নিজস্ব প্রতিবেদক : নিগার সুলতানা নামের এক নারীকে দ্বিতীয় বার বিয়ে করে স্ত্রী ও শ্বশুরের কাছে লাখ টাকা যৌতুকের দাবি পূরণ না হওয়ায় স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং তালাক দেয়ার অপচেষ্টার প্রতিবাদে পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর সোনাদিঘীর মোড়স্থ রাজশাহী সিটি প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ভুক্তভোগী পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী নিগার সুলতানার ভাই নাজমুল হক জানান, তাদের বাড়ির পাশেই বগুড়া জেলার দুপচাচিয়া থানা সদরের দুপচাচিয়া মাষ্টারপাড়া গ্রামের মজিবুর রহমান তালুকদারের ছেলে গোলাম রাকিব তালুকদারের সাথে গত ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসের ২২ তারিখে তার বোনের বিয়ে হয়। তার বোন জামাইয়ের কোন নির্দিষ্ট পেশা থাকায় ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। তার দাবীকৃত
যৌতুকের ১০ লাখ টাকা না দিতে পারায় বিয়ের মাত্র এক বছরের মাত্র গত ১৭/১১/২০১৮ ইং তারিখে তার বোন নিগারকে তালাক দেয়া হয়। তালাক দেয়ার কিছুদিন পর থেকে গোলাম রাকিব তালুকদার আবার আমার বোনকে বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। আমরা অসম্মতি দেয়া সত্বেও যৌতুক নিবেনা ও মেয়েকে সুখে রাখবে এমন কথা বলে দ্বিতীয়বার বিয়ের জন্য রাজি করায়। এর প্রায় আনুমানিক এক বছর পর গত ৪/০১/২০২০ইং তারিখে আবার আমার বোনকে (২য় বার) বিয়ে করে। মাত্র কিছুদিনের মাথায় ঘর-সংসার এ থাকাকালে আমার বোনের প্রতি যৌতুকের জন্য তারা পুনরায় নিষ্ঠুরতা বাড়িয়ে দেয়। বাবার বাড়ি থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দিতে শুরু করে। টাকা না থাকার কারণে দিতে না পারায় আমার বোনকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে বোনের স্বামীর মা নাসিমা বেগম ও বাবা মফিজুর রহমান তালুকদারকে বলেও কোন লাভ হয়নি। বরং আরো নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। তাদের পক্ষ থেকেও টাকার জন্য একইভাবে চাপ দেয়া হয়। এতে আমার
মেয়ে ওই বাড়িতে দুর্বিসহ জীবনযাপন শুরু করে। এ অবস্থায় বিষয়টি স্থানীয় পৌর মেয়র ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিশনারকে জানানো হয়। কিন্ত তারা আমার বোনকে ন্যায্য বিচার পাইয়ের দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। সমাধান করতে না পেয়ে দুপচাচিয়া পৌরসভার মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম একটি প্রত্যয়ন দেয়। সেই প্রত্যয়নে তিনি আমার বোনকে যৌতুকের জন্য যে নির্যাতন করা হয় সেটি উল্লেখ করেছেন। পরে আমরা রাজশাহীর নারী ও শিশু নিয়ে কাজ করা সংগঠন নবদিগন্ত মহিলা উন্নয়স সংস্থায় বিষয়টি লিখিতভাবে জানায়। অভিযোগ পাওয়ার পর সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক রাজিয়া সুলতানা সঙ্গীয় কর্মীসহ ঘটনাস্থলে যান। ওই দিন স্থানীয় পৌর মেয়র, ওয়ার্ড কমিশনার ও অন্যান্য স্থানীয় অন্যান্য মানুষজন থেকে বোনের শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে দুই পক্ষের সবকিছু শুনে ভালোভাবে বসবাস করতে বলেন। বোনকে রেখে আসার পর তার স্বামী বাড়ি থেকে অন্য লাপাত্তা হয়ে যায়। আর আমার বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি এবং ভাসুর প্রতিনিয়ত ১০ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ দিচ্ছে। গত রোববার ও সোমবার ও আজ সকালেও আমার মেয়েকে খাবার দেয়া হয়নি। তারা এখন জোর করে আমার বোনকে তালাক দেয়ার জন্য কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করছে। লিখিত বক্তব্যে আরো তিনি আরো জানান,
মোবাইল ফোনে আমার বোন নিগার জানিয়েছে তাকে দুই দিন ধরে কোন খাবার দেয়া হচ্ছেনা। তার স্বামী বাড়িতে থাকেনা। আর তার শ্বশুর ও শাশুড়ি তাকে ঘর বন্দি করে রেখে কোন খাবার দিচ্ছে না। এ অবস্থায় আমার বোন স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যেও পড়েছে। তাদের একটাই কথা দাবিকৃত যৌতুকের ১০ (দশ) লক্ষ টাকা দিতেই হবে। না হলে মেয়েকে তালাক দিয়ে দিবে।
এ অবস্থায় অসহায় হয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নারী ও শিশুর আইনি সহায়তা নিয়ে কাজ করা সংগঠন নবদিগন্ত মহিলা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রাজিয়া সুলতানা বলেন, আমরা গিয়ে দুই পরিবারকে নিয়ে বসে মীমাংসার চেষ্টা করেছি। সেখানে মেয়র ও কাউন্সিলর ছিলেন। কিন্ত তারা এখন সেটা মেনে নিবেনা। এমনকি আমাকে ফোন দিয়েও তাদের পক্ষ হয়ে কাজ না করার জন্য চাপ দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী গৃহবধূর মা মিনারা বেগম ও তার ভাই নাজমুল হক এবং এনজিও’র অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দুপচাচিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদুর রহমান বিপ্লব এর মুঠোফোন কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এমকে