিন নাওয়া-খাওয়ার কোনো ঠিক থাকছে না। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি খুব শীঘ্রই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
বিএ…