খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: বিল্ডিং কোড না মেনে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই ইউনাইটেড হাসপাতালে তৈরি করা হয়েছিল করোনাভাইরাসের আইসোলেশন ইউনিট। শুধু তাই নয়, আগুন লাগার পর নেভানোর কোনো চেষ্টা করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অস্থায়ী আইসোলেশন ওয়ার্ডে ছিল না অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থাও। তবে ব্যতিক্রম ছিল হাসপাতালের ক্লিনার আরাফাত। তিনি একাই মগে মগে পানি ঢেলে চেষ্টা করেছেন আগুন নেভানোর।
ইউনাইটেড হাসপাতালে লাগা আগুনের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থাপন করা করোনা আইসোলেশন ইউনিটটি ত্রুটিপূর্ণ ছিল।
ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুনের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে গঠিত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন বুধবার (১০ জুন) ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে জমা দিয়েছে।
গুলশান পুলিশ তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, আগুন লাগার পরপরই ডাক্তার-নার্সসহ অন্যরা রোগীদের সরানোর চেষ্টা না করেই নিরাপদে সরে পড়েন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন বুধবার ডিএমপি কমিশনারের কাছ থেকে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে তা পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হবে। ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যথাযথ কোনো অনুমতি না নিয়েই অস্থায়ী আইসোলেশন ইউনিট তৈরি করেছিল। এসি থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। ভিডিও ফুটেজ অন্যান্য আলামতের মাধ্যমে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে।’
আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীদের প্রত্যক্ষদর্শী স্বজনরা জানিয়েছেন, আগুন নেভানোর বিষয়ে হাসপাতালের ক্লিনার আরাফাত ছাড়া অন্যরা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেনি। আরাফাত শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছেন। মগে মগে পানি ঢেলেছেন। এ ঘটনায় সে পুরস্কার পাওয়ার মতো কাজ করেছে।
আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর হাসপাতালের অন্য স্টাফরা চেষ্টা করলেও মেয়াদহীন ফায়ার ইস্টিংগুইশার ব্যবহার করায় তা আগুন নেভাতে কাজে আসেনি।
এর আগে, গত ২৭ মে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে (মূল ভবনের বাইরে স্থাপিত) আগুন লাগে। এ ঘটনায় পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। যাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তারা হলেন- রিয়াজুল আলম (৪৫), খাদেজা বেগম (৭০), ভের্নন এন্থনি পল (৭৪), মো. মনির হোসেন (৭৫) ও মো. মাহাবুব (৫০)।
এ ঘটনায় ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি অপমৃত্যুর মামলা করলেও আগুনে নিহত ভের্নন এন্থনি পলের পরিবারের পক্ষ থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে একটি ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ মামলা করা হয়েছে। মামলায় ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যান, এমডি, সিইও, পরিচালক, করোনা ইউনিটে সে সময় কর্মরত ডাক্তার-নার্স, সেফটি ও সিকিউরিটি কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে।
ঘটনার পর পুলিশ জানিয়েছিল, আইসোলেশন ওয়ার্ডের ভেতর দু’টি কক্ষ ছিল। তার মধ্যে চিকিৎসক ও নার্সদের যে কক্ষ সেখানকার এসি থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। আগুনে হাসপাতালে মারা যাওয়া ৫ রোগীর ৪ জনই বেডে নিথর হয়ে পড়েছিলেন।
অগ্নিকাণ্ডে ৫ রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রেদোয়ান আহমেদ রানজীব ও ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ হাইকোর্টে রিট করেছেন।
খবর২৪ঘন্টা/নই