খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: ‘পাওনা টাকা চাওয়ার জেরে’ নারায়ণগঞ্জের বন্দরে তিন নারীকে ‘যৌনকর্মী’ আখ্যা দিয়ে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ‘পাওনা টাকা চাওয়ার জেরে’ নারায়ণগঞ্জের বন্দরে তিন নারীকে ‘যৌনকর্মী’ আখ্যা দিয়ে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত শনিবার উপজেলার কলাবাগ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সোমবার মানবাধিকার কমিশনের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে আসে। পরে বন্দর থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ করে।
ঘটনার তিন দিন পর পুলিশ ইউসুফ মেম্বার নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। নির্যাতিতাদের একজন সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি সুদের টাকা দিয়ে সংসারের খরচ চালিয়ে আসছেন। গত কয়েক মাস আগে স্থানীয় বাসিন্দা জীবন ও উম্মে হানীকে তিনি দুই দফায় এক লাখ সাইত্রিশ হাজার টাকা ধার নেন।
“সম্প্রতি পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় তাদের মধ্যে বিরোধ হয়। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য ইউসুফকে জানিয়ে তার কাছে সহযোগিতা চাইলে উল্টো তাকে তিনি শাসিয়ে দেন।”
তিনি বলেন, “গত শনিবার (১৬ ফ্রেবুয়ারি) বিকালে জীবন ও তার লোকজন আমার বাড়ি গিয়ে ফাতেমাসহ তার দুই আত্মীয়াকে যৌনকর্মী আখ্যা দিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পেটায়।”
এ সময় তিন নারীর চুল কেটে দেওয়া হয়; এক পর্যায়ে তাদের গায়ের কাপড় খুলে নেওয়ারও চেষ্টা করা হয় এবং তার বাড়িতে লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয় বলে তিনি জানান।
নির্যাতিতা নারী আরও বলেন, “আমাদের মারধর করে গাছের সাথে বেঁধে রাখার পর তারা আমাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখায়।
“খবর পেয়ে পুলিশ গেলেও কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি। থানায় গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। উল্টো পুলিশ বলে, ইউসুফ মেম্বারের কথা ছাড়া থানায় মামলা হবে না।”
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকে গঠিত তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জে আসে। কমিটির সদস্যরা নির্যাতিতা তিন নারীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেন।
কমিটির সদস্যরা কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে সুপারিশ করবেন বলে জানান।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পরিচালক জেলা ও দায়রা জজ আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর বলেন, তিনজন নারীকে ‘মধ্যযুগীয় কায়দায়’ নির্যাতন করা হয়েছে।
“বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সাথে আমরা কথা বলেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে নায় বিচার করা হবে।”
তবে পুলিশ নিজে উদ্যোগী হয়েও মামলা করে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অভিযোগ ও তদন্ত বিভাগের পরিচালক নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর, কমিশনের উপ-পরিচালক গাজী সালাহ উদ্দিন এবং সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেন, “বিষটি জানার সাথে সাথে বন্দর থানার ওসিকে ব্যবস্থা নিদেশ দেওয়া হয়েছে। শুনেছি এই ঘটনার সাথে স্থানীয় ইউপি মেম্বার ইউসুফ হোসেন নামে একজন জড়িত রয়েছে। ওই ইউসুফ মেম্বারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্ত নিশ্চিত করা হবে। নির্যাতিতা নারীদের পক্ষ থেকে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে।”
বন্দর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় নির্যার্তিতা এক নারী বাদী হয়ে নয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের ধরতে পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছে।
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন