1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের উত্তাপ, দেশের স্বর্ণশিল্পীরা বিপাকে - খবর ২৪ ঘণ্টা
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৪৪ পূর্বাহ্ন

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের উত্তাপ, দেশের স্বর্ণশিল্পীরা বিপাকে

  • প্রকাশের সময় : বৃস্পতিবার, ২৩ জুলা, ২০২০

খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে বিশ্ববাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে স্বর্ণের দাম। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে স্বর্ণের দাম বেড়ে নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৮৫৯ ডলারে পৌঁছে গেছে। স্বর্ণের এমন দাম ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর ছাড়া আর কখনও দেখা যায়নি।

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম এমন উত্তাপ ছড়ালেও বিপাকে রয়েছে দেশের স্বর্ণশিল্পী ও অলঙ্কার ব্যবসায়ীরা। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় একদিকে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, অন্যদিকে করোনার কারণে স্বর্ণের অলঙ্কার বিক্রি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। ফলে অনেকটাই আয়হীন হয়ে পড়েছেন অলঙ্কার ব্যবসায়ীরা। বিক্রি না থাকায় স্বর্ণশিল্পীরা বেকার সময় কাটাচ্ছেন।

দেশের স্বর্ণের অলঙ্কার ব্যবসায়ী ও শিল্পীরা বলছেন, করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকেই স্বর্ণের অলঙ্কার বিক্রি একপ্রকার বন্ধই হয়ে গেছে। এর মধ্যে ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এ সময় ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সাধারণ ছুটির পর ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান খুললেও অলঙ্কার বিক্রি হচ্ছে না।

তারা বলছেন, বছরের সব থেকে বেশি স্বর্ণের অলঙ্কার বিক্রি হয় রোজার ঈদ, পূজা ও নতুন ধান ওঠার পর। এবার সবকিছু করোনার মধ্যে পড়ে গেছে। করোনার কারণে মানুষ ঘর থেকে কম বের হওয়ার কারণে রোজার ঈদে বিক্রি একেবারেই ছিল না। আবার নতুন ধান ওঠার পরও স্বর্ণের অলঙ্কারের চাহিদা ছিল না।

দেশের বাজারে স্বর্ণের অলঙ্কার বিক্রি না হলেও বিশ্ববাজারে চলতি বছরের শুরু থেকেই স্বর্ণের দাম বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ হয় আউন্স হিসাবে। এক আউন্স স্বর্ণ ৩১ দশমিক ১০৩ গ্রামের সমান। গত বছরের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১৪৫৪ ডলার। এরপর করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬০ ডলারে উঠে যায়। তবে মার্চে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে এক ধাক্কায় প্রতি আউন্স ১৪৬৯ ডলারে নেমে আসে।

এ পতন ঠেকিয়ে স্বর্ণের দাম ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় নেয়নি। মে মাসে প্রতি আউন্স স্বর্ণ ১৭৪৮ ডলারে উঠে যায়। এরপর থেকে দাম প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। তবে চলতি সপ্তাহে সেই দাম বাড়ার পালে আরও হাওয়া লেগেছে। জুন মাসে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৮০০ ডলারের কাছাকাছি ঘুরপাক খেতে থাকে। জুলাই মাসে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৮০০ ডলারে উঠে যায়। তবে চলতি সপ্তাহের আগ পর্যন্ত স্বর্ণের দাম ১৭৯০ থেকে ১৮১০ ডলারের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল।

এ পরিস্থিতিতে চলতি সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে হু হু করে বেড়েছে স্বর্ণের দাম। তিনদিনে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৫০ ডলারের ওপরে। ১৮০৮ ডলার নিয়ে সপ্তাহ শুরু করা স্বর্ণের দাম সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস সোমবার ১৮২০ ডলার স্পর্শ করে। মঙ্গলবার তা আরও বেড়ে ১৮৪২ ডলারে ওঠে।

সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবসের মতো বুধবারও স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৮৫৯ ডলারে উঠেছে। ২০১১ সালের পর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের এমন দাম আর দেখা যায়নি।

এদিকে বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে গত ২২ জুন বাংলাদেশে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। ২৩ জুন থেকে দেশের বাজারে কার্যকর হওয়া নতুন দাম অনুযায়ী, সবচে‌য়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম পাঁচ হাজার ৭১৫ টাকা বা‌ড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ৬৯ হাজার ৮৬৭ টাকা।

২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম চার হাজার ৯০০ টাকা বা‌ড়িয়ে ৬৬ হাজার ৭১৮ টাকা এবং ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ১৬৭ টাকা বা‌ড়িয়ে ৫৭ হাজার ৯৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সনাতন পদ্ধতিতে স্বর্ণের দাম তিন হাজার ৬১৬ টাকা বা‌ড়িয়ে ৪৭ হাজার ৬৪৭ টাকা করা হয়। দেশের ইতিহাসে স্বর্ণের এত দাম আগে কখনও ছিল না।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর স্বর্ণশিল্পী (স্বর্ণকার) খোকন বলেন, করোনার কারণে এমনিতেই মানুষের আয় কমে গেছে। অনেকে বেকার হয়ে পড়েছেন। এ পরিস্থিতিতে স্বর্ণের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। মধ্যবিত্ত এখন স্বর্ণের দোকানমুখী হচ্ছেন না। গত কয়েক মাস ধরে আমাদের বিক্রিই নেই। দোকানে একজন কর্মচারী ছিল। কাজ না থাকায় সেও গত দুই মাস ধরে আসছে না। এককথায় আমরাও বেকার হয়ে গেছি।

ঝিনাইদহের স্বর্ণশিল্পী সুবল বলেন, ঈদ ও পূজার সময় আমরা মোটামুটি ভালো কাজের অর্ডার পাই। কিন্তু এ বছর রোজার ঈদে কোনো কাজ পায়নি। কোরবানির ঈদের আর কয়েকদিন বাকি আছে। এ ঈদেও কোনো কাজ নেই। দোকান খুলে শুধু বেকারের মতো বসে থাকি। আয়হীন এক দুঃসময় কাটাচ্ছি। কবে এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাব তার ঠিক নেই। পেশা বদল করে অন্য কাজ করব তারও উপায় নেই। আয় না থাকায় এক ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছি।

এদিকে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর পর আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে আরও প্রায় একশ ডলার বেড়ে গেছে। ফলে শিগগির দেশের বাজারে স্বর্ণদাম আরও বাড়তে পারে বলে আভাস দিচ্ছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ালে দেশের বাজারে স্বর্ণদাম বাড়ানো ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। বিক্রি হোক না হোক আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দাম বাড়াতেই হবে।

ভেনাস জুয়েলার্সের কর্ণধার গঙ্গাচরণ মালাকার বলেন, করোনার কারণে ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এরপর প্রতিষ্ঠান খুললেও বিক্রি নেই। মানুষ এখন জীবন বাঁচানো নিয়ে ব্যস্ত। বয়স্করা ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না। আমি নিজেও বের হচ্ছি না। এ পরিস্থিতিতে স্ত্রী কীভাবে তার স্বামীকে নতুন স্বর্ণের অলঙ্কার কিনে দেয়ার কথা বলবে।

স্বর্ণশিল্পী সমিতির সভাপতি গঙ্গাচরণ বলেন, রোজার ঈদ চলে গেছে আমাদের কোনো বিক্রিই হয়নি। কোরবানির ঈদ সামনেও বিক্রি নেই। বিক্রি না থাকলেও আমাদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের ভাড়া দিতে হচ্ছে। কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে। এতদিন কষ্ট করে কর্মীদের বেতন পরিশোধ করেছি। সামনে কীভাবে চলবে তা নিয়ে চিন্তায় আছি।

আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যখন রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দেয় তখন বড় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ স্বর্ণ কিনে মজুত করেন। ফলে দাম বেড়ে যায়। বর্তমান মহামরি করোনা পরিস্থিতিতেও সেইটাই দেখা যাচ্ছে। এছাড়া শেয়ারবাজারে মন্দার কারণে শেয়ারবাজারের গেমাররা স্বর্ণ কিনছেন যে কারণে দাম বাড়ছে। আর আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার কারণে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম বাড়াতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাবেক সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়া বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে এবার স্বর্ণের দাম কোথায় যে থামবে বলা মুশকিল। এর আগে ২০১১ সালে স্বর্ণের দাম বাড়তে দেখা যায়। তবে সে সময় দাম বাড়ার প্রবণতা ছিল অল্প সময়ের জন্য। কিন্তু এবার স্বর্ণের দাম বাড়ার প্রবণতা কতদিন স্থায়ী হবে তা আল্লাহ জানেন। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে শিগগির স্বর্ণের সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড ভেঙে যাবে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়লেও আমাদের একেবারেই বিক্রি নেই। বিক্রি থাকবে কীভাবে সবাই এখন জীবন বাঁচানো নিয়ে ব্যস্ত। এ পরিস্থিতি কতদিন থাকবে তাও কেউ বলতে পারে না। বিক্রি না থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্বর্ণের দাম বাড়াতে হচ্ছে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্বর্ণের দাম না বাড়ালে একদিনেই দেশ থেকে সব স্বর্ণ শেষ হয়ে যাবে। কীভাবে, কে কোথায় নিয়ে যাবে টের পাওয়া যাবে না। দামের ক্ষেত্রে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, ব্যবসায়ীদেরও নিয়ন্ত্রণ নেই। আন্তর্জাতিক বাজার যেভাবে চলবে, সেই ভাবে চলতে হবে।

খবর২৪ঘন্টা/নই

পোস্টটি শেয়ার করুন

এ ধরনের আরো খবর

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By SISA HOST