নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার নিবারণ চন্দ্র বর্মণ ও এস আই মতিনের বিরুদ্ধে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। করো না পরিস্থিতির মধ্যেও থেমে নেই ওসির অর্থ-বাণিজ্য। নগরীর স্বচ্ছ টাওয়ারের সামনের মটোর পার্টস ব্যবসায়ী আজিজুল হক খবর২৪ঘণ্টাকে অভিযোগ করে বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সব দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ওসি নগরীর বোয়ালিয়া থানা এলাকার কিছু কিছু ব্যবসায়ী ও যারা ভবন নির্মাণ করছেন এ ধরনের মানুষের কাছে অর্থ কন্টাক করে ভবন নির্মাণের অনুমতি শ্রমিকদের কাজের সুযোগ দেন ওসি।
শুধু তাই নয় থানা এলাকার যার যেমন দোকান তার ওপর ভিত্তি করেই সপ্তাহ কন্টাক চুক্তিতে ব্যবসা করার সুযোগ দিয়েছেন এই ওসি। যখন সরকারের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সবকিছু বন্ধ করে মানুষকে বাড়িতে থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে ঠিক সেই সময়ে তিনি শুধু অর্থের লোভে এই অমানবিক কাজ করেছেন।
এটা গেল তার করোনা কালীন অথবা নিজের কথা। এই ওসির বিরুদ্ধে পুলিশ হেড কোয়ার্টার সহ বিভিন্ন জায়গায় লিখিত অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ওসির অর্থ বাণিজ্যের কথা বলা হয়েছে। তারপরও দীর্ঘদিন তিনি থানার ওসির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এনিয়ে ভুক্তভোগীদের মধ্যে ক্ষোভ অসন্তোষ দেখা গেছে। অভিযোগে জানা যায়, বোয়ালিয়া থানার বর্তমান ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ এর আগে রাজশাহী জেলা পুলিশের চারঘাট থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এখানে থাকাকালীন সময়ে তার বিরুদ্ধে চারঘাট উপজেলার চামঠা গ্রামের ইমান আলী নামের এক ব্যাক্তিকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে । এমনকি মদ খেয়ে রাস্তায় পড়ে থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বিষয়টি চারঘাট থানার অনেক তৎকালীন অনেক পুলিশ সদস্য ও মানুষ জানেন। ঈমান আলী খবর২৪ঘণ্টাকে অভিযোগ করে বলেন, আমাকে ওসি নিবারণ অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে আমার সোনার সংসার এলো মেলো করে দিয়েছে। আমার বিচার করার কেউ নেই তাই আমি আল্লাহ কাছে বিচার দিয়েছি।
একের পর এক অভিযোগ ওঠার পর তাকে চারঘাট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর তিনি আবার তদবির করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে বদলী হয়ে আসেন। আরএমপির নগর গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করার পর আরএমপি নবগঠিত কাটাখালি থানায় অফিসার ইনচার্জ এর দায়িত্ব পান। সেখানেও তিনি বিভিন্ন বিতর্কিত কাজ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন পর তদবির করে তিনি রাজশাহী মহানগরীর অন্যতম প্রধান থানা বোয়ালিয়া মডেল থানায় ওসি হিসাবে যোগদান করেন। গুরুত্বপূর্ণ থানা বোয়ালিয়ায় আসার পর তার গ্রেফতার ও অর্থ-বাণিজ্য আরো বেড়ে যায়। তার বিরুদ্ধে মদ খেয়ে দায়িত্ব পালন করা সহ পুলিশ সদস্যদের সাথে খারাপ আচরণ করার অভিযোগ রয়েছে।
থানায় তার অধীনস্থ পুলিশ সদস্যদের সাথে প্রায় সময় সামান্য বিষয় নিয়ে খারাপ আচরণ করেন তিনি।
এ নিয়ে কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারেন না বলেও বোয়ালিয়া মডেল থানার নাম না প্রকাশ করার শর্তে অনেক পুলিশ সদস্য জানান। তার বিরুদ্ধে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে সিনিয়র কয়েকজন সাংবাদিক মৌখিক অভিযোগ করেছেন। ওসি রাতের বেলা নগরীর সাগরপাড়া এলাকার এক কথিত সাংবাদিকের বাড়িতে মদ খান বলে পুলিশের একটি সুত্র জানিয়েছে। এছাড়াও ডাক্তার নয়ন নামের একজনের বাড়িতে বসেও এমন কাজ করেন বলে জানা গেছে।
এরপরও কোনো লাভ হয়নি। তিনি স্বপদে বহাল রেখে তার অর্থ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব মানুষ বলছেন কোথাই তার খুটির জোর? অনলাইন নিউজ পোর্টাল খবর ২৪ ঘন্টার চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জুলু বলেন, আমি ওসিকে মাদক ব্যবসায়ীর নামের তালিকা দিয়েছিলাম। সেই তালিকার মধ্যে থাকা সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী টিকাপাড়ার এলাকার মৃত সিরাজ এর ছেলে আজিজকে চলতি মাসের ২৮ এপ্রিল দুপুরে এসআই মতিনের নেতৃত্বে আজিজকে গ্রেফতার করে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ। তাকে আটকের পরে রাসিকের ২১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজামুল আজিম, নিযাম আজিজদের কথিত বড় ভাই বুলবুল ও বিটিভির তথাকথিত ক্যামেরাপার্সন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী মরহুম ওমর আলীর ছেলে সুমনের জিম্মায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার বিনিময় আজিজকে ছেড়ে দেন ওসি।
বোয়ালিয়া থানার ওসি শুধু তাকে ছেড়ে দেই ক্ষান্ত হননি তিনি তাদের কাছে আমার নাম প্রকাশ করে দেন ওসি। আমি ওসিকে এস এস এম এর মাধ্যমে যে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা দিয়েছিলাম সেটি তিনি ওই মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রুপকে দেখিয়েছেন। এর প্রমাণ মেলে যখন আজিজ থানা থেকে ছাড়া পেয়ে আমার বাড়িতে এসে আমাকে বিষয়টি জানায়। আমি বিষয়টি বিশ্বাস করতাম না যদি তারা বাড়িতে এসে আমাকে না জানাতেন ও আমাকে বলেন, আপনি এলাকার মানুষ হয়ে আমাদের নাম বলেছেন। আপনারা দেয়া এস এম এস ও ওসি দেখিয়েছেন আমাকে। বোয়ালিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলাল পারভেজ লুলুও আমাকে একি কথা বলেন যে, আপনার দেয়া এস এম এস ওসি আমাদের কে দেখিয়েছে। একটি তথ্য দিয়ে যদি ও সেই তথ্যদাতার নাম প্রকাশ করেন তাহলে খুব দুঃখজনক। আমার নিরাপত্তা নিয়েই এখন আমি শঙ্কিত।
তারপর থেকে ওই মাদক ব্যবসায়ী গ্রুপটি আবার প্রতিপক্ষে পরিণত হয়েছে। আমি শহরের প্রতিষ্টিত সাংবাদিক না হলে আমার ওপর হামলা হতে পারত। আমি বিষয়টি নিয়ে বড় পুলিশ কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এদিকে, ওসির এসব কাজের সঙ্গি হিসাবে কাজ করেন থানার এসআই মতিন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এস আই মতিন খুব কম সময় পুলিশের পোশাকে ডিউটি করেন। তিনি গুড়িপাড়ার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী শুভ সহ শিরোইল এলাকার কিছু মাদক ব্যবসায়ীর সাথে রাতে বেশি সময় ঘোরাফেরা করেন। শুধু তাই নয় সন্ধ্যা পার হলেই রাতের বেলা তাদেরকে নিয়ে বিভিন্ন মাদক স্পটে যান এবং অর্থ-বাণিজ্য করেন বলেও একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে। মতিন পুলিশ কন্সটেবল থেকে এসআই থেকে প্রমোশন পেয়েছেন। এরপরেই খুব অল্প সময়ে
রাজশাহী মহানগরীতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জায়গা কেনা ও কিছু যানবাহনের মালিক হয়েছেন বলে এসআই মাসুদ রানা ও এসআই আকবর জানান। মতিন এ ধরনের দুই নম্বরি কাজ করে অল্প সময়ের মধ্যে অনেক টাকা কামিয়ে ফেলেছেন বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছেন। তদন্ত করলেই এর প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। ওসি এবং মতিনের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান ভুক্তভোগীরা। যাতে আর কেউ তাদের হাতে হয়রানি বা শিকার না হন। এসব অভিযোগের বিষয়ে ওসি নিবারণ ও এস আই মতিনের সাথে কথা হলে তারা তাদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সত্য নয়।
এস/আর