গা পুড়িয়ে দেওয়া গরম এখনো সেভাবে পড়েনি। ফাগুনের কোমল রোদ মেখে কাল বেলা ১টার দিকে স্টেডিয়াম-লাগোয়া লাক্কাতুরার সবুজ টিলায় উঠলেন দুই দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। চা-বাগানে হয়ে গেল দুই অধিনায়কের ট্রফি উন্মোচন। সিলেটেই হওয়া ২০২২ নারীদের এশিয়া কাপ ফাইনালের আগেও অবশ্য এ রকম দৃশ্য দেখা গিয়েছিল।
দুই অধিনায়ককে কাল একসঙ্গে দেখা গেলেও আজ হাসারাঙ্গাকে পাবে না শ্রীলঙ্কা। নিষেধাজ্ঞা থাকায় দুই ম্যাচ খেলা হচ্ছে না লঙ্কান অধিনায়কের। শ্রীলঙ্কা দল থেকে শেষ মুহূর্তে ছিটকে গেছেন কুশল পেরেরাও। বাংলাদেশ দলে এ ধরনের সমস্যা নেই। তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতেও স্বাগতিকেরা যথেষ্ট শক্তিশালী। মাত্রই বিপিএল খেলে আসা শান্ত, মাহমুদউল্লাহ, তাওহীদ হৃদয়, লিটন দাস, শরীফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদরা আছেন পুরোই টি-টোয়েন্টির মেজাজে। ছন্দেও আছেন দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটার। ব্যাটিংবান্ধব হিসেবে পরিচিত সিলেটের উইকেটে ভালো একটা টি-টোয়েন্টি সিরিজ উপহার দেওয়ার কথা বাংলাদেশের।
সিলেটে হওয়া সবশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজ বাংলাদেশ জিতেছিল ২-০ ব্যবধানে। গত জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর ঘরের মাঠে আর কোনো ২০ ওভারের ম্যাচ খেলেনি বাংলাদেশ। তবে গত বছরটা নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সেরা একটা বছরই কাটিয়েছে বাংলাদেশ। ১৪ ম্যাচে ১০ জয়ে ৭১ শতাংশ সাফল্যের হার ছিল তাদের। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ভরাডুবিতে টি-টোয়েন্টির সাফল্য কিছুটা আড়ালে পড়ে গেছে। তবে এ বছরে যেহেতু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হচ্ছে, ২০ ওভারে বাড়তি মনোযোগ থাকতে বাধ্য। আর ২০ ওভারের বিশ্ব প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি-পরিকল্পনা বাংলাদেশের শুরু হচ্ছে আজ থেকে শুরু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়েই।
শুধু বিশ্বকাপ নয়, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা বলে দুই দলের লড়াইয়ের ঝাঁজটাও ভাবনায় রাখতে হবে। গত ৬ বছরে দুই দলের ম্যাচ মানেই বাড়তি কিছু মসলা থাকেই। নাগিন নৃত্য থেকে শুরু করে সবশেষ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের টাইমড আউটের ঘটনা এ সাক্ষ্যই দেয়। কাল দুই দলের সংবাদ সম্মেলনেও তাই তপ্ত লড়াইয়ের প্রসঙ্গ এল। বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত অবশ্য কূটনৈতিক উত্তর দিলেন, ‘মাঠের বাইরের বিষয় নিয়ে চিন্তা করছি না, যেটা অতীতে হয়েছে, হয়েছে। আমার মনে হয় খুব ভালো সিরিজ হবে। দুটো দল জিততে খেলবে। আমরা আমাদের কাজটা করছি। জিততে যা যা করা দরকার করছি, করব।’
শান্ত যে বললেন, জিততে যা যা করা দরকার, করবেন—ম্যাথুসের বিপক্ষে টাইমড আউটের আবেদন করার বুদ্ধিটা তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত। সেই ঘটনার জেরে এখন উইকেটে আসার সময় নিয়ে আইন আরও কড়াকড়ি করেছে বিসিবি। শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা কোচ ক্রিস সিলভারউডও প্রায় শান্তর সুরে সুর মেলালেন, ‘আশা করি খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সিরিজ হবে দুই দলের। পেছনে কী হয়েছে, ওটা অতীত। চলে গেছে। সামনে কী আছে আমাদের সেটাতে মনোযোগ রাখতে হবে। বিশ্বকাপের দল গঠন আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সব দলই তা-ই করছে। বিশ্বকাপের আগে এমন একটা সিরিজ খেলা খুবই ভালো। দুই দলেই ভয়ংকর খেলোয়াড় আছে, ভালোই মজা হবে।’
সিলভারউড এই সিরিজে তাঁর দলকে ফেবারিট বললেও পরিসংখ্যান বলছে, দর্শকদের বিনোদিত হওয়ার উপকরণ মিলতে পারে এই সিরিজে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৩টি টি-টোয়েন্টি খেলে ৪টি জিতেছে বাংলাদেশ। দুই দলের সর্বশেষ দেখা হয়েছে ২০২২ সালে, এশিয়া কাপের সে ম্যাচে শ্রীলঙ্কা জিতেছিল ২ উইকেটে। তবে গত ৬ বছরে বাংলাদেশ নিজেদের মাঠে শ্রীলঙ্কাকে একবারও হারাতে না পারলেও যে দুবার তাদের হারিয়েছে, দুটিই লঙ্কানদেরই মাঠে। সিলেটের নয়নাভিরাম স্টেডিয়ামে একবারই শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে হওয়া সে ম্যাচে বাংলাদেশ বড় ব্যবধানেই হারিয়েছিল। শ্রীলঙ্কার কোচ তখন কে ছিল মনে আছে? চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। যিনি এবার নিজের দেশকে হারাতে আছেন বাংলাদেশের ডাগ আউটে।
তাঁর অধীনে ২০২৩ বিশ্বকাপ ভালো করেনি বাংলাদেশ, হাথুরু তাই বিশেষ পাখির চোখ করেছেন এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে। এবারও ব্যর্থ হলে আরও একটা লাল ‘ক্রস’ পড়ে যাবে তাঁর প্রোফাইলে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হতে যাওয়া তিন ম্যাচ সিরিজে প্রথম টি-টোয়েন্টি শুধুই হাথুরুর জন্য নয়, শান্তর কাছেও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমবারের মতো পূর্ণ অধিনায়ক হওয়ার পর তিনিও চাইছেন জয় দিয়ে নেতৃত্বের প্রথম প্রহর রাঙাতে।