বিশেষ প্রতিবেদক : আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদক বিরোধী অভিযানের মধ্যেও থেমে নেই রাজশাহী মহানগর ও আশেপাশের উপজেলার মাদক ব্যবসায়ীরা। অভিযানের শুরুতে আতঙ্কে মাদক ব্যবসায়ীরা গা ঢাকা দিলেও আবার তারা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে বলে অভিযাগ উঠছে। এমনকি প্রকাশ্যে ঈদ শপিংও করছে এসব মাদক ব্যবসায়ীরা। মহানগরের মতিহার, রাজপাড়া ও বোয়ালিয়া থানা এলাকার শীর্ষ কোন মাদক ব্যবসায়ী এখনো পুলিশের হাতে আটক হয়নি। ফলে জনগনের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কারো কারো নামে একাধিক মাদক মামলাও রয়েছে। নগরের এ তিন থানা এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের এখানো ধরতে পারেনি পুলিশ।
মাদকের বিরুদ্ধে চলো যাই যুদ্ধে স্লোগানে দেশব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা গা ঢাকা দেয়। কোন কোন মাদক ব্যবসায়ী পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আবার রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন মফস্বল জেলা শহর ও উপজেলা শহরের মাদক ব্যবসায়ীরা মহানগরীতে গা ঢাকা দিয়েছে এমন তথ্য উঠে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের পরও থেমে নেই মাদক ব্যবসা। শুধু পাল্টেছে মাদক ব্যবসার ধরণ। আরএমপি ও জেলা পুলিশ প্রতিদিন পৃথক অভিযান চালিয়ে মাদকসেবী ও বহনকারীদের আটক করছে। কিন্ত এ অভিযানে বড় কোন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হচ্ছে না। তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
অভিযানের কারণে দাম একটু চড়া ধরা হচ্ছে। চড়া দামে বিক্রি হলেও মাদক কেনাবেচায় মন্থর গতি নেই।
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সুন্দরী তরুণীদের দিয়ে মাদক আনা-নেওয়া করা হচ্ছে। এসব স্কুল-কলেজ পড়–য়া সুন্দরী তরুণীরা অর্থের লোভে মাদক একজনের কাছ থেকে নিয়ে অন্যজনের হাতে কোন ধরণের বাধা বিপত্তি ছাড়াই পৌঁছে দিচ্ছে। তারা এ কাজে ভ্যানিটি ভ্যাগ ও ঈদের সময় হওয়ায় শপিং ব্যাগও ব্যবহার করছে। যাতে প্রশাসনের চোখ সহজেই ফাঁকি দেওয়া যায়। ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকেই মাদক বহনের কাজ করছে এসব তরুণীরা। আর এদের গড ফাদাররা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
পুলিশের তালিকাভুক্ত এসব মাদক ব্যবসায়ীরা খুব কমই গ্রেফতার হয়েছে। এ কারণে সাধারণ লোকজনের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, মাদক বিরোধী অভিযানের সময়ও কি এরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে? এরা মাদক দিয়ে যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। মুহূর্তেই ম্লান করে দিচ্ছে একটি পরিবারের স্বপ্ন। অনেক শিক্ষিত যুবককেও এরা নষ্ট করে দিচ্ছে। তারপরও তারা আইনের আওতায় আসছেনা। এ কারণে মাদক বিরোধী অভিযানের সময় এদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা জরুরী বলে স্থানীয়রা দাবি করছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দাবি করছে, মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীরা গা ঢাকা দিয়েছে। তবে এমন কথা মানতে নারাজ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, যে সকল মাদক ব্যবসায়ীদের নামে জেলা ও মহানগরের থানাগুলোতে একাধিক মামলা রয়েছে সে মামলার নির্ধারিত তারিখের দিনে তাদের কোর্টে উপস্থিত হয়ে হাজিয়া দেওয়া লাগে। তাহলে কেন তাদের পাওয়া যাবে না। আর যদি হাজিরাই দিতে না আসে তাহলে তাদের নামে তো গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হবে। সেক্ষেত্রে যারা কোর্ট পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকেন তাদেরও ইতিবাচক ভূমিকা থাকা জরুরী। কারণ তারাই মামলার নথিপত্র দেখভাল করেন। কোন তারিখে কার হাজিরার সময় তাও তারা জানেন। তাহলে কেন তারা আটক হবে না।
পুলিশের তালিকাভুক্ত রাজশাহীর এসব শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা গ্রেফতার হলেই অঞ্চল জুড়ে মাদকের ভয়াবহতা কমে আসবে বলে সাধারণ মানুষ মনে করছেন।
রাজশাহী মহানগরসহ আশেপাশের জেলার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা এই শহরে আত্মগোপন করে আছে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে এমন তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রয়েছে বলে একটি গোয়েন্দা সূত্র দাবি করেছে। তারপরও তারা গ্রেফতার হচ্ছে না।
খবর ২৪ ঘণ্টার পক্ষ থেকে রাজশাহী জেলা পুলিশের সিনিয়র এএসপি সদর আব্দুর রাজ্জাক খানের কাছে মাদক বিরোধী অভিযানে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা গ্রেফতার না হয়ে মাদকসেবী ও বহনকারীরা গ্রেফতার হচ্ছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাবে বলেন, অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে একাধিক মামলার আসামী মাদক ব্যবসায়ীরা ঢাকা দিয়েছে। দু’একজন গ্রেফতার হচ্ছে। কোর্ট পরিদর্শকের কাছ থেকে তথ্য নিয়েও হাজিরার তারিখে তাদের ধরা যেতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে বিষয়টি মাথায় রেখেই আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা করা হবে।
এ বিষয়ে খবর ২৪ ঘণ্টার পক্ষ থেকে নগর পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার ইফতে খায়ের আলম’র কাছে মাদক বিরোধী অভিযানে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা গ্রেফতার না হয়ে মাদকসেবী ও বহনকারীরা গ্রেফতার হচ্ছে এমন প্রশ্ন করা হলে জবাবে তিনি বলেন, অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে একাধিক মামলার আসামী মাদক ব্যবসায়ীরা ঢাকা দিয়েছে। দু’একজন গ্রেফতার হচ্ছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে। এদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না।
কোর্ট পরিদর্শকের কাছ থেকে তথ্য নিয়েও হাজিরার তারিখে মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করা যেতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই আগামীতে কাজ করা হবে।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে