এবার গরিব-দুস্থদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভাণ্ডার থেকে বরাদ্দ দেওয়া ঈদের পোশাক বিতরণের তদারকির ভারও পেলেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। বরাদ্দগুলো প্রতিটি সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্যদের অনুকূলে হলেও এসব পোশাক বিতরণের দায়িত্ব ও হিসাব রাখার কাজও ডিসিদের দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা কেবল পরামর্শ দিতে পারবেন।
শুধু তাই নয়, যদি কোনো কারণে ডিসিদের পক্ষে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভাণ্ডার থেকে পোশাকগুলো সংগ্রহে দেরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য নিজ দায়িত্বে সেগুলো সংগ্রহ করে এলাকায় নিয়ে যাবেন এবং ডিসিদের মাধ্যমে বিতরণ করবেন।
সংসদ সদস্যরা বলছেন, এতে তাদের কাজ করার পরিধিকে আরও কমিয়ে আনা হয়েছে। আত্মমর্যাদাকে ঠেলে দিয়েছে প্রশ্নের মুখে। কারণ খাদ্যসামগ্রীর মতো ত্রাণের পোশাক বিতরণের তদারকির ভার জেলা প্রশাসকদের দেওয়া তাদের প্রতি অবিশ্বাসের প্রশ্নকে আরও জোরালো করে। সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে কি ডিসিরাই সব? জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা তুচ্ছ?
প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয় থেকে সংসদ সদস্যদের অনুকূলে ত্রাণের পোশাক বরাদ্দের চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসনের একটি চিঠি ঢাকা টাইমসের হাতে এসেছে।
চিঠিতে লেখা আছে, আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল ফিতর ২০২০ উপলক্ষে সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব মো. আব্দুল আজিজ এঁর নির্বাচনী এলাকার অসহায়, গরিব ও দুস্থ জনসাধারণের মাঝে বিতরণের নিমিত্তে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভাণ্ডার, তেজগাঁও, ঢাকা হতে ২৫০ পিস সিনথেটিক শাড়ি, ৬০ পিস থ্রি-পিস ও ৫৫ পিস বাচ্চাদের তৈরি পোশাক (বিভিন্ন ধরণের) বরাদ্দ প্রদান করা হলো।’
এতে আরো বলা হয়, ‘বরাদ্দকৃত ত্রাণসামগ্রী জেলা প্রশাসক, সিরাজগঞ্জ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভাণ্ডার, তেজগাঁও, ঢাকা থেকে সংগ্রহপূর্বক মাননীয় সংসদ সদস্যের পরামর্শক্রমে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার অসহায়, গরিব ও দুস্থ জনসাধারণের মাঝে বিতরণ ও হিসাব সংরক্ষণ করবেন।
চিঠির তিন নম্বর প্যারায় বলা হয়, ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসকের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভাণ্ডার, তেজগাঁও, ঢাকা হতে ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে বিলম্বের আশংকা থাকলে মাননীয় সংসদ সদস্য নিজ দায়িত্বে ত্রাণসামগ্রী প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভাণ্ডার, তেজগাঁও, ঢাকা হতে তা সংগ্রহপূর্বক জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিতরণ করতে পারবেন।’
এর আগেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সৃষ্টি সংকটে অসহায়, গরিব ও দুস্থদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভাণ্ডার থেকে বরাদ্দ দেওয়া খাদ্যসামগ্রী বিতরণের দায়িত্ব জেলা প্রশাসকদের দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা কেবল পরামর্শ দিতে পারবেন। ত্রাণ বিতরণ এবং এর হিসাব রাখার দায়িত্বে আছেন ডিসিরা।
এমনকি ৬৪ জেলার ত্রাণ কার্যক্রম তদারকি করার জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৬৪ জন সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারাই জেলা সফর করে বা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ত্রাণ কাজ তদারকি করছেন। যা নিয়ে সংসদ সদস্যদের অনেকের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন জেলার ভিডিও কনফারেন্সেও নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসকরা। এক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা পাশে বসে থাকেন। সংসদ সদস্যরা বলছেন, এটি তাদের জন্য মর্যাদাহানীকর। কারণ ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স অনুযায়ী জেলা প্রশাসকদের উপরে সংসদ সদস্যদের অবস্থান। কিন্তু বর্তমান ত্রাণ কাজে সংসদ সদস্যদের ডিসিদের মুখাপেক্ষী করে দেওয়ায় তারা আত্মমর্যাদা সংকটে পড়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সংসদ সদস্য বলেন, ‘এমপিদের অবস্থা কি এতটাই খারাপ হয়েছে যে, তারা গরিবদের জন্য ত্রাণের পোশাকও চুরি বা আত্মসাৎ করবে? তাদের এত অবিশ্বাসের মধ্যে ঠেলে দিলে সাধারণ জনগণের মাঝেও এনিয়ে ভুল বার্তা যাবে। তাছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে জনগোষ্ঠীদের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের চেয়ে জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্ক নিবিড়। এটিও বিবেচনায় আনা প্রয়োজন।’
খবর২৪ঘন্টা/নই