ওমর ফারুক : রাজশাহী মহানগরীর চরখিদিরপুর সংলগ্ন পদ্মা নদীতে বিয়ে বাড়ির বর-কনে যাত্রীবাহী দুটি নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ জন নারী-পুরুষ ও শিশু রয়েছে। এরমধ্যে ৫ জন ভেসে উঠলেও বাকি ৩০ জনের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। ভেসে উঠা ৩ জনের মধ্যে মরিয়ম (৬) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত শিশু মরিয়ম নগরীর রাজপাড়া থানার বসুয়া এলাকার রতনের মেয়ে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীর পদ্মার চরখিদিরপুরের বর ও নগরীর নগরীর ডাঙ্গের হাট এলাকার কনের সাথে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়।
শুক্রবার সকালে মেয়ে পক্ষের লোকজন দুটি নৌকায় ৪০ জনের অধিক যাত্রী নিয়ে বর-কনেকে আনতে যায়। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে বর কনে যাত্রীবাহী দুটি নৌকা পদ্মা নদী দিয়ে ডাঙ্গের হাট ফিরছিল। মাঝ নদীতে পৌঁছালে নৌকা দুটি ডুবে যায়। কিভাবে নৌকা দুটি একসাথে ডুবেছে তার প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। নৌকা দুটিতে ১৭ জন নারী, ১৭ জন পুরুষ ও ৬ শিশু ছিল। দুটি নৌকায় থাকা নারী, পুরুষ ও শিশুরা ডুবে যায়। এরমধ্যে ১২ জন পুরুষ ও শিশু ভেসে উঠে। ১২ জন উদ্ধার হলেও এরমধ্যে ৩ জন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মরিয়ম নামের ওই শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাকি ২ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। পুরুষের মধ্যে কয়েকজন সাঁতরিয়ে ডাঙ্গায় উঠতে পারলেও নারী ও শিশুরা কেউ উঠতে পারেনি। নিজ চোখে সবার ডুবে যাওয়ার মর্মান্তিক দৃশ্য দেখেছি।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, শুক্রবার রাত সোয়া ৭টার দিকে পদ্মার চরখিদিপুর এলাকায় বর-কনে যাত্রীবাহী দুটি নৌকা ডুবির খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা করে। ডুবে যাওয়া নৌকায় নারী ও পুরুষ ছাড়াও শিশু যাত্রী ছিলো। রামেক হাসপাতাল পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এএসআই রফিকুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত হাসপাতালে ৩
জন ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বাকি দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এদিকে, এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস, থানা পুলিশ ও নৌ পুলিশ সদস্যরা জড়ো হয়। আর নগরের অন্তত হাজারো মানুষ নগরীর শ্রীরামপুর সংলগ্ন পদ্মা নদীর পাশের রাস্তায় অবস্থান নেয়। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। নৌকা ডুবির কারণে বিয়ের আনন্দ ম্লান হয়ে যায়। কনের পরিবার ও ডুবে যাওয়া নৌকার নিঁখোঁজ যাত্রীর স্বজনরা শোকে হত বিহম্বল হয়ে পড়ে। তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের উদ্ধারের জন্য আহাজারি করেন। ৪০ জনের হিসেবে পেলেও কনের পরিবারের দাবি, তাদের ৪০ জনের বেশি লোক বর-কনে আনতে গিয়েছিল। তাদের দাবি এখনো ৩৫ জন নিখোঁজ রয়েছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিখোঁজ হওয়া আর কোন নৌকার যাত্রী উদ্ধার হয়নি। নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা চালায় ফায়ার সার্ভিস।
এমকে