বিশেষ প্রতিবেদক :
ট্রাফিক নিয়ম অমান্য করে রাজশাহী মহানগরীতে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে চলাচল করছে ইট, বালি ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী ভর্তি ট্রাক। প্রকাশ্য দিবালোকে ট্রাক ভর্তি করে ইট নিয়ে যাওয়ার কারণে যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। প্রতিনিয়ত রাস্তায় চলাচলকারী অন্যান্য ছোট যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে প্রকাশ্যে ইট ও বালি ভর্তি ট্রাক চলাচল করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে চলাচলকারী এসব ট্রাককে কখনোই থামানো হয় না। যার কারণে তারা আরো বেশি সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। শুধু নগরের রাস্তা দিয়েই নয় নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার ছোট ছোট রাস্তাতেও নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে প্রবেশ করে রাস্তা বন্ধ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে। আর সময় ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী পথচারী ও রিক্সা-ভ্যানের যাত্রীরা হয়রানির মধ্যে পড়েন। এরপরও তারা আইনের আওতায় আসে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মেট্রোলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে নির্মাণ সামগ্রী বহনকারী বা যেকোন ট্রাককে নগরীর মধ্যে দিনের বেলায় প্রবেশে নিয়ম রয়েছে। কোন ট্রাক দিনের বেলায় নগরীতে প্রবেশ করতে পারবে না। প্রবেশ করলে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী
ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। কিন্তু ট্রাক চালকরা ট্রাফিক বিভাগের দেওয়া নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দিনের বেলায় সিটি বাইপাসের রাস্তা ব্যবহার করে নগরীর মধ্যে প্রবেশ করছে। এসব ট্রাকে নির্মাণ সামগ্রী ইট ও বালি থাকছে।
বিশেষ করে ট্রাকে বেশি করে ইট ও বালি উন্মুক্তভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওভার লোড করে খোলা এসব ট্রাকে ইট নিয়ে যাওয়ার কারণে ইট পড়ে যেকোন পথচারী দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। কিন্তু ট্রাক চালকরা তা মাথায় না রেখে নিজের ইচ্ছামত নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে নগরের রাস্তা ব্যবহার করে চলাচল করছে। নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা ও বহরমপুর সিটি বাইপাস এবং রেলগেটের রোড ব্যবহার করলেও কোন চেকপোস্টেই এদের থামানো হয় না। চেকপোস্টে শুধু
মোটরসাইকেল ধরা হয়। ইটের পাশাপাশি বালি এমনভাবে নিয়ে যাওয়া হয় যাতে পুরো রাস্তায় বালি উড়তে উড়তে যায়। খোলা অবস্থায় বালি নিয়ে যাওয়ার কারণে তা উড়ে পথচারী ও মোটরসাইকেল চালকদের চোখে পড়ে। এতেও যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যার কারণে দিনের বেলায় নগরীর রাস্তা ব্যবহার করা ট্রাকের সংখ্যা বাড়ছে। ২৩ সেপ্টেমবর বেলা ১১টার দিকে নগরীর টিকাপাড়া সংলগ্ন কেমিকো ওষুধ কোম্পানীর পাশের একটি ছোট রাস্তায় ইট ভর্তি ট্রাক প্রবেশ করে। ছোট রাস্তা হওয়ায় ওই ট্রাকটি পুরো রাস্তা দখল করে নেয়। এতে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী পথচারী ও রিক্সা ও অটোরিক্সার যাত্রীরা সমস্যার মধ্যে পড়েন। কারণ রাস্তাটি ট্রাকের দখলে ছিল। পথচারীরা রাস্তা থেকে ট্রাক সরাতে বললে উল্টো তাদেরকেই হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়। তারা বলে কেউ তাদের কিছু করতে পারবেনা। শুধু ওই এলাকায় নয় অন্য এলাকাতেও একই
ভাবে ট্রাক প্রবেশ করে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে এমন অভিযোগ দিয়ে আসলেও এর সুরাহা হচ্ছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে। শাহিনুল ইসলাম নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, ট্রাফিক আইন অমান্য করে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে চলছে নির্মাণ সামগ্রী বহনকারী ট্রাক। এসব ট্রাকে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি জিনিস নেওয়া হয়। ইট এমনভাবে নেওয়া হয় যাতে যেকোন সময় পড়ে গিয়ে পথচারীরা দুর্ঘটনার মধ্যে পড়তে পারেন। আবার বালিও খোলা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবে প্রতিনিয়ত নগরবাসী সমস্যার মধ্যে পড়েন। তারপরও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। চেকপোস্টেও তাদের কেন ধরা হয়না তাও বোধগম্য নয়। আকবর নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, যেভাবে প্রতিনিয়ত ইট ও বালির ট্রাক নিয়ে যাওয়া হয় তাতে যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। নগরীর মধ্যে এসব ট্রাকে ঢোকা বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান। এ বিষয়ে নগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, দিনের বেলায় নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে ট্রাক চলার সুযোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আর/এস