বড়াইগ্রাম প্রতিনিধি:
বড়াইগ্রামে একই পরিবারে সাত প্রতিবন্ধী থাকায় আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়ে বিপাকে পড়েছেন পরিবার। তবুও এ পর্যন্ত মেলেনি সরকারি সহায়তা। উপজেলার মাঝগ্রামের বৌবাজার এলাকার মৃত সায়েদ পাটোয়ারীর পরিবারের সবাই প্রতিবন্ধী। তারা হলেন, হাসমতি বেওয়া (১০২), পিঠে বড় কুঁজ, সোজা হয়ে দাঁড়াতে বা শুতে পারে না সে। বয়সের তুলনায় মাত্র ৩ ফুট ৬ ইঞ্চির দেহটি সামনের দিকে বেঁকে থাকে। শুধু তিনিই নন, তার পরিবারের দুই ছেলে, দুই মেয়ে ও দুই নাতি সহ সাত সদস্যের একই অবস্থা। উপজেলার অসহায় পরিবারটির বসবাস মাঝগ্রামে। গত রোববার সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, মৃত সায়েদ আলীর স্ত্রী হাসমতি বেওয়ার দুই ছেলে আব্দুর রব (৭৫) ও মফিজ উদ্দিন (৫০), দুই মেয়ে বিলকিস (৬৫), ফুলবানু (৬২), নাতি সাগর (১৮) ও সাকিল (১০)। বয়সের তুলনায় প্রত্যেকেই তারা
স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় বেশ খাটো। অল্প বয়সেই বয়স্কের ছাপ পড়ে তাদের চেহারায়। স্বাভাবিক চলাফেরা করতে তাদের জন্য খুবই কষ্টকর। সোজা হয়ে দাঁড়াতে বা শুতে পারেন না তারা। তাদের মধ্যে বড় আব্দুর রব ও মফিজ উদ্দিনের পিঠে রয়েছে বড় ধরণের কুঁজ। বিলকিসের উচ্চতা ৩ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং ফুলবানুর উচ্চতা ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি। তাদের দুই পা বাঁকা, দুই পায়ের পাতাও বাঁকাা। হাঁটার সময় তারা হেলে-দুলে হাঁটে। পথ চলতে কষ্ট হয়। হাসমতি বেওয়ার নাতি সাগর কিছুটা সুস্থ্য হলেও মাজা ও পা বাঁকা। সে বনপাড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। কিন্তু আর্থিক অভাবের কারণে তার লেখা-পড়া বন্ধ হয়ে গেছে। ধীরে-ধীরে বাবার মতো বাঁকা হয়ে যাচ্ছে তার শরীর। হাঁটা-চলা করতে পারলেও ঠিক মতো বসতে পারে না। তার অপর নাতি শাকিল আহমেদ মাঝগ্রাম ব্র্যাক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। সে বলে আল্লাহ্ পাক যদি আমাকে সুস্থ্য রাখেন, তাহলে আমি লেখা-পড়া করে আলোকিত মানুষ
হতে চাই। পরিবারের প্রতিবন্ধী সকলের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমারও পিঠে মাঝে মাঝে ব্যাথা অনুভব করি। আমারও পিঠ ভবিষ্যতে বাঁকা হয়ে যায় কিনা, এ মর্মে দুশ্চিন্তা করি।
শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধি হলেও সংসার চালানোর তাগিদে আব্দুর রব ও মফিজ বনপাড়া বাজারের ফুটপাতে বসে ফল ও বাদাম বিক্রি করে। যৌবনে দুই বোনের বিয়ে হলেও কিছুদিনের মধ্যেই তালাক দেয় তাদের স্বামী। বর্তমানে দুই ভাইয়ের সাথেই বসবাস করছে দুই বোন ও মা। তারা কিছু হাঁস-মুরগী পালন করে নিজ বাড়িতে ও অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করে।
প্রতিবন্ধী মফিজ উদ্দিন জানান, শারীরিকভাবে অসুস্থ্য হওয়ায় ঠিকমতো বাদাম বিক্রি করতে পারিনি। যখন সুস্থ্য থাকি, বাজারে গিয়ে বাদাম বিক্রি করি। অভাবের সংসারে খেয়ে-নাখেয়ে দিন কাটে কোনোভাবে। আমার মা একজন বিধবা। এক শত বছরের উপরে বয়স হয়েছে তার ও আমার প্রতিবন্ধী
দুইটি বোনও বিধবা। আমার বোনেরা বিধবা ভাতা পায় না। ‘মা’ কোনোদিনই বিধবা বা প্রতিবন্ধী ভাতা পাননি। এ মুহুর্তে আমার মায়ের জন্য একটি হুইল চেয়ার দরকার। কিন্তু অভাব-অনটনের সংসারে কিনে দিতে পারছি না। মাঝগ্রাম ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল আলীম জানান, বিষয়টি আমি অবগত আছি। পরিবারের সাতজন প্রতিবন্ধী থাকলেও চারজন প্রায় দুই বছর ধরে প্রতিবন্ধী ভাতা ছয় মাস পরপর প্রতিজনে ২১ শ’ টাকা পেয়ে থাকেন। বাকীগুলো প্রতিবন্ধী কার্ড না থাকায় তারা পাচ্ছেন না। তবে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে তাদের ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। এ পরিবারের সকলকে সরকারী সহযোগিতা করার জন্য জোর দাবী করেছেন পরিবার।
আর/এস