নিউজ ডেস্ক: বিচার বিভাগের ওপর সরকারের প্রভাবের কথা উল্লেখ করে সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘যেদিন বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানি হবে সেদিন প্রধানমন্ত্রী বললেন, খালেদা জিয়া রাজার হালে আছেন। এ কথা শোনার পর কোনো বিচারপতির পক্ষে জামিন দেয়া কি সম্ভব?’
‘এভাবে বিভিন্নভাবে তারা (সরকার) আদালতকে প্রভাবিত করেন। যার কারণে তিনি (খালেদা জিয়া) কারাবন্দি অবস্থায় আছেন। তবে এ অবস্থা চিরদিনের নয়।’
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের কারাবাসের দুই বছর পূর্তিতে তার মুক্তি দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি।
সমাবেশ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ১৫ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সময় বলেন, ‘খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক জীবনে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, জেল খেটেছেন। গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় রাজনৈতিক কারণে বন্দি রাখা হয়েছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ, নিজে খেতে পারেন না, চলতে পারে না। দুই বছর বিনা দোষে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে আটকে রাখা হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, সরকার ক্ষমতায় রয়েছে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে রয়েছে। এ সরকার জনগণের সরকার নয়। কারণ তাদের জনগণের ম্যান্ডেট নেই। তারা গণতান্ত্রিক চেতনাকে ধ্বংস করেছে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের বিচার ব্যবস্থা এখন স্বাধীন নয়। দেশের প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নলের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বক্তব্যের একপর্যায়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহ-প্রচার সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, জ্যেষ্ঠ নেতা বরকতউল্লাহ বুলু, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ধানের শীষের দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন বক্তব্য রাখেন।
মওদুদ তার বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিকামী, তারা গণতন্ত্রকে ভালোবাসে, তারা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করেছে, ভবিষ্যতেও করবে। রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আসবে। এ মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরে আসবে, আইনের শাসন ফিরে আসবে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরে আসবে।’
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যে নির্বাচনে দুজন মেয়র হয়েছেন তারা মেশিনের মেয়র। আমাদের তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন জনগণের মেয়র। তারা মেশিন দিয়েও ২৭ শতাংশ ভোট দেখাতে পারেনি।’
‘এ নির্বাচনে একটা জিনিস প্রমাণ করে যে, দেশের মানুষ এ সরকার ও এ নির্বাচন কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া তা কোনোদিনই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে না- এটা এ দেশের মানুষ আবার প্রমাণ করেছে।’
মঞ্চে থাকা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি বক্তব্য দেননি।
বিএনপির অঙ্গ-সংগঠনের মধ্যে যুবদলের সাইফুল আলম নীরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সমাবেশে আবদুল আউয়াল মিন্টু, আতাউর রহমান ঢালী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শ্যামা ওবায়েদ, বিলকিস জাহান শিরিন, শিরিন সুলতানা, এহছানুল হক মিলন, এম এ মালেক, নিপুণ রায় চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।