আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কুয়েতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন চার শতাধিক বাংলাদেশি। দেশটির লেসকো নামের একটি কোম্পানিতে কর্মরত এসব বাংলাদেশি গত তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। কাজ করার বৈধ কাগজপত্র বা ‘আকামা’ও পাচ্ছেন না তারা। বৃহস্পতিবার এসব শ্রমিক কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ঘেরাও করে ভাঙচুর করেছে। দূতাবাসের এইচওসি এবং কনস্যুলার আনিসুজ্জামানকে তারা মারধর করেছে। আঘাত গুরুতর হওয়ায় কনস্যুলারকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া কনস্যুলারকে বাঁচাতে গিয়ে পাসপোর্ট ও ভিসা শাখার আরো তিন কর্মকর্তা মারধরের শিকার হয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ দূতাবাস ঘিরে রেখেছে কুয়েত পুলিশ।
দূতাবাস ঘেরাও ও ভাঙচুরের বিষয়টি স্বীকার করে রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম গণমাধ্যমকে জানান, সকালে অফিসে এসেই দেখতে পাই দুই থেকে তিনশ’ লোক দূতাবাসের ভেতরে ও বাইরে জমায়েত করেছে। আমি গাড়ি থেকে নামার পরই আট থেকে ১০ জন তাদের সমস্যার কথা বলতে শুরু করেন।
আমি তাদের জানাই তোমরা ৫ থেকে সাত জনের একটি টিম আমার সঙ্গে কথা বলতে রুমে আসো। কথামতো তারা আমার রুমে আসে। রুমে এসে তারা লেসকো কোম্পানিতে তাদের তিন মাসের বেতন বকেয়াসহ বিভিন্ন কথা জানায়। আমি ও দূতাবাসের কর্মকর্তারা তাদের সমস্যা মনোযোগ দিয়ে শুনি এবং নোট নেই।
তিনি বলেন, প্রতিনিধিদলের সামনেই লেসকো কোম্পানির কর্মকর্তাদের ডেকে আনি। ওই সময় লেসকো’র কর্মকর্তা জানান, গত বছরের জুলাই থেকে লেসকো’র ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ (ফ্রিজ) রয়েছে। দুইদিন আগে লেসকো’র জব্দ অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়া হয়েছে। তাই আগামী ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের আকামার অগ্রগতির বিষয়টিও জানায় তারা। লেসকো কোম্পানির কর্মকর্তার কথায় প্রতিনিধিদলটি আশ্বস্ত হয়। এরপরও দূতাবাসের কনস্যুলার আনিসুজ্জামান ও তিন কর্মকর্তাকে মারধর করা হয়েছে। পাসপোর্ট ও ভিসা শাখার কম্পিউটারসহ সব জিনিস ভেঙে ফেলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে ভিড় করতে শুরু করেন লেসকো কোম্পানিতে কর্মরত বাংলাদেশিরা। রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম অফিসে এসে গাড়ি থেকে নামার সময়ই শ্রমিকরা স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেন। মাঝখানে লেসকো কোম্পানির প্রতিনিধি এসে যোগ দেন। আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার পরই লেসকো কোম্পানির প্রতিনিধিকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে যান কনস্যুলার আনিসুজ্জামান। তখন ঘেরাও করে রাখা বাংলাদেশি শ্রমিকরা কনস্যুলারকে মারধর করে। তাকে বাঁচাতে গিয়ে আরো তিনজন কর্মকর্তা শ্রমিকদের হাতে আক্রান্ত হন। এ ছাড়া পাসপোর্ট ও ভিসা শাখার আসবাবপত্র ও কম্পিউটার তছনছ করা হয়। দূতাবাসের অনেক কম্পিউটার ভেঙে ফেলা হয়েছে। ঘটনার সময় কুয়েত পুলিশকে খবর দেয়া হয়। তারা এসে বাংলাদেশ দূতাবাস ঘিরে রেখেছে।
দূতাবাসের এমন অবস্থায় রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম বলেন, কম্পিউটারগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। তাই কি দিয়ে কনস্যুলার শাখার কার্যক্রম চলবে? এটা মাথায় আসছে না। দেশের সম্পদ নষ্ট করা কী ঠিক?
এদিকে প্রায় পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি ৭ থেকে আট লাখ টাকা খরচ করে কাজের সন্ধানে কুয়েত যান। দালালদের মিষ্টি কথায় গ্রামের সহজ সরল মানুষ ভিটেমাটি বিক্রি করে একটু শান্তি ও উন্নত জীবনে বসবাসের জন্য বুক ভরা আশা নিয়ে কুয়েত যান। দালালরা নিরীহ বাংলাদেশিদের জানান, আপনাদের মাসিক বেতন হবে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।
আরামদায়ক কাজের সঙ্গে ওভারটাইম ও থাকা-খাওয়া কোম্পানি বহন করবে। এ ছাড়া বার্ষিক বোনাসসহ নানা সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে। এসব কথা বলে পাঠালেও রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের বৈধ ভিসায় কুয়েতে পাঠায়নি। এজন্য চরম বিপদে আছেন তারা। সেই সঙ্গে দালালদের টাকা দিয়েও আকামা নবায়ন করতে পারেন নি। এজন্য চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।
শ্রমিকরা জানান, লেসকো কোম্পানিতে কাজ করতে কুয়েতে আসেন তারা। চার মাস ধরে তারা বেতন পাচ্ছেন না। তাদের আকামা বা পরিচয়পত্র দেয়া হয়নি। এজন্য সমস্যার মুখে পড়েছে। এসব সমস্যার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছেন চার শতাধিক বাংলাদেশি শ্রমিক।
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন