1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
বাংলাদেশে মন্ত্রিসভার ধাঁধা: ভারতের কম, চীনের বেশি? - খবর ২৪ ঘণ্টা
শনিবার, ১১ জানয়ারী ২০২৫, ০২:০৮ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে মন্ত্রিসভার ধাঁধা: ভারতের কম, চীনের বেশি?

  • প্রকাশের সময় : বৃস্পতিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৯

খবর২৪ঘণ্টা,  ডেস্ক: বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল বিশ্বাসযোগ্যতা থেকে অনেক দূরে। আর যদি ২৮৮টি আসনে আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মাত্র পাঁচটিতে জয়ী হওয়ার নির্বাচনী ফলাফল যথেষ্ট বেদনাদায়ক নাও হয়, তবুও ৪৭ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিসভা প্রবাদপ্রতীম প্যান্ডোরার বাক্সের চেয়েও অনেক বেশি বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতাদের পুরোপুরি অনুপস্থিতিও অনেক দিক থেকে অবাক করা ঘটনা। স্বাধীনতা-যুগের কয়েকজন নায়কের স্থানে নতুন মুখের আগমন ঘটেছে: ঘোষিত ৪৭ মন্ত্রীর মধ্যে ৩১ জনই নতুন। এমনকি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অনুগত সদস্যরাও মন্ত্রিসভায় স্থান পান নি। এখন নির্বাচনী ডামাডোল শেষ হয়ে যাওয়ায় বিশ্লেষকরা নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের দিকে তাদের মনোযোগ ফিরিয়েছেন।

অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ বেশির ভাগ বাংলাদেশিই এই মন্ত্রিসভা নিয়ে হতবুদ্ধিকর অবস্থায় পড়ে গেছেন। জাদুকররা যেভাবে টুপির ভেতর থেকে খরগোশ বের করেন, শেখ হাসিনাও এমন একটি দল (মন্ত্রিসভা) গঠন করেছেন, যা নিয়ে কোনো ধরনের ভবিষ্যদ্বাণীই করা যায় নি। এই বিস্ময়ের পেছনে রহস্য কী? বিরাজমান আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক দৃশ্যপট বিবেচনা করলে সাধারণ বুদ্ধিতেই বোঝা যাবে যে, ছোট দেশগুলোর স্থানীয় রাজনীতিতে বড় শক্তিগুলোর হাত থাকে। কলা-কৌশলে কিংবা বলপ্রয়োগ করে ‘বড় ভাইয়েরা’ তাদের অনুকূলে চলতে ছোট দেশগুলোকে বাধ্য করে।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তা প্রদানের জের ধরে ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের ওপর ভারতের জোরালো প্রভাব রয়েছে এবং দেশটি আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিশেষভাবে ঘনিষ্ঠ। ভারত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখলেও আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ফ্রন্টে চীন বিশাল প্রেক্ষাপটে আবির্ভূত হওয়ায় দৃশ্যত সূক্ষ্ম পরিবর্তন ঘটে গেছে। শক্তিশালী বিশ্বশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশকারী চীন তাৎপর্যপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তি ভারতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, এতে সম্ভবত সন্তুষ্ট নয় কেউই।

ভারত দেখছে, তাদের একটির পর একটি প্রতিবেশী পূর্বমুখে বেইজিংয়ের দিকে তাকাচ্ছে, ধীরে ধীরে দিল্লি থেকে সরে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও কী তাই ঘটছে? আঞ্চলিক রাজনীতির খেলায় কৌশলী খেলোয়াড় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্ভবত চীনের দিকে অধিক ঝুঁকেছেন। তার নতুন মন্ত্রিসভায় সম্ভবত ওই পদক্ষেপেরই সূক্ষ্ম প্রতিফলন ঘটেছে। নিশ্চিতভাবেই মনে হচ্ছে ভারতের সঙ্গে নাড়ির সম্পর্কটি কেটে গেছে বা কাটা পড়ার পর্যায়ে রয়েছে। আর এটিও বেশ নিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে যে ভারতকে তার মুষ্ঠি শিথিল করতে হচ্ছে। তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমুর মতো আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এবং হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননের মতো সিনিয়র নেতারা ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্টের প্রশাসনিক বা নিরাপত্তা কাঠামোর সঙ্গে আলাদা সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছিলেন। তারা সবাই অপাংক্তেয় হয়ে গেছেন। ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি, কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মতো প্রভাবশালী ভারতীয় মহলের সঙ্গে এসব নেতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

এটি ভারতকে বিশেষ সুবিধা দিতো এবং ওই শক্তিটিই এখন মনে হচ্ছে খোয়া গেল। যোগাযোগের প্রতিষ্ঠিত পথটি কেটে গেছে। অসিম কুমার উকিল, মৃণাল কান্তি দাস, শাফি আহমেদের মতো আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সারির ছোট, তবে তাৎপর্যপূর্ণ যেসব নেতাকে ভারত প্রতিরক্ষার দ্বিতীয় প্রাচীর হিসেবে গড়ে তুলেছিল, তারা সবাই হাসিনার আশীর্বাদ থেকে সরে গেছেন। দিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষাকারীদের মধ্যে যারা থেকে গেছেন তাদের মধ্যে সম্ভবত আছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং নবনিযুক্ত শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি। তবে দিপু মনিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেয়ায় (আগে তিনি ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান) তিনিও নয়াদিল্লির স্বার্থ দেখভাল করার ক্ষেত্রে সামান্যই ভূমিকা রাখতে পারবেন। একইভাবে যাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দেয়া হয়েছে তাদের কেউই, তোফায়েল আহমেদ ও আমুর সঙ্গে ভারতের যেমন ঘনিষ্ঠতা ছিল, তেমন ঘনিষ্ঠ নন।

এসব নেতাকে খুব বেশি পাশে সরিয়ে রাখাটা সম্ভবত দিল্লিকে দূরে রাখার একটি হিসাবি চাল। বলা হয়ে থাকে, ভারত এসব নেতার মাধ্যমে বাংলাদেশে তার কার্যক্রম পরিচালনা করতো, স্বার্থ আদায় করে নিতো। তোফায়েল ও আমুর মতো নেতারা দৃশ্যপট থেকে বিদায় নেয়ায় যোগাযোগ লাইনটিই কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যোগাযোগের একমাত্র যে লাইনটি রয়ে গেছে তা একেবারে সরাসরি এবং তা হলো হাসিনার সঙ্গে। মনে হচ্ছে, তিনি এমনটিই চেয়েছেন। নির্বাচন পর্যন্ত ভারত তার ঐতিহ্যবাহী মিত্র আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়ার মধ্যেই তার বিকল্প সীমিত রেখেছিল। বিএনপি অতীতে ভারতবিরোধী কার্ড খেললেও এবার তারা নয়াদিল্লির দিকে ছুটেছে। অবশ্য ওই উদ্যোগ অগ্রাহ্য করা হয়েছে এবং বিএনপির অনেক নেতা মনে করেন, তাদেরকে ব্যবহার করা হয়েছে। কঠোর বাস্তবতা হলো, শুরুতে বিএনপিই ছিল চীনের বিশ্বস্ত। এবার বিএনপি সুযোগটি হাতছাড়া করেছে কিংবা বলা যায়, সে পুরনো বন্ধুকে বাদ দিয়ে ভারতের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করেছে। অনেকে মন্ত্রিসভা গঠনকে হয়তো মায়ের (হাসিনা) উত্তরসূরি হিসেবে ছেলেকে (সজীব ওয়াজেদ জয়) এগিয়ে আনা বলে মনে করতে পারেন।

এসব বিশ্লেষক মনে করেন, হাসিনা এমনভাবে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন, যাতে সুযোগমতো জয়ের পক্ষে ক্ষমতা গ্রহণ করা সহজ হয়। এই মন্ত্রিসভা তার জন্য স্বস্তিদায়ক হবে। অবশ্য এই দৃশ্যপটে আরো বড় একটি ছবি আছে। ভারত এখন দূরে থাকায় নিশ্চিতভাবেই যে প্রতিবেশী সুবিধা পাবে সে হলো শক্তিশালী চীন। বাংলাদেশে বিপুল বিনিয়োগ করায় ভারতীয় প্রভাবের শক্তিকেন্দ্রগুলো বিচ্ছিন্ন রাখতে চীন কার্যকরভাবে তার ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে চীন সফলভাবে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রতিবেশী থেকে বাংলাদেশকে সরিয়ে এনেছে। সাধারণভাবে যতটুকু মনে করা হয়ে থাকে, চীনা সংশ্লিষ্টতা তার চেয়ে অনেক বেশি। এমন একটি ধারণা রয়েছে যে বাংলাদেশে চীন কেবল ব্যবসায়িক সুযোগ গ্রহণের ব্যাপারে আগ্রহী। বিশাল পদ্মা সেতুসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করায় ব্যবসা নিশ্চিতভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। তবে চীনের কৌশলগত অনুপ্রবেশকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। নিশ্চিত বিনিয়োগ স্বার্থের সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান ভূ-কৌশলগত বৈশ্বিক তাৎপর্য থাকার কারণে বাংলাদেশের সরকার পরিচালনাকারীকে নিরঙ্কুশভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চীন অনেক বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সে এখানে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নয়াদিল্লির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কাউকেই দেখতে চায় না। এ কারণেই দিল্লি-অন্তঃপ্রাণদের বাদ দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে। চীনা কৌশলের অংশে জয়-এর বিষয়টিও বেশ ভালোভাবে থাকতে পারে।

ভারতের সঙ্গে হাসিনা জোরালো সম্পর্ক অব্যাহত রাখলেও বেইজিং চেষ্টা করে যাচ্ছে জয়কে জয় করার। মনে হচ্ছে রাজনীতির হৈহুল্লোড়ের মধ্যে প্রবেশ করার পর থেকেই জয়ও চীনের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। ফলে ভারতপন্থি নেতারা বাদ পড়েছেন, তাদের স্থানে চীনপন্থিরা সুযোগ পেয়েছেন। এতে করে যথাযথ ধারায় জয়ের উত্তরাধিকার হওয়ার পথটি সুগম হতে পারে। কিন্তু এটি কি সাবলীল যাত্রা হবে? বাংলাদেশে ভারতের ব্যাপকভিত্তিক গ্রন্থি থাকায় একে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করা কঠিন হবে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে ভারতীয় প্রভাব অনেক গভীরে এবং নয়াদিল্লি চাইলে দেশে ‘অস্থিরতা’ সৃষ্টি করার মতো ক্ষমতা তার আছে। অন্যদিকে নিজস্ব ঘরানার রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় মডেল থাকায় গণতন্ত্র, একদলীয় শাসন ও মানবাধিকার বা এসবের অভাবের মতো বিষয়গুলোর প্রতি কোনো ধরনের অনিচ্ছা বা অস্বস্তি চীনের নেই। চীনের গ্লোবাল টাইমসের সাম্প্রতিক এক সম্পাদকীয়তে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। এতে লেখা হয়েছে: ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউসহ পাশ্চাত্যের শক্তিগুলোর মঙ্গলবারের নির্বাচন দিবসের সহিংসতা অন্যান্য অভিযোগ, যা নির্বাচনী প্রচারণার পরিবেশকে কলুষিত করেছিল, বিরোধীদের বিক্ষোভকে আরো ইন্ধন দেবে।’

সম্পাদকীয়টিতে আরো উল্লেখ করা হয় যে, হাসিনা ক্ষমতায় থাকায় চীন বেশ খুশি: ‘এটা উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে হাসিনার অধীনে বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা বজায় রেখেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু ল্যাঙ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন যে, চীন-বাংলাদেশ কৌশলগত অংশীদারিত্ব সহযোগিতা আরো এগিয়ে নিতে নতুন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী চীন।’ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা। এর কারণেই বাংলাদেশকে পাশে চায় চীন। ঢাকায় চীন-বান্ধব সরকার বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পগুলোর রাজনৈতিক ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়ক হবে। ভারত জোরালোভাবে এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে এবং যুক্তরাষ্ট্রও করে। চীন তার পরিম-লে কোনো ধরনের উপদ্রব বরদাস্ত করবে না। ফলে বাংলাদেশে কেবল দৃঢ় উপস্থিতিই নয়, আরো অনেক বিষয় নিশ্চিত করার সব কারণই আছে চীনের কাছে। চীনসাগর থেকে বাংলাদেশের দিকে পরিবর্তনের বাতাস বইছে, আওয়ামী লীগ নিশ্চিতভাবেই পূর্ব দিকে ঝুঁকছে। কারচুপির ব্যাপক অভিযোগ সত্ত্বেও জয় নিয়ে দলটি যে বাহাদুরি দেখিয়েছে, তার ব্যাখ্যা এটিই।
(ইরতিজা নাসিম আলী, প্রধান সম্পাদক, সাউথ এশিয়ান মনিটর)

খবর ২৪ঘণ্টা/ জেএন

পোস্টটি শেয়ার করুন

এ ধরনের আরো খবর

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By SISA HOST