ওমর ফারুক: চরখিদিরপুরে বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে বাবার বাড়ি ডাঙ্গেরহাট নৌকা যোগে পদ্মা নদী দিয়ে ফেরার পথে মাঝ নদীতে বর-কনেবাহী দুটি নৌকা ডুবে যায়। নৌকা ডুবে যাওয়ার পর বরসহ ১৫ জন পাশ দিয়ে যাওয়া অন্য নৌকায় উঠে কোনভাবে প্রাণে রক্ষা পেলেও এখনো খোঁজ নেই কনে সুইটির। ঘটনার পর থেকে একে একে সবার সন্ধান পাওয়া যায়। প্রমত্তা পদ্মা নদী থেকে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ৮টি লাশ উদ্ধার হয়। গত শনিবার ও রোববার দিনভর বর বউয়ের খোঁজের সন্ধানে বসে থাকলেও পদ্মা পাড়ে বসে থাকলেও দেখা পায়নি তার। গত শুক্রবার শিশুর লাশ, শনিবার ৫ টি লাশ ও রোববার কনের খালা ও খালাতো বোনের লাশ উদ্ধার করা হয়। কিন্ত পদ্মায় হারিয়ে যাওয়া কনে সুইটির
সন্ধান মিলছেনা কোনভাবে। আর সমন্বিত ডুবুরি দল একজনও নিখোঁজ থাকা সত্বেও অভিযান বন্ধ করবেনা বলে জানিয়েছে। এখন শুধু নববধূ সুইটি খাতুন পুর্নি নিখোঁজ রয়েছে। পুর্নি নগরীর ডাঙ্গের হাট এলাকার শাহিনুলের মেয়ে। তিন দিনেও তার সন্ধান না পাওয়া যাওয়ায় শোকের মাতম বইছে তার পরিবারের। বিয়ের লাল রং না মুছতেই এই হারিয়ে যাওয়া কেউ মানতে পারছে না। তার বাবা-মাসহ সবাই শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন। প্রভাব পড়েছে প্রতিবেশীদের উপরও।
প্রতিবেশীরাও শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন। গত শনিবার ও রোববার সুইটির পরিবারের সদস্যরা পদ্মার পাড়ে তার সন্ধানের জন্য বসে থাকে। কিন্ত যেন তাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না। এখন স্বজনদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে আদৌ কি পুর্নিকে আর দেখতে পাবে তারা? নাকি বিয়ের দিনের বিদায় শেষ বিদায়! নৌকা ডুবিতে ম্লান হয়ে যায় দুই পরিবারের বিয়ের আনন্দ। গত শনিবার বর আসাদুজ্জামান
রুমন বলেন, নৌকায় আসার সময় আমার স্ত্রীসহ সবাই ছিলাম। হঠাৎ নৌকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় বউ আমার পাশেই ছিল। নৌকা বন্ধ হওয়ার পর সবাই লাফালাফি ও হোইহুল্লোড় শুরু করলে নৌকাটি ডুবতে শুরু করে। এ অবস্থা দেখে পাশ দিয়ে যাওয়া একটি বালুবাহী নৌকা দড়ি ফেলে দিলে সেটি ধরে আমরা ১৫ জন রক্ষা পায়। কিন্ত তাকিয়ে দেখি পাশে আমার বউ নেই। তারপর থেকে আর তাকে দেখতে পাইনি। এসব বলেই কান্না শুরু করেন তিনি। উল্লেখ্য, নৌকা ডুবির খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজশাহীর স্থানীয় মানুষজন ছাড়াও সাধারণ মানুষ পদ্মার পাড়ে ভিড় জমায় ঘটনাস্থল ও উদ্ধার হওয়া
মানুষগুলোকে একনজর দেখতে। ৪০ জনের উপরে সবার সন্ধান পাওয়া গেছে। মৃত্যু হওয়া এ পর্যন্ত ৮টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শুধু কনে সুইটির লাশ উদ্ধার হয়নি। তার সন্ধানের অপেক্ষায় রয়েছে পরিবারের লোকজন। রাজশাহী নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মেহেদি বলেন, কনে সুইটিকে উদ্ধারের সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। সমন্বিত ডুবুরি দল চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পাবনা পর্যন্ত বার্তা দেয়া হয়েছে। খোঁজ পেলে জানাতে বলা হয়েছে। রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস জানায়, উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে। রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস জানায়, উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে। শনিবার রাত পৌনে ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নববধূ সুইটির সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এমকে