বিশেষ প্রতিবেদক :
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। রাজশাহীর ৬টি আসনেই শুরু হয়েছে জমজমাট প্রচার-প্রচারণা। দলের প্রার্থীর পক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছেন নেতাকর্মীরা। নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে সাফাই গেয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন নেতাকর্মীরা। পিছিয়ে নেই তানোর-গোদাগাড়ী এলাকা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-১ আসনের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আমিনুল হক ও রাজশাহী জেলা আ’লীগের সভাপতি বর্তমান সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী। ১১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলায় দুই এমপি প্রার্থীর পক্ষে পোস্টার ও ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। তবে বিএনপি নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে, ব্যারিষ্টার আমিনুল হকের পোস্টার রাতের
আঁধারে ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে ও কোনো কোনো স্থানে পোস্টার লাগাতে দেওয়া হচ্ছে না। এরপরও দীর্ঘদিন পর ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ায় এ এলাকার মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। হাট-বাজার ও পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানগুলোতে ভোট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কে হবে তানোর-গোদাগাড়ীর জনপ্রতিনিধি। দুই দলের এমপি প্রার্থী সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। বিএনপির প্রার্থী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি, বেকার সমস্যার সমাধান ও আ’লীগ প্রার্থী উন্নয়ন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রতি দিয়ে নিজ নিজ প্রতীকের পক্ষে ভোট দাবি করছেন। অন্যান্য বারের নির্বাচনের থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে একটু আলাদাভাবে দেখছেন বিএনপির প্রার্থী দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আমিনুল হক। কারণ তার দল বিএনপি দীর্ঘ ১২ বছর ক্ষমতার বাইরে। নিজে ২০০৮ সালে নির্বাচন না করার কারণে ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন দল বয়কট করার কারণে দীর্ঘদিন মাঠে অনুপস্থিত
ছিলেন এই নেতা। অস্তিত্বের লড়াইয়ে নেমেছে তার দল বিএনপি। ব্যারিষ্টার অমিনুল হক তিনবার নির্বাচন করে তিনবারই জয়ী হন। এরমধ্যে একবার এমপি, একবার সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রী ও সর্বশেষ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। নিজ নির্বাচনী এলাকায় তুমুল জনপ্রিয় এই নেতা। প্রত্যেকবারই বিপুল ভোটে জয়লাভ করে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীকে হারিয়েছেন। ব্যারিষ্টার আমিনুল হক এমপি নির্বাচিত হয়ে তানোর-গোদাগাড়ী এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেন। কাঁচা থেকে অনেক রাস্তা পাকা করেছেন। এ ছাড়া অসংখ্য স্কুল-কলেজ নির্মান করেছেন। শিক্ষা প্রসারে নিজ নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থাকার সময় তানোর-গোদাগাড়ী এলাকায় গণসংযোগে গিয়ে নিজের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন তিনি। গণসংযোগ ও পথসভায় ব্যাপক লোকের সমাগম
হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর প্রিয় নেতাকে কাছে পেয়ে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। নির্বাচন উপলক্ষে এই তানোর-গোদাগাড়ীর বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে সরব হয়ে উঠেছে। সক্রিয়ভাবে দিনরাত ভোট প্রার্থনা করছেন ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে। উদ্দেশ্য একটাই ব্যারিষ্টার আমিনুল হককে বড় জয় উপহার দেওয়া। এ ছাড়া আগে থেকেও রাজশাহী বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত। ব্যারিষ্টার আমিনুল হক নিজেও গণসংযোগ ও পথসভায় বিভিন্ন প্রতিশ্রতি দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। তিনি এবার বড় ব্যবধানে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, এবার তাদের প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী আ’লীগের ওমর ফারুক চৌধুরীকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করবে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিষ্টার আমিনুল হক। কারণ ফারুক চৌধুরী ১০ বছর এমপি থাকার পরেও এলাকায় তেমন কোনো উন্নয়ন করেন নি। অনেক ভাঙ্গা চোরা-রাস্তা সংস্কার হয়নি। তাই
তারা এবার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। এদিকে, আ’লীগের পক্ষ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি পদে নির্বাচন করছেন জেলা আ’লীগের সভাপতি ও দুই বারের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোটে নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি জোট ভোট বর্জন করায় বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় এমপি নির্বাচিত হন। প্রথম বার সরকারের শেষ সময়ে এসে তিনি এক বছর শিল্প প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। তবে পরের বার কোনো দায়িত্ব পান নি। নির্বাচন উপলক্ষে আ’লীগের নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যেই ভোটের প্রচারে নেমে পড়েছেন। দিন-রাত নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট করছেন তিনি। তবে মনোনয়ন পাওয়ার পর তার চ্যালেঞ্জ ছিল ”সেভেন স্টার” খ্যাত নেতাকর্মীদের এক মঞ্চে নিয়ে এসে ভোটের প্রচারে নামানো। অবশেষে সবাইকে এক করতে তিনি সমর্থ্য হয়েছেন। এই সেভেন স্টাররা প্রায় গত দুই বছর ধরে এমপি ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাট্টা ছিল। তারা নিজেদের সাতজনের মধ্যে
যেকোনো একজনকে এমপি মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে দাবি তুলে তানোর-গোদাগাড়ীর বিভিন্ন স্থানে সভা করেন। তারা ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাট্টা ছিল। এরমধ্যে অন্যতম ছিলেন, তানোর উপজেলা আ’লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানি ও মতিউর রহমান। সাতজনই মাঠে সক্রিয় থাকলেও দু’জন বেশি সক্রিয় ছিল। এরমধ্যে রাব্বানি অনেকটা জনপ্রিয় হয়েও উঠেছিলেন। কিন্তু দলের প্রধান তাদের মধ্যে কাউকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তারা মনোনয়নও উঠাননি। অবশেষে গোদাগাড়ীতে নির্বাচনী সভার মাধ্যমে তারা এক হয়ে ফারুক চৌধুরীর পক্ষে কাজ করার জন্য অঙ্গীকার করেন। তারাও এখন ফারুক চৌধুরীর সাথে মাঠে থাকছেন। ফারুক চৌধুরী গণসংযোগে গিয়ে আ’লীগ সরকারের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার জন্য তার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন ভোটারদের। দলের নেতাকর্মীরাও এখন প্রচারে সরব। তানোর-গোদাগাড়ী এলাকায় রাস্তা-ঘাটের অবস্থা তেমন ভালো নয়। অনেক স্থানে এখনো ভাঙ্গা রাস্তা রয়েছে। যেগুলো মেরামত হয়নি। এর কারণে হিসেবে এলাকার সাধারণ মানুষ ফারুক চৌধুরীর অবহেলাকে দায়ী করছেন। বিশেষ করে তানোর উপজেলায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভাঙ্গা চোরা রাস্তা রয়েছে। এরমধ্যে
তানোর উপজেলার কলমা থেকে বিল্লী পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তার একেবারে নাজেহাল অবস্থা। এই রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে মেরামত হয়নি। সাধারণ মানুষকে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়। গত নির্বাচনে জনগন ভোট দিতে না পেয়ে এবার জনগন ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন। জনগন ভোট দিয়ে তার প্রিয় নেতাকে বেছে নেবেন। যেই নেতা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন ও দলমত নির্বিশেষে সুখে-দুঃখে সবার পাশে থাকবেন। সাধারণ ভোটাদের সাথে কথা হলে তারা জানান, এবার নির্বাচনে দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। দুই জনের মধ্যে একজন মন্ত্রী ছিলেন এবং একজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। দুই প্রার্থীরই প্রভাব রয়েছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনেই এই অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে।উল্লেখ্য, রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫২ জন। নারী ১ লাখ ৯২ হাজার ৭২৩ ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯০ হাজার ৬১৯ জন। এ আসনে নতুন ভোটার ৪০ হাজারের বেশি। জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে নারী ভোটারও ফ্যাক্টর হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
খবর ২৪ ঘণ্টা/আরএস