বিশেষ প্রতিবেদক :
টানা ৩৮ দিন ধরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের একমাত্র সিটি স্ক্যান মেশিনটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা দরিদ্র রোগীরা ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। কারণ হাসপাতালে স্বল্প মূল্যে সিটি স্ক্যান করা সম্ভব হয়। কিন্ত বাইরে একই সিটি স্ক্যান হাসপাতালের দেড় থেকে দুই গুণ বেশি টাকায় করাতে হয়। একমাত্র সিটি স্ক্যান মেশিনটি নষ্ট হওয়ার কারণে হাসপাতাল একদিকে প্রতিদিন যেমন আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অন্যদিকে রোগীরাও পড়েছেন ভোগান্তির মধ্যে। প্রতিদিন বহিবির্ভাগ চলাকালীন সময় হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগ শত শত রোগী সিটি স্ক্যান করাতে এসে ঘুরে যাচ্ছেন। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা হাসপাতালের রোগী ভাগিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছেন। হাসপাতালের অভ্যন্তরে সিটি স্ক্যান করাতে না পারায় দরিদ্র রোগীরা সমস্যার মধ্যে পড়েছেন। সরজমিনে রামেক হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে ২৩ তারিখ হঠাৎ করে হাসপাতালের একমাত্র সিটি স্ক্যান মেশিনটি নষ্ট
হয়ে যায়। তারপর থেকে রোগীরা হাসপাতালের মধ্যে আর সিটি স্ক্যান করাতে পারছেন না। বিষয়টি রেডিওলজি বিভাগ থেকে হাসপাতালের পরিচালককে জানানো হয়। হাসপাতালের পক্ষ থেকে বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়। এরপর মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর একটি টিম নষ্ট হওয়া মেশিনটি সম্প্রতি দেখে যান। কিন্তু মেশিনের ওয়ারেন্টি শেষ হওয়ায় সহসায় ঠিক হচ্ছে না। এটি সারাতে কয়েক লাখ টাকা খরচ হবে বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানিয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ কাজে মাত্র ১৫ হাজার টাকা খরচ করতে পারেন বলেও জানানো হয়।হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে গিয়ে আরো দেখা যায়, হাসপাতালের ইনডোরে ও আউটডোরে চিকিৎসা নেওয়া অনেক রোগী সিটি স্ক্যান করাতে আসছেন। না জানার কারণে তারা ঘন্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ঘুরে যাচ্ছেন। হাসপাতালের সিটি স্ক্যান মেশিন নষ্ট হয়ে রয়েছে সে বিষয়ে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি বিভাগটির পক্ষ থেকে । যার কারণে রোগীরা দাঁড়িয়ে থাকছে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দালালরা রোগী ভাগিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে। সিটি স্ক্যান করাতে আসা সেলিম নামের এক রোগী বলেন, আমি সিটি স্ক্যান করাতে টাকা জমা দেওয়ার জন্য প্রায় দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
সিরিয়াল পাওয়ার পর জানানো হয় মেশিন নষ্ট। বিভাগের সামনে নোটিশ দেওয়া থাকলে হয়রানি হতে হতো না। তিনি দ্রুত মেশিনটি সারানোর জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান। শাহিনা নামের আরেক রোগী বলেন, আমরা গরীব মানুষ। হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করাতে পারলে কম টাকায় করতে পারতাম। কিন্ত মেশিন নষ্ট হওয়ার কারণে বাইরে বেশি টাকা দিয়ে করাতে হচ্ছে। আমার মতো অনেকেই ঘুরে যাচ্ছে।এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. হাফিজুর রহমান বলেন, মেশিনটি নষ্ট হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ওয়ারেন্টি শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে সমস্যা হচ্ছে। হাসপাতালের পরিচালক মাত্র ১৫ হাজার টাকার কাজ করাতে পারেন। এজন্য তিনিও সারাতে পারছেন না। প্রায় ১৫ লাখ টাকা লাগবে এই মেশিন সারাতে। কিছুদিনের মধ্যেই এটি সারানো সম্ভব হবে। মেশিন নষ্ট হওয়ার কারণে হাসপাতাল আয় থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।
খবর ২৪ ঘণ্টা/আরএস