নিজস্ব প্রতিবেদক :
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনডোর ও বহির্বিভাগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দালাল চক্র। বছরের অন্যান্য সময় এরা সক্রিয় থাকলেও ঈদুল ফিতর ঘনিয়ে আসতেই এদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে কয়েকগুণ। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বহির্বিভাগে ও রাত পর্যন্ত ইনডোরে বিনা বাধায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দালালরা। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালে কর্তব্যরত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সামনেই দালালরা রোগী ধরে নিয়ে বাইরের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ফার্মেসীতে নিয়ে গেলেও পুলিশ ও আনসার সদস্যদের পক্ষ থেকে কোনো সক্রিয়া ভূমিকা
দেখা যায়না।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালকে কেন্দ্র করে লক্ষীপুর মোড় ও আশেপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এর মধ্যে কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার মানের হলেও অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে মাত্র। তারা দালালের মাধ্যমে রোগী হাতিয়ে নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালিয়ে আসছে। রোগী ধরা দালালরা প্রতিদিন সকাল থেকে বহির্বিভাগ খোলা থাকা পর্যন্ত দালালি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তারা হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে রোগী ধরে নিয়ে গেলেও কোনো রকম বাধার সম্মুখিন হয়না। এ কারণে এদের দৌরাত্ম্য আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। কম টাকায় ভালো ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দিবে বলে দালালরা বিভিন্ন স্থান থেকে চিকিৎসা নিতে আসা
রোগীদের ধরে নিয়ে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে টেস্টের নাম করে রোগীদের থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এমন কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসলেও দুই/একবার আটক হওয়া ছাড়া তেমন কোনো বাধার সম্মুখিন হয়না। এ নিয়ে রোগীদের পক্ষ থেকে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। কিন্ত দালালদের বেশির ভাগই স্থানীয় হওয়ায় তারা রোগীদের সাথে খারাপ ব্যবহার অথবা প্রভাব খাটিয়ে বাইরে নিয়ে চলে যায়।
আরো জানা গেছে, দালালরা শতকরা ৩০ থেকে ৪০ পার্সেন্ট কমিশনে বাইরে রোগী নিয়ে যায়। আর রোগীটি বাইরের বুঝতে পারলে এর পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। মাঝেমধ্যে রোগীদের দালাললা শারিরীক লাঞ্ছিত করে থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
শনিবার সরজমিনে হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পুরুষ ও মহিলা দালালরা রোগী ধরে নিয়ে যাচ্ছে। রোগীদের তারা কম টাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে দিবে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ পাশেই সেখানে কর্তব্যরত আনসার ও পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলো। দালালদের রোগী ধরতে
বাধা দিতে দেখা যায়নি। এভাবেই দালালদের বহির্বিভাগের বিভিন্ন চিকিৎসকের সামনে থেকে রোগী ধরে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এ ছাড়া দালালরা হাসপাতালের স্টাফদের মতো বহির্বিভাগের বিভিন্ন রুমের সামনেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তারপরও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। কহিনুর নামের এক রোগী অভিযোগ করে বলেন, এক দালাল কম টাকায় পরীক্ষা কম সময়ে করে দিবে বলে বাইরে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করতে চাইলে দালালরা আমাকে ধমক দেয়। ভয়ে আমি সেখানে পরীক্ষা করি। তবে তিনি সেই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম বলতে চায়নি। নাম না প্রকাশ করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মচারী বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগে দালালদের দৌরাত্ম্য প্রচুর
পরিমাণে বেড়েছে। তারপরও পুলিশ-আনসারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়না। দালালরা প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়িয়ে রোগী ধরে বাইরে নিয়ে চলে যায়। শুধু বহির্বিভাগেই নয় হাসপাতালের ইনডোরেও দালালরা রোগীদের বাইরে নিয়ে যায়। সেখানেও তারা কোনো বাধার সম্মুখিন হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র এডিসি হেডকোয়ার্টার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, পুলিশের সামনে দিয়ে দালালরা রোগী ধরে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ পাবেনা। হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশকে আরো সক্রিয়া ভূমিকা পালন করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হবে।
আর/এস