নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসাধীন রোগীর টাকা ও মোবাইল চুরি হয়ে যাচ্ছে। প্রকাশ্য দিবালোক ও রাতে চুরি হয়ে যাচ্ছে রোগীদের কষ্টের টাকা ও মোবাইলসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস। অথচ হাসপাতালের প্রবেশ করতে গেলে রোগী ও তার স্বজনদের গেটম্যানকে পাশ দেখিয়ে প্রবেশ করতে হয়। এ ছাড়াও হাসপাতালের রোগীদের নিরাপত্তার জন্য প্রায় ওয়ার্ডে আনসার সদস্য মোতায়েন থাকে। শুধু তাই নয় হাসপাতালে একটি পুলিশ বক্স রয়েছে।
রোগীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, যেখানে হাসপাতালে রোগীর স্বজনরাই গেট পাশ ছাড়া ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনা সেখানে কি করে হাসপাতালের ওয়ার্ডের মধ্যে চোর ও দালাল প্রবেশ করে? বিষয়টি উদ্ভেগজনক। গেট দিয়ে বা অন্য কোন স্থান দিয়ে প্রবেশ করলেও হাসপাতালের প্রায় ওয়ার্ডে
আনসার সদস্য মোতায়েন থাকে। তাহলে কিভাবে চোর রোগীর টাকা, মোবাইল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস চুরি করে পালিয়ে যায়। তাহলে কি চোর ও দালালদের আনসার সদস্য ও গেটম্যানরা আটকায় না। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টি দেয়ার আহবান জানিয়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তর অঞ্চলের সবচাইতে বড় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এ হাসপাতালে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসা নিতে এসে চোর ও দালালের হাতে অনেক রোগী ও তাদের স্বজনরা নিজের সর্বস্ব খুইয়ে দেন। এ নিয়ে রোগীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরণের অভিযোগ রয়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর এ্যাটেনডেন্টস্ নিয়ন্ত্রণে হাসপাতালের বিনামূল্যে গেট পাশের ব্যবস্থা করেছেন। গেট পাশ দিয়ে শুধু মাত্র রোগীর এ্যাটেনডেন্টস্ প্রবেশ করতে
পারবে। আর গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোতে নিরাপত্তায় আনসার সদস্য মোতায়েন থাকে। তারা নিয়মিত শিপট পরিবর্তন করে ডিউটি করেন। এ ছাড়াও হাসপাতালে একটি পুলিশ বক্স রয়েছে। হাসপাতাল পুলিশ বক্সের একজন পুলিশ কন্সটেবল সবসময় হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ডিউটিতে থাকেন।
রোগী ভর্তি হওয়ার সময় রোগীদের একটি গেট পাশ দেয়া হয়। এ গেট পাশ দেখিয়েই রোগীদের হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি মেলে। গেট পাশ না থাকলে প্রবেশ করতে দেয়া হয়না। গেট পাশ না থাকার কারণে অনেক রোগীর স্বজনই গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। কিন্ত রোগীরা যেতে না পারলেও চোর ও দালাল ঠিকই হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করেন। তারা চিকিৎসাধীন
রোগীদের টাকা, মোবাইল ও অন্যান্য জিনিস চুরি করে পালিয়ে যায়। গেট পাশের ব্যবস্থা ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকার পরও রোগীদের জিনিসপত্র কিভাবে খোয়া যায় এ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা প্রশ্ন তুলেছেন। তারা অভিযোগ করছেন, গেটে তাদের আঁটকানো হলে ভেতরে প্রবেশের সুযোগ পাবে না। আর প্রবেশ না করতে পারলে চুরি হওয়ার সম্ভাবনা। ভেতরে কোনভাবে প্রবেশ করতে পারলেও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকার কারণে চুরি হওয়া প্রায় অসম্ভব।
সম্প্রতি হাসপাতালের ৩৬ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগী রোকেয়ার ৯ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল চুরি হয়ে যায়। রোকেয়া মানুষের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ধার দেনা করে চিকিৎসার জন্য টাকাগুলো হাসপাতালে নিয়ে যান। আর সেই টাকা হারিয়ে আরো অসুস্থ হয়ে যান তিনি। রোকেয়ার মেয়ে মিম অভিযোগ করে বলেন, আমার মায়ের ৯হাজার টাকা ও মোবাইল হাসপাতালের বেড থেকে চুরি হয়ে গেছে। ধার করে মা টাকাগুলো
চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়েছিল। টাকা চুরি হওয়ার পর চিকিৎসা করা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে মায়ের। হাসপাতালে কিভাবে চোর প্রবেশ করে তা মাথায় আসেনা। আমরা পাশ ছাড়া ঢুকতে পারিনা। তাহলে চোর ও দালালরা কিভাবে ঢুকে? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া। তার পাশের বেডের আরেক রোগীরও টাকাও চুরি হয়ে গেছে বলে মিমি আরো জানায়। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে মেয়েকে চিকিৎসা করতে এসে নিজের ৫ হাজার টাকা খুইয়েছেন আরেক রোগী। তিনি নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, চিকিৎসা করাতে এসে আমরা এমনিতেই মানুষিকভাবে দুর্বল থাকি। তার উপর টাকা চুরি হয়ে গেলে সমস্যা আরো বাড়ে। তাই এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
হাসপাতালের ৮ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা আরেক রোগী অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের বেডে টাকা ও মোবাইল ছিল। দুটোই মুহূর্তের মধ্যে চুরি হয়ে গেছে।
প্রতিদিনই হাসপাতালের ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন থাকা রোগী ও তাদের স্বজনদের
জিনিসপত্র চুরি হয়ে যায়। তাই কর্তৃপক্ষকে কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান ভুক্তভোগীরা। এ ছাড়া রাতের বেলা রোগীর স্বজনরা ওয়ার্ডের বাইরে শুয়ে থাকে সেখান থেকেও চুরি হয়।
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, আমরা মাঝে মধ্যে রোগীদের চুরি হওয়া টাকা উদ্ধার করে দিয়েছি। গেট পাশ ছাড়া রোগীরা প্রবেশ করতে পারে না তাহলে চোর দালাল কিভাবে প্রবেশ করে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে রোগীদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। রোগীরা সচেতন হলে চুরি কম হবে।
আর/এস