ওমর ফারুক, রাজশাহী :
সরকারী সহায়তার অভাবে জিরা চাষে সফল হতে পারছেন না রাজশাহীর তানোর উপজেলার প্রত্যন্ত বহড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ। ভারতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলেও বাংলাদেশে চাষ হওয়া অপ্রতুল এই জিরা চাষে উদ্যোগী হয়েছেন তিনি। ২০১৪ সাল থেকে একাধারে পরীক্ষামুলকভাবে জিরা চাষ করছেন। কিন্ত কাঙ্খিত ফলন না হওয়ায় প্রতি বছরই লোকসানের মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাকে। লোকসানের পরেও প্রতিবছর নতুন উদ্যমে জিরা চাষে সফলতা পাওয়ার আশায় চাষ করছেন। যত্নের কোনো ত্রুটিও রাখেন না। কিন্ত জিরা গাছ ভালো হলেও তাতে দানা আসেনা। দানা না আসায় প্রতিবছর লোকসানের মধ্যে পড়তে হয় তাকে। আর এ কারণে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে পারছেন না। এই সমস্যা নিয়ে তিনি রাজশাহীর কৃষি অফিস ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছেও সহায়তা চেয়েছেন তিনি। কিন্ত দিন, মাস ও বছর গড়িয়ে গেলেও সরকারী কোনো সহায়তা পাননি তিনি। জিরা চাষে সফল হওয়ার জন্য নিজ জিরা খেতের মাঠেও করেছেন মাঠ দিবস। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএমডিএ’র চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কৃষকগণ। সেখানেও তিনি তার সমস্যার কথা জানান। চেয়ারম্যান তাকে জিরা চাষে
সহায়তার আশ্বাস দিলেও তিনি তা আজও পাননি বলে খবর ২৪ ঘণ্টাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে কৃষক আব্দুল হামিদ বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রে গিয়েও পরামর্শ চেয়েছেন। কিন্ত কোনো পরামর্শও তার জিরা চাষের কাজে সহায়তায় লাগেনি। চার বছর আগেও যেমন প্রতিকূলতার সম্মুখিন হয়েছিলেন এখানো তেমন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাকে। প্রতিবছরের মতো এ বছরও তিনি জিরা চাষ করেছেন। এবারো তার জিরা গাছ ভালো হয়েছে। কিন্ত ফলন হবে কিনা এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তাই আছেন। সরকারী কোনো সহায়তা না পাওয়ায় আগ্রহ হারিয়ে না ফেললেও চাষ জমির পরিমাণ কমিয়ে ফেলছেন তিনি। সম্প্রতি তার গ্রামের মাঠে জিরা খেতে গিয়ে দেখা যায় তিনি নিজেই জিরা খেতের পরিচর্যা করছেন। জিরা চাষের প্রতি উৎসাহ ও জিরা চাষ করতে গিয়ে কী কী সমস্যা হয় এ নিয়ে কথা হয় তার সাথে। কৃষক আব্দুল হামিদ জানান, তার এক পরিচিত কৃষকের কাছ থেকে জিরা চাষের প্রতি উৎসাহ পান। তবে তারা কোনো সহায়তা করতে পারেনি। জিরা ভারতে হলেও তিনি দেশেই বাণিজ্যিকভাবে জিরা চাষ করার জন্য আগ্রহ দেখান। এরপর ২০১৪ সালে ভারতে গিয়ে প্রথমবারের মতো জিরার বীজ নিয়ে এসে ১৬ কাঠা জমিতে পরীক্ষামুলকভাবে জিরা চাষ করেন। কিন্তু পরিচর্যার ভুলে ৮ কাঠা
মাটির জিরা নষ্ট হয়ে যায়। বাকি ৮ কাঠা মাঠিতে সামান্য পরিমাণ জিরা উৎপাদন হয়। সেই ৮ কাঠা মাটিতে জিরার গাছ ভালো হলেও দানা তেমন হয়নি। দানা না হওয়ায় ওই জিরা দিয়ে শুধু বীজ হয়। পরের ২০১৬-২০১৭ সালে আবার জিরা চাষ করেন তিনি ৫ কাঠা মাটিতে। আবারো একই অবস্থায় হয় তার। জিরা চাষ হলেও গাছে দানা হয়নি। সেবারো তার চাষকৃত জিরা দিয়ে বীজ জয়। এবার ২০১৮-১৯ সালে আবারো জিরা চাষ করেন তিনি। বছরের পর পর লোকসান হওয়ায় এবার তিনি মাত্র আড়াই কাঠা মাটিতে জিরা চাষ করেছেন। প্রতি বছরের মতো এবারো জিরার গাছ ভালো হয়েছে। কিন্ত তাতে দানা ভালো হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ের মধ্যে আছেন। জিরার গাছ ভালো হলেও দানা না হওয়ায় তিনি সরকারের কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অফিসে পরামর্শের জন্য গিয়েছেন। কিন্ত তারা তেমনভাবে তাকে সহায়তা করতে পারেনি। এখানো তিনি সরকারী সহায়তার পথ চেয়ে আছেন। ভালো পরামর্শ ও সহায়তা পেলে বাণিজ্যিকভাবে তিনি জিরা চাষ করতে পারবেন বলে জানান। এদিকে, তিনি কালো জিরা সফলতার সাথে চাষ করছেন। কৃষক আব্দুল হামিদ খবর ২৪ ঘণ্টাকে বলেন, ভারতে জিরা চাষ হলে আমাদের দেশেও হওয়া সম্ভব। এ প্রত্যয় নিয়ে গত ২০১৪ সাল থেকে
পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করছি। কিন্ত গাছ ভালো করতে পারলেও দানা আসছেনা। এ বিষয় নিয়ে বিএমডিএ’র চেয়ারম্যানকে নিয়ে মাঠ দিবস করেছি। তিনি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্ত পরে আর এগোয়নি বিষয়টি। সরকারী পরামর্শ না পাওয়ায় বার বার ব্যর্থ হচ্ছি। আমি জিরা চাষ করে সফল হবোই। জিরা চাষে সফল না হওয়া পর্যন্ত চাষ করতে থাকবো। সরকারের থেকে কী সহায়তা চান এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জিরা চাষে কিভাবে সফল হবো এ বিষয় সম্পর্কে পরামর্শ ও এ সংশ্লিষ্ট আরো কোনো পরামর্শ পেলে জিরা চাষ করে সফলতা পাবো বলে আশা করছি। আমাকে সরকারের কাছে সহায়তা কামনা করছি। এ ছাড়া আমি কালো জিরাও চাষ করছি। যেটা ভালো ভাবে চাষ করাও সম্ভব হচ্ছে।এ বিষয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশীদ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ সহযোগিতা চাইলে আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা করা হবে। রাজশাহী অঞ্চলে কোথাও জিরা চাষ হয় বলে আমার জানা নেই।
খবর ২৪ ঘণ্টা/আর