খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক:২০১৫ সালের ১০ মার্চ। ঢাকার উত্তরার একটি বাসা থেকে সাদা পোশাকধারী একদল লোক অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় বিএনপির তৎকালীন মুখপাত্র সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে। সাদা পোশাকধারীরা এ সময় নিজেদের আইনশৃংখলা বাহিনীর লোক পরিচয় দিলেও সালাহ্উদ্দিনকে অপহরণের পর ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অস্বীকার করে। এরপর দীর্ঘ দু’মাস গুম ছিলেন তিনি। এ ঘটনার ৬২তম দিনে সালাহউদ্দিন আহমেদ আবিষ্কার হন ভারতের শিলং এলাকার একটি পার্ক এলাকায়, বিধ্বস্ত অবয়বে।
এরপরের ঘটনা সবার জানা। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ভারতের পুলিশ পাসপোর্ট আইনে মামলা করে। আর দায়েরকৃত মামলায় ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর খালাস পান সালাহউদ্দিন। তবে তিনি এখনও শিলংয়ে অবস্থান করছেন। আইনি জটিলতায় তিনি এখনও দেশে ফিরতে পারেননি।
২০১৫ সালের দুঃসহ দিনটির কথা স্মরণ করে সালাহ্উদ্দিন আহমদের স্ত্রী সাবেক এমপি হাসিনা আহমেদ বলেন, সেদিন সালাহউদ্দিন আহমেদকে অপহরণের আগে সাদা পোশাকধারীরা উত্তরার পুরো এলাকার লোকজন সরিয়ে দিয়ে এলাকাটি জনশূন্য করে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। পরে তাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে নিয়ে যায়। এ
ঘটনার পর তিনি (হাসিনা আহমদ) উত্তরা ও গুলশান থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পুলিশ ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত নয় বলে জানিয়ে দেয়। তবে এ ঘটনায় একটি জিডি করতে চাইলেও পুলিশ সেই জিডি গ্রহণ করেনি। পরে বিষয়টি সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন স্থানে স্মারকলিপি দিলেও সালাহ্উদ্দিনের হদিছ মেলেনি।
তিনি আরও জানান, সরকারের উচ্চ মহল, শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কেউ সালাহউদ্দিনকে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি স্বীকার না করায় সালাহ্উদ্দিন কোন জায়গায়, কোন অবস্থায়, কোথায় আছে তার সঠিক সন্ধান পেতে ছেলে মেয়ে ও আত্বীয়-স্বজন এবং নেতা-কর্মীদের নিয়ে হতাশায় ছিলাম। স্বামীর খোঁজে চোখের ঘুম হারাম করে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়িয়েছি। সহযোগিতা পেয়েছি দেশের গণমাধ্যমগুলোর কাছ থেকে। তারা এ ব্যাপারে প্রায়ই সংবাদ প্রচার করে ঝড় তোলে।
হাসিনা আহমেদ আরও বলেন, গুম হওয়ার দীর্ঘ ৬২ দিন পর ২০১৫ সালের ১১ মে ভারতের শিলং রাজ্যে সালাহ্উদ্দিন আহমদকে পাওয়া যায় বলে সংবাদ প্রচার হয়। সেই থেকেই সালাহ্উদ্দিন আহমদ সেখানে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। ২০১৫ সালের ১১ মে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে একটি গাড়ি থেকে তাকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা। ওই
দিন ভোরে একটি মাইক্রোবাস থেকে সাদা পোশাকের একদল লোক শিলং শহরের গল্ফলিংক মাঠের পাশে রাস্তার উপর তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় নামিয়ে দিয়ে যায়। পরে চোখের কাপড় খুলে সামনে হেঁটে লোকালয়ে গিয়ে একটি দোকানের সামনে পাকা বেঞ্চে বসে পড়েন। এ সময় প্রাতভ্রমণে আসা কিছু লোকের কাছে তিনি জানতে চান, এ এলাকার
নাম কি? উত্তরে তারা এটি ভারতের মেঘালয়ের শিলং শহর জানালে, তিনি তাদের কাছে পুলিশ স্টেশনে যাওয়ার সহযোগিতা চান। তাদের সহযোগিতায় পুলিশে খবর দেয়া হলে পুলিশ এসে তাকে শিলং সদর থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সালাহউদ্দিনকে পুলিশ দ্রুত চিকিৎসার জন্য স্থানীয় ‘মিমহানস হাসপাতালে’ ভর্তি করে।
স্ত্রী হাসিনা আহমেদের ভাষায়, শিলংয়ে শারীরিকভাবে ভালোই আছেন সালাহউদ্দিন। যদিও চিকিৎসার জন্য দিল্লিতে আসা যাওয়া করেছেন বেশ কয়েকবার। ভারতীয় পাসপোর্ট অ্যাক্ট আইনে মামলায় জড়িয়ে দীর্ঘ প্রায় চার বছর আইনি লড়াইয়ে ওই মামলায় খালাস পেয়ে সেখানে মুক্ত অবস্থায় রয়েছেন। ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর শিলং আদালত সালাহ্উদ্দিনকে মামলা থেকে খালাস দিয়েছে।
শিলংয়ের আদালত পুলিশকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন তাকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে। কিন্তু শিলং পুলিশ চিঠি আমলে না নিয়ে সালাহ্উদ্দিন আহমদের হস্তান্তর প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে। যে কারণে সালাহ্উদ্দিনের বাংলাদেশে আসা বিলম্বিত হচ্ছে।
তবে তিনি আশা করছেন, আগামী অল্পদিনের মধ্যে দেশে ফিরে আসতে পারবেন সালাহ্উদ্দিন।
তিনি জানান, ভারতে অবস্থানকালে সালাহ্উদ্দিন আহমদের কিডনি, ঘাড় ও চর্ম রোগের সমস্যা দেখা দিলে তিনি একাধিকবার দিল্লি গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি আদালতের অনুমতি নিয়ে প্রথমবার দিল্লি গিয়ে ঘাড়ে অস্ত্রোপচার করেন, দ্বিতীয়বার গিয়ে কিডনিতে অস্ত্রোপচার করেছেন এবং তিনি এখন আপাতত সুস্থ আছেন।
মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের কেন্দ্রস্থল পুলিশ বাজার থেকে প্রায় ৩-৪ কিলোমিটার দূরে লাবান এলাকায় সানরাইজ নামে একটি গেস্ট হাউসে থাকেন সালাহউদ্দিন।
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন