খবর২৪ঘন্টা ডেস্ক: বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নদীর তীর থেকে চাঁই (বাঁশের শলার তৈরি মাছ ধরার ফাঁদ) ব্যবসায়ী ছেলের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের ১৬ ঘণ্টা পর বাবা হেলাল উদ্দিন হাওলাদারের (৫৫) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার (০৪ জুলাই) সকাল ১০টায় বাকেরগঞ্জ উপজেলার কবাই ইউনিয়নের চর লক্ষ্মীপাশা এলাকার পান্ডব নদীর তীর থেকে হেলালের ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে শুক্রবার (৩ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় হেলালের ছেলে ইয়াসিন হাওলাদারের (২০) গলাকাটা মরদেহও ওই নদীর তীরের একটি ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়। নিহত হেলাল ও ইয়াসিন পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তারা পেশায় চাঁই (বাঁশের শলার তৈরি মাছ ধরার ফাঁদ) বিক্রেতা।
নিহত ইয়াসিনের চাচাতো ভাই কামরুজ্জামান জানান, চাঁই বিক্রির জন্য গত শনিবার (২৭ জুন) বেশকিছু চাঁই নিয়ে মায়ের পরশ নামে একটি ট্রলারযোগে বাড়ি থেকে বের হন ছেলে ইয়াসিন ও তার বাবা হেলাল।
শুক্রবার (৩ জুলাই) শতরাজ বাজারে চাঁই বিক্রি শেষে শিয়ালঘুনি হাটে যান। সেখানে চাঁই বিক্রি করে কলসকাঠি ফেরার পথে চর লক্ষ্মীপাশা এলাকার পান্ডব নদীর তীরে তাদের খুন করে ট্রলার, টাকা-পয়সা ও বেশকিছু চাঁই ছিনতাই করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ছেলে ইয়াসিন হাওলাদারের গলাকাটা মরদেহ চর লক্ষ্মীপাশা এলাকার পান্ডব নদীর তীরের একটি ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়। সকালে তার পার্শবর্তী নদীর তীর থেকে ভাসমান অবস্থায় ইয়াসিনের বাবা হেলালের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার শরীরেরও বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।
আসলাম নামে নিহত দু’জনের অপর স্বজন স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানান, স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে চাঁই ভর্তি একটি ট্রলার থামতে দেখেন ও ট্রলারটিকে কিছু সময় পরে আবার বরিশালের দিকে চলে যেতে দেখেন। কিন্তু এরইমধ্যে যে বাবা ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে তা কেউ বুঝতে পারেনি। প্রথমে ছেলের মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করলেও তার কোনো পরিচয় জানতে পারেনি। পরে বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে যখন পুলিশ পরিচয় জানতে পারে এরপর আমরা খবর পাই। সকালে স্থানীয় এক মেম্বার নদীতে মরদেহ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হেলালের মরদেহটিও উদ্ধার করে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রলার, চাঁই ও টাকা-পয়সা লুটপাটের জন্যই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। কারণ কিছু লোক চাঁই কেনার নামে মাঝপথ থেকে তাদের ট্রলারে উঠে পড়ে। যারা কলসকাঠি যাওয়ার পথে চরলক্ষ্মীপুরে নেমে যাওয়ার কথা ছিলো।
বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ পরিদশর্ক (তদন্ত) নকীব আকরাম বাংলানিউজকে জানান, নিহতদের পরিচয় পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বাকেরগঞ্জ সার্কেল) আনোয়ার সাঈদ বাংলানিউজকে বলেন, হয়তো পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লোকালয় থেকে নিহত দু’জনের মরদেহ দূরে নির্জন জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে। হত্যাকারীদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে নিহত বাবা ও ছেলের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান ওসি আবুল কালাম।
খবর২৪ঘন্টা /এএইচআর