বাগমারা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাগমারায় এমপি এনামুল হক ও মেয়র কালামের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে চঞ্চল নামের এক আ’লীগ কর্মী নিহত হয়েছে। রাজশাহী-৪ বাগমারা আসনের সাংসদ এনামুল হক ও তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদের সমর্থকদের মধ্যে শনিবার হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় কালাম সমর্থক চঞ্চল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চঞ্চল কুমার (৪২) মারা গেছেন। ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে মা ষ্টোক করে মৃত্যু শয়্যায় রয়েছে। সর্বহারা ক্যাডার আর্ট বাবুই নিহত চঞ্চলকে ছুরিকাঘাত করেছেন বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে মনোনয়ন পেয়েছেন সাংসদ এনামুল হক। আগ থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে একাধিকবার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ গতকাল শনিবার সকালে কয়েকজন নেতা-কর্মী নিয়ে জামগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বসে ছিলেন। ওই বিদ্যালয়ের তিনি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। এ সময় বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ থেকে সাংসদ
এনামুল হকের সমর্থক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গুলবর হোসেন মুঠোফোনের মাধ্যমে ভিডিও ধারণ করেন। বিষয়টি টের পেয়ে মেয়রের লোকজন তাঁর কাছে এই বিষয়ে জানতে চান। এনিয়ে উভয়ের মধ্যে বাকবিত-ার এক পর্যায়ে মেয়রের লোকজন শিক্ষক গুলবর হোসেনকে মারপিট শুরু করেন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সাংসদ এনামুল হকের সমর্থক সর্বহারা ক্যাডার আর্ট বাবুর নেতৃত্বে কয়েকজন ক্যাডার তাহেরপুর বাজারে মেয়রের সমর্থক আওয়ামী লীগ কর্মী চঞ্চল কুমারের ওপর পাল্টা আক্রমন করেন। এসময় প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আওয়ামী লীগ কর্মী আহত হন। প্রতিপক্ষের হামলায় কাউছার হোসেন (৪৫) নামের আরেকজন শিক্ষকও আহত হন। হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে মেয়রের নেতৃত্বে বিপুল পরিমান লোকজন তাহেরপুর বাজারে আসলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়, এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে মেয়রের লোকজনের সামনে সাংসদের লোকজন টিকতে না পেরে পিছু হটে যায়। এসময় বিপুল পরিমান পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মেয়র আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করেন, পুলিশের সামনে সাংসদ এনামুলের লোকজন সশস্ত্র অবস্থায় তাঁর লোকজনের ওপর হামলা করেছে। হত্যার জন্য এক কর্মীকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করার জন্য চরমপন্থী ক্যাডারের নেতৃত্বে কিছু সন্ত্রাসী
আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওপর হামলা করেছে। শিক্ষক গুলবর হোসেনের ওপর হামলার বিষয়ে বলেন, গোপনে ভিডিও ধারণ করা নিয়ে তাঁর লোকজনের সঙ্গে শিক্ষকের বাকবিতণ্ডা হয়েছে মাত্র।তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বাক্কার মৃধা মুনসুর রহমান বলেন, দলে গ্রুপিং থাকলেও চূড়ান্ত মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর সবাই এক সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এর মধ্যে দলীয় এক কর্মীকে হত্যার জন্য ছুরিকাঘাত করে সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে চঞ্চল কুমারের মৃত্যুর সংবাদ এলাকায় পৌছামাত্রই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। বর্তমানে তাহেরপুর পৌর এলাকায় থমতমে অবস্থা বিরাজ করছে। এলাকায় যে কোন সময় ব্যাপক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটতে পারে বলে এলাকাবাসী আশংকা প্রকাশ করছেন। এছাড়াও সর্বহারা ক্যাডার আর্ট বাবু প্রকাশ্যে
এলাকায় অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করলে পুলিশ নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। পুলিশের সহস্যজনক ভুমিকায় এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে জয়লাভের জন্য এমপি এনামুল হক সর্বহারাসহ এলাকার সন্ত্রাসীদের মাঠ দখলের জন্য মাঠে নামিয়েছেন।বাগমারা থানার ওসি নাছিম আহম্মেদ বলেন, খবর পাওয়ার পরেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ পাহারা দেওয়া হয়েছে।
খবর ২৪ ঘণ্টা/এমকে