ওমর ফারুক, রাজশাহী:
গত ৬ মাসে রাজশাহী মহানগর ও আশেপাশের জেলা-উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যে রয়েছে, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত, ট্রাক চাপায় নিহত ও মাইক্রোবাসের চাপায় নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়াও আরো দুর্ঘটনা ঘটেছে যাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছে অনেক মানুষ। এদের মধ্যে অনেকেই পুঙ্গত্ব বরণ করেছে। কোন ক্রমেই যেন থামছেনা সড়ক দুর্ঘটনার মতো প্রাণহানিকর ঘটনা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপতাল সুত্রে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে একাধিক রোগী ভর্তি হয় হাসপাতালে। এদের মধ্যে অনেকই প্রাণ হারায়। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চালকদের সচেতন করার লক্ষ্যে সমাবেশ-র্যালীসহ
অনেক কর্মসূচী পালন করছেন সচেতন নাগরিকরা। কিন্তু কোন কিছুতেই কমছেনা সড়ক দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনা নিমিষেই কেড়ে নেই একটি পরিবারের স্বপ্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছে, চালকদের অসচেতনার জন্যই সড়ক দুর্ঘটনার মত মারাত্মক ঘটনাগুলো ঘটছে। চালক ও পথচারীদের সচেতনতাই একমাত্র কমাতে পারে দুর্ঘটনা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এসব রোগী মারা গেছে। এর বাইরেও অনেকেই ঘটনাস্থলে মারা যায়। যার হিসাব রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নথিতে নেই। যারা যানবহনে যাতায়াত করার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হওয়া মানুষের মধ্যে একটি বড় অংশ হলো বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল চালক এবং বাকিগুলো বাস, ট্রাক ও অন্যান্য যানবহনের যাত্রী এবং পথচারী। মৃত্যু হওয়া ১৪৬ জনের মধ্যে জুলাই মাসে ২৫ জন, আগষ্ট মাসে ৪০ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ১৬ জন, অক্টোবর মাসে ২৬ জন, নভেম্বর মাসে ২৬ জন ও ডিসেম্বর মাসে ১৩ জন। উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, পুঠিয়া ট্রাক চাপায় দুই মোটরসাইকেল
আরোহী নিহত, ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে চালক নিহত, গোদাগাড়ীতে দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত। এদিকে, রাজধানী ঢাকায় বাস চাপায় শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় সারাদেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় কিছু সচেতনতা বাড়লেও সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। গত জুলাই মাসে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য রাজশাহীতে আসেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ও নিরাপদ সড়ক চাই এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি নিরাপদ সড়কের জন্য চালক ও পথচারী উভয়কে সচেতন হওয়ার আহবান জানান। সেই সাথে ট্রাফিক আইন মানার প্রতিও জনগনের প্রতি আহবান জানান। তাঁর স্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর
থেকেই তিনি নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। যে সব কারণে সড়ক দুর্ঘটনা হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো, ফিটনেসবিহীন গাড়ী, চালকদের অদক্ষতা, অন্যমনষ্ক হয়ে গাড়ী চালানো, গাড়ী চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা বা সিগারেট টানা, নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার অতিরিক্ত স্পীডে গাড়ী চালানো, পথচারীদের অন্যমনষ্ক হয়ে রাস্তায় চলাচল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কারণ ছাড়াও অদক্ষ চালকের কারণেও সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়েই চলেছে। পথচারীদের অন্যমনষ্কতার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয় বলে সচেতন মহল মনে করেন।
খবর ২৪ঘণ্টা/আর