ওমর ফারুক : রাজশাহী জেলায় এবছর চলতি বোরো মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেচ সুবিধা ও আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার রাজশাহী জেলার নয়টি উপজেলায় বোরো ধান অনেক ভালো হয়েছে। প্রাকৃতিক কোন প্রতিকূল পরিবেশ না হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে জেলার কিছু এলাকায় শ্রমিক সংকট দেখা দিতে পারে। কারণ প্রত্যেক বছর জেলায় রাজশাহীর বাইরে থেকেও ধান কাটার জন্য শ্রমিক আসে। এবছর বাইরে থেকে শ্রমিক না আসলে সমস্যা বেশি হতে পারে তবে বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনের সহায়তায় ধান কাটার শ্রমিকদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় বাইরে পাঠানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে জেলায় যদি বাইরের শ্রমিক আসে তাহলে কোন সমস্যা থাকবে না। ইতিমধ্যেই রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলায় গত বুধবার থেকে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে।
কৃষি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহীর উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী জেলার নয়টি উপজেলা ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন এর দুটি থানা এলাকায় চলতি বোরো মৌসুমে ৬৩ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে বোরো ধান রোপন করা হয়। আর প্রতি হেক্টর জমিতে ৪ দশমিক ২৫ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪ লাখ ২৯ হাজার মেট্রিক টন। রাজশাহী জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে তানোর, গোদাগাড়ী, বাগমারা, মোহনপুর ও দুর্গাপুর উপজেলায় বেশি ধান চাষ হয়।
রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলার আফজাল হোসেন নামের এক কৃষক জানান, তিনি এ বছর ৯ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। শুরু থেকেই অনুকূল আবহাওয়া ও সময়মতো সার-বিষ প্রয়োগের কারণে ধান ভালো হয়েছে। এখন ঠিকঠাক মত কেটে ঘরে তুলতে পারলেই হয়। তার প্রত্যেক বিঘা জমির ধান অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আরো বেশি ভালো হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি ধান কাটা শুরু করবেন তিনি।
ধুলু নামের আরেক কৃষক জানান, এবছর তিনি ১৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। শুরু থেকেই নিয়মমাফিক যত্ন নেয়ার কারণে ধান ভালো হয়েছে। বাম্পার ফলনের আশা করছেন তিনি। তবে গত আমন মৌসুমে অনেক ধান পেলেও ন্যায্য দাম না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। কারণ ফলন ভালো হলেও ভালো দাম না পেলে তেমন লাভ হয় না। বর্তমান সময়ে সার, বিষ ও শ্রমিক প্রত্যেকটির মূল্যই যেকোনো সময় থেকে বেশি। এজন্য তিনি এবার ধানের ন্যায্য দাম পাওয়ার আশা করছেন। ন্যায্য দাম পেলে লোকসান হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই বলে তিনি আরো জানান।
পবা উপজেলার রফিকুল নামের এক কৃষক জানান, প্রত্যেক বছরের মতো এবারও তিনি ৬/৭ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। আমনের থেকে বোরো ধানের খরচ বেশি হওয়ায় তিনি ধানের ন্যায্য দাম দাবি করেছেন সরকারের কাছে। যাতে জমি থেকে উৎপাদন হওয় ধান বিক্রি করে তিনি সংসার ছেলেমেয়ে নিয়ে এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দিন কাটাতে পারেন। ন্যায্য দাম না পেলে ভালো ফলন হওয়ার পরো কোন লাভ হয় না। যেমন গত আমন মৌসুমে ভালো ফলন হলেও ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে।
রবিউল নামের আরেক কৃষক বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবছর তার বোরো ধান ভালো হয়েছে। শুরু থেকেই নিয়মমাফিক যত্ন নেওয়ার কারণে বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তিনি। তবে শুধু বাম্পার ফলনই না ধান ওঠার পর ন্যায্য দাম পেলে ছেলেমেয়ে নিয়ে এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে ভালো সময় কাটাতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, এবছর করোনা সংকটের কারণে শ্রমিক সংকট দেখা দিতে পারে। এখনো তিনি ধান কাটা শুরু করেননি। ধান পেকে গেছে কয়েক দিনের মধ্যেই কাটার উপযোগী হয়ে যাবে। শ্রমিক সংকট না হলে ও প্রতিকূল কোন পরিবেশ তৈরি হলে ধান স্বাভাবিকভাবে উঠলে কোন ফলনে বিপর্যয় ঘটবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে, জেলার প্রায় নয়টি উপজেলার বোরো ধান পেকে গেছে। কোন কোন এলাকায় কাটা শুরু হলেও কোনো কোনো এলাকায় এখনো কাটা শুরু হয়নি। ধান কাটা শুরু হলে ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে ধান তোলা সম্ভব হবে। এ সময় প্রতিকূল পরিবেশ না হলে ধান ঘরে উঠলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন কৃষকরা। তবে প্রত্যেক কৃষক শুধু ভালো ফলন নয় সরকারের কাছে তারা ন্যায্য দাম আশা করছেন। যাতে ধান চাষ করে অন্যান্য বছরের মতো লোকসান গুনতে না হয়। আর অনেক কৃষকই ধান চাষ করে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন বলেও ধান চাষী অনেক কৃষক জানিয়েছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক মোঃ শামছুল হক বলেন, এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। জেলার তানোর উপজেলায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটি উপজেলায় ধান কাটা শুরু হবে। প্রতিকূল কোন পরিবেশ না হলে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকরা ধানের ন্যায্য দাম পাবে বলে আশা করছি। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষকরা যাতে ভালো ফলন ফলাতে পারেন এজন্যে প্রত্যেক বছরের ন্যায় চলতি মৌসুমেও কৃষি অফিসারের মাধ্যমে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যাতে তারা ভালোভাবে ধান ফলাতে পারেন। আমিও বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি।
এমকে