বড়াইগ্রামে ভাতিজিকে ধর্ষণের অভিযোগ ফুফার বিরুদ্ধে
প্রকাশের সময় :
রবিবার, ৩০ জুন, ২০১৯
বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি: নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বাহিমালি গ্রামে ১২ বছর বয়সী সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কিশোরীকে ফুফার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার বাহিমালি গ্রামের আজমির হোসেনের মেয়ে তৃষা বাহিমালি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেনির ছাত্রী। একান্ত সাক্ষাতকারে মেয়ের সৎ মা সোহাগী বেগম জানান, ঘটনার দিন রাতে পাশের বাড়িতে আমি ও আমার মেয়ে সহকারে টিভি দেখতে যাই। টিভিতে সিরিয়াল দেখে রাত আনুমানিক ১১টার দিকে ঘরে ফিরে এসে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। রাত অনুমান তিনটার দিকে
রুমের মধ্যে চৌকির মড়মড় শব্দ শুনে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। তাৎক্ষনিক মোবাইলের আলোতে ঘরের মধ্যে আমার ননদের স্বামী গুলবার হোসেনকে দেখতে পাই। আমি ঘুম থেকে উঠে তাকে বলি, এতো রাতে আপনি এ ঘরে কেন? সঙ্গে সঙ্গে আমার কথার জবাব না দিয়ে দরজার খিল খুলে দৌড়ে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তার ব্যবহারকৃত মোবাইল ফোনটি ভুল করে ফেলে রেখে যায়। আমার মেয়েকে সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে মেয়ে বলে, ফুফা জোরপূর্বক আমার ঘরে প্রবেশ করে।
একান্ত সাক্ষাৎকারে মেয়ে এ প্রতিবেদককে বলে, আমাদের বাড়ি ও ফুফার বাড়ি পাশাপাশি হওয়ায় আমরা প্রায় সময়ই মা’র সাথে ফুফার বাড়িতে টিভি দেখতে যাই। রোযার মধ্যে ঘটনার দিন রাতে আমি ও আমার মা ফুফার পরিবারের সাথে টিভিতে সিরিয়াল দেখছিলাম। হঠাৎ আমার মা সিরিয়াল শেষ হওয়ার আগ মুহুর্তে আমাকে রেখে বাড়িতে চলে আসে।
সিরিয়াল শেষ হলে আমিও বাড়িতে চলে আসি, আমার রুমে প্রবেশ করে ঘরের দরজায় খিল দেওয়ার সময় হঠাৎ আমার ফুফা সজোরে ধাক্কা দিয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে দরজা আটকিয়ে দিয়ে ওড়না দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে এবং আমাকে নিয়ে চকির উপর শুয়ে পড়ে ও বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভিতী দেখিয়ে আমাকে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে।
তিনি শাসিয়ে আরো বলেন, যদি কাউকে বলিস তাহলে তোকে কেরোসিন দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মারবো ও তোর বাবাকে গুলি করে হত্যা করবো। এমন অবস্থায় আমি ভয়ে চুপ করে থাকি। রাত অনুমান তিনটার দিকে আমার মা ঘুম থেকে জাগা পেয়ে ফুফাকে দেখতে পায়। অমনি ফুফা মোবাইল ফোনটি রেখে দরজা খুলে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
তৃষা আরো বলে, পরের দিন রাতে জানালা দিয়ে আমাকে ডাক দিয়ে ফুফা বলেন, তোর জন্য বাজার থেকে মাখানো ঝাল-মুড়ি এনেছি, এগুলো নে। আমি প্রথমে নিতে আপত্তি করলে সে আমাকে ভয় দেখিয়ে বলে তোর পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলবো ও এই সব ঘটনা কাউকে বলবি না।
তখন আমি মাখানো ঝাল-মুড়ি নিয়ে খেতে থাকি। এ সময় আমার মুখের মধ্যে এক ধরণের ঔষধের গন্ধ পাই। পরে ভাল করে দেখি মাখানো মুড়িতে গুড়োগুড়ো এক ধরণের ট্যাবলেট মেশানো রয়েছে, আমি জানতে পারি এগুলো এক ধরণের জন্ম নিরোধক পিল আমাকে মুড়ির সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে। আমি এ ঘটনার জন্য ফুফার শাস্তি দাবী করছি। মেয়ের বাবা
আজমির হোসেনের সাথে কথা বললে জানা যায়, আমি গরীব মানুষ, ঢাকায় রিক্সা চালাই। অনেক দিন পর-পর বাড়িতে আসি আমি কিছুই জানি না। আমার পরিবার আমাকে মোবাইল ফোনে বলে তুমি বাড়িতে তাড়াতাড়ি ফিরে আস, জরুরী কথা আছে, ফোনে বলা যাবে না। তাই আমি ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে এসে জানতে পারি এটা সত্য ঘটনা এবং আমার প্রথম স্ত্রীর সাথেও তার অবৈধ সম্পর্ক ছিল। যার কারণে আমার প্রথম স্ত্রী চলে যায়, পরবর্তীতে আমি
দ্বিতীয় বিয়ে করি। আমার এই সংসারটাও নষ্ট করতে চায়।
সে আমার আপন বোনের স্বামী হওয়ায় এতোদিন চুপ করে ছিলাম। কিন্তু এখন আর চুপ থাকতে পারছি না। তার বিরুদ্ধে এলাকায় অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমি তার শাস্তি দাবী করছি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গুলবারের পরিবারের সবাই পলাতক রয়েছে। এদিকে মেয়ের পরিবার গরীব হওয়ায় ও মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে মামলায় যেতে চায়নি। অভিযুক্ত গোলবার হোসেন উপজেলার মাঝগাঁও ইউনিয়নের বাহিমালী গ্রামের সায়েদ আলীর ছেলে। মেয়ের ফুফু রেহেনা বেগমকে তার মা ঘটনাটি বললে তিনিও এসব বিষয় কাউকে না বলার জন্য ভয়-ভীতি দেখান। বড় চাচা ধর্ষণের ঘটনাটি চাপা রাখতে বাবাকে নির্দেশ দেয় এবং এক লাখ টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু অধিক সময় পার হওয়ার পরেও কোন বিচার না পেয়ে তার বাবা স্থানীয়দের কাছে বিচার দাবি করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনা শুনেছি। স্থানীয়ভাবে সুরাহা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলিপ কুমার দাস বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।