খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক :
সংবিধান মেনেই আগামী ভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই ভোটে তিনি সবার অংশগ্রহণ চান।
সেই সঙ্গে আবারও তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, সংবিধান মেনে, অর্থাৎ তার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই চলতি বছর শেষে একাদশ জাতীয় নির্বাচন হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আশা করি, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সকল দল আগামী সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নত রাখতে সহায়তা করবেন।”
দশম সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের চার বছর পূর্তিতে শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া তার এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সম্প্রচার করা হয়।
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিন মেয়াদে ১৪ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার পর আওয়ামী লীগ নির্বাচনে হেরে গেলে শেখ হাসিনা হন বিরোধদলীয় নেতা।
এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম সংসদ নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে জয় পায় আওয়ামী লীগ। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত হয় মহাজোট সরকার।
এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি হয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন; তাতে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় ৫ জানুয়ারির ওই নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। তাদের ভোট বর্জন ও প্রতিহতের হুমকিতে আন্দোলনের মধ্যেই ১২ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনা।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালের শেষ দিকে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কীভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা আমাদের সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০১৩ সালের মতই নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের মাধ্যমে একটি ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠন করা হবে।
সেই সরকার নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনকে সর্বোতভাবে সহায়তা দিয়ে যাবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে ২০১৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেন।
নতুন কমিশন ইতোমধ্যে দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ স্থানীয় পর্যায়ের বেশ কিছু নির্বাচন ‘সুষ্ঠুভাবে’ সম্পন্ন করে ‘জনগণের আস্থা অর্জন করেছে’ বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসনা।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন এবং ভোটের দিন ও আগে-পরে ব্যাপক সহিংসতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে জাতিকে আগামী নির্বাচন নিয়ে সতর্ক করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, “কোনো কোনো মহল আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করতে পারে। আপনাদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
“জনগণ অশান্তি চান না। নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলনের নামে জনগণের জানমালের ক্ষতি করবেন- এটা আর এদেশের জনগণ মেনে নেবেন না।”
আগামী নির্বাচনের দিকে ইংগিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসিনা জাতির উদ্দ্যেশে বলেন, “আপনারাই সকল ক্ষমতার মালিক। কাজেই লক্ষ্য আপনাদেরই ঠিক করতে হবে- আপনারা কী চান! আপনারা কি দেশকে সামনে এগিয়ে যাওয়া দেখতে চান, না বাংলাদেশ আবার পিছনের দিকে চলুক তাই দেখতে চান।
“একবার ভাবুন তো, মাত্র ১০ বছর আগে দেশের অবস্থানটা কোথায় ছিল?”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্বাধীনতার ৪৭ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। আমরা আর দরিদ্র হিসেবে পরিচিত হতে চাই না। আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বাঁচতে চাই।
“এসব যদি আপনার চাওয়া হয়, তাহলে আমরা সব সময়ই আপনার পাশে আছি।”
বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যের কথাও তিনি এ ভাষণে আবার তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শুধু লক্ষ্য স্থির করেই কিন্তু আমরা বসে নেই। সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় কর্মসূচি প্রণয়ন করে সেগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।”
সরাসরি ভোট না চাইলেও অতীতের ভুল-ত্রুটি শুধরে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন সবচেয়ে বেশি সময় বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া এই রাষ্ট্রনেতা।
তিনি বলেন, “আমরা অতীতকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই না; তবে অতীতকে ভুলেও যাব না। অতীতের সফলতা-ব্যর্থতার মূল্যায়ন করে, ভুল-ত্রুটি শুধরে নিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যাব।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের যে মহাসড়কে যাত্রা শুরু হয়েছে সেখান থেকে আর পিছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্ম সমৃদ্ধি ও প্রগতির পথে সকল বাধা দূর করার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
‘দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে’ আগামী প্রজন্মের জন্য সেই উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।