1. abir.rajshahinews@gmail.com : Abir k24 : Abir k24
  2. bulbulob83@gmail.com : bulbul ob : bulbul ob
  3. shihab.shini@gmail.com : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. omorfaruk.rc@gmail.com : khobor : khobor 24
  5. k24ghonta@gmail.com : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. omorfaruk.rc@gamail.com : omor faruk : omor faruk
  7. royelkhan700@gmail.com : R khan : R khan
  8. test11420330@mail.imailfree.cc : test11420330 :
  9. test12896658@mailbox.imailfree.cc : test12896658 :
  10. test1293098@mailbox.imailfree.cc : test1293098 :
  11. test13275105@mailbox.imailfree.cc : test13275105 :
  12. test13475213@mailbox.imailfree.cc : test13475213 :
  13. test13543551@mail.imailfree.cc : test13543551 :
  14. test13762386@mailbox.imailfree.cc : test13762386 :
  15. test13868509@email.imailfree.cc : test13868509 :
  16. test14255896@email.imailfree.cc : test14255896 :
  17. test14330478@mail.imailfree.cc : test14330478 :
  18. test15132593@mail.imailfree.cc : test15132593 :
  19. test1536634@email.imailfree.cc : test1536634 :
  20. test15379070@email.imailfree.cc : test15379070 :
  21. test15946637@inboxmail.imailfree.cc : test15946637 :
  22. test16663312@mailbox.imailfree.cc : test16663312 :
  23. test16891500@mail.imailfree.cc : test16891500 :
  24. test17576521@mail.imailfree.cc : test17576521 :
  25. test17601359@mailbox.imailfree.cc : test17601359 :
  26. test17743763@mailbox.imailfree.cc : test17743763 :
  27. test18184333@email.imailfree.cc : test18184333 :
  28. test18461371@email.imailfree.cc : test18461371 :
  29. test18678693@mail.imailfree.cc : test18678693 :
  30. test18779299@email.imailfree.cc : test18779299 :
  31. test19231963@email.imailfree.cc : test19231963 :
  32. test19762677@mail.imailfree.cc : test19762677 :
  33. test19928154@email.imailfree.cc : test19928154 :
  34. test20831644@mailbox.imailfree.cc : test20831644 :
  35. test20838901@inboxmail.imailfree.cc : test20838901 :
  36. test21813915@email.imailfree.cc : test21813915 :
  37. test22191406@mail.imailfree.cc : test22191406 :
  38. test22836094@mailbox.imailfree.cc : test22836094 :
  39. test22923208@email.imailfree.cc : test22923208 :
  40. test23265417@email.imailfree.cc : test23265417 :
  41. test2347444@mail.imailfree.cc : test2347444 :
  42. test23625427@mailbox.imailfree.cc : test23625427 :
  43. test2363463@mailbox.imailfree.cc : test2363463 :
  44. test24510302@mail.imailfree.cc : test24510302 :
  45. test2478528@email.imailfree.cc : test2478528 :
  46. test24908177@mail.imailfree.cc : test24908177 :
  47. test25305728@mailbox.imailfree.cc : test25305728 :
  48. test26154981@mailbox.imailfree.cc : test26154981 :
  49. test26401846@email.imailfree.cc : test26401846 :
  50. test26447438@inboxmail.imailfree.cc : test26447438 :
  51. test26899936@inboxmail.imailfree.cc : test26899936 :
  52. test27380861@mail.imailfree.cc : test27380861 :
  53. test28004998@inboxmail.imailfree.cc : test28004998 :
  54. test28011938@mailbox.imailfree.cc : test28011938 :
  55. test28288539@mailbox.imailfree.cc : test28288539 :
  56. test29118826@email.imailfree.cc : test29118826 :
  57. test29445101@email.imailfree.cc : test29445101 :
  58. test29513884@mail.imailfree.cc : test29513884 :
  59. test30496502@mailbox.imailfree.cc : test30496502 :
  60. test31009826@email.imailfree.cc : test31009826 :
  61. test31219618@mailbox.imailfree.cc : test31219618 :
  62. test31616110@mail.imailfree.cc : test31616110 :
  63. test31749267@inboxmail.imailfree.cc : test31749267 :
  64. test31866636@email.imailfree.cc : test31866636 :
  65. test32366529@mail.imailfree.cc : test32366529 :
  66. test32910446@email.imailfree.cc : test32910446 :
  67. test33007654@mailbox.imailfree.cc : test33007654 :
  68. test33455735@mailbox.imailfree.cc : test33455735 :
  69. test33734902@inboxmail.imailfree.cc : test33734902 :
  70. test33890875@mail.imailfree.cc : test33890875 :
  71. test34283033@mailbox.imailfree.cc : test34283033 :
  72. test34869573@mailbox.imailfree.cc : test34869573 :
  73. test35056285@inboxmail.imailfree.cc : test35056285 :
  74. test35227909@email.imailfree.cc : test35227909 :
  75. test35229007@email.imailfree.cc : test35229007 :
  76. test35623449@mailbox.imailfree.cc : test35623449 :
  77. test35630181@mailbox.imailfree.cc : test35630181 :
  78. test35686898@mail.imailfree.cc : test35686898 :
  79. test36175749@mail.imailfree.cc : test36175749 :
  80. test36341496@mail.imailfree.cc : test36341496 :
  81. test36977015@mail.imailfree.cc : test36977015 :
  82. test3751157@mailbox.imailfree.cc : test3751157 :
  83. test37658124@mailbox.imailfree.cc : test37658124 :
  84. test38122318@mailbox.imailfree.cc : test38122318 :
  85. test3827626@mailbox.imailfree.cc : test3827626 :
  86. test38612551@mailbox.imailfree.cc : test38612551 :
  87. test39194505@email.imailfree.cc : test39194505 :
  88. test39402010@email.imailfree.cc : test39402010 :
  89. test39497422@mail.imailfree.cc : test39497422 :
  90. test39643554@mail.imailfree.cc : test39643554 :
  91. test39759042@email.imailfree.cc : test39759042 :
  92. test3993488@inboxmail.imailfree.cc : test3993488 :
  93. test40382627@email.imailfree.cc : test40382627 :
  94. test41115613@mailbox.imailfree.cc : test41115613 :
  95. test41349760@email.imailfree.cc : test41349760 :
  96. test4153441@mailbox.imailfree.cc : test4153441 :
  97. test41714738@mailbox.imailfree.cc : test41714738 :
  98. test423119@mailbox.imailfree.cc : test423119 :
  99. test43207879@email.imailfree.cc : test43207879 :
  100. test44644163@mailbox.imailfree.cc : test44644163 :
  101. test45104237@mailbox.imailfree.cc : test45104237 :
  102. test4518598@mailbox.imailfree.cc : test4518598 :
  103. test45241928@inboxmail.imailfree.cc : test45241928 :
  104. test45397932@mail.imailfree.cc : test45397932 :
  105. test45999971@mail.imailfree.cc : test45999971 :
  106. test467797@mailbox.imailfree.cc : test467797 :
  107. test4726959@mailbox.imailfree.cc : test4726959 :
  108. test47614766@mail.imailfree.cc : test47614766 :
  109. test47971920@email.imailfree.cc : test47971920 :
  110. test48020819@email.imailfree.cc : test48020819 :
  111. test48246114@email.imailfree.cc : test48246114 :
  112. test48333678@mailbox.imailfree.cc : test48333678 :
  113. test48408659@mailbox.imailfree.cc : test48408659 :
  114. test48476039@email.imailfree.cc : test48476039 :
  115. test48929797@email.imailfree.cc : test48929797 :
  116. test48984676@email.imailfree.cc : test48984676 :
  117. test4928801@inboxmail.imailfree.cc : test4928801 :
  118. test49309277@mail.imailfree.cc : test49309277 :
  119. test5507623@mail.imailfree.cc : test5507623 :
  120. test5509564@mailbox.imailfree.cc : test5509564 :
  121. test5968180@mail.imailfree.cc : test5968180 :
  122. test6062590@mail.imailfree.cc : test6062590 :
  123. test6708697@mail.imailfree.cc : test6708697 :
  124. test7273044@mail.imailfree.cc : test7273044 :
  125. test7560684@email.imailfree.cc : test7560684 :
  126. test906774@mailbox.imailfree.cc : test906774 :
  127. test9557191@inboxmail.imailfree.cc : test9557191 :
  128. test974262@mail.imailfree.cc : test974262 :
সিপাহি-কর্মকর্তায় ব্যবধান ছিল - খবর ২৪ ঘণ্টা
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২২ পূর্বাহ্ন

সিপাহি-কর্মকর্তায় ব্যবধান ছিল

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৭
 বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাযজ্ঞ

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহ ও পিলখানায় নৃশংস হত্যাযজ্ঞে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এর ৪৮ ঘণ্টার মাথায় বিধ্বস্ত বাহিনীটির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, বর্তমানে লে. জেনারেল (অব.) মো. মইনুল ইসলাম। ৮ বছর পর গতকাল ওই হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্সের রায় ঘোষণা শুরু হয়েছে হাইকোর্টে। এ রায় সামনে রেখে মো. মইনুল ইসলামের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান

প্রথম আলো: পিলখানা বিদ্রোহের আট বছর পর হাইকোর্ট রায় দিতে শুরু করেছে। এতটা কালক্ষেপণ এড়ানো গেল না কেন?

মইনুল ইসলাম: এটা দুঃখজনক। আমি ঢাকায় তিন শ থেকে সাড়ে তিন শ অভিযুক্ত বলে সন্দেহ করেছিলাম। এর মধ্যে এক অংশ প্রত্যক্ষভাবে, অন্য অংশ পরোক্ষভাবে জড়িত। কিছু ছিল ইন্ধনদাতা। আর সিভিল কোর্টেও তো নথি ব্যবস্থাপনার একটা নিয়ম আছে, এর ব্যত্যয় তো করা যাবে না। কত ডকেট ফটোকপি করে তৈরি করতে হবে, সেটা আগেই কি চিন্তা করা উচিত ছিল না? প্রসিকিউশন যদি সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে চায়, তাহলে তো তাকে গোড়া থেকেই উপযুক্ত সংখ্যাসূত্র ঠিক করতে হবে। বিডিআর বিদ্রোহের রায় ঘোষণার দিন থেকে দণ্ডিতদের কারাবাসের ক্ষণগণনার কথা। অপরদিকে অস্ত্র লুণ্ঠনের শাস্তি হবে ৭ থেকে ১০ বছর। তাঁদের বিচার শুরু হলো দেরিতে। এখন যদি কেউ ১০ বছর জেল পায়, তাহলে তাঁর ৭ বছর খাটা শেষ হয়ে গেল। সুতরাং দেরি করিয়ে কী লাভ হলো? আমার মনে হয়, প্রসিকিউশন যদি আরেকটু ভেবে অগ্রসর হতো, আসামির সংখ্যাটা আরেকটু কমাত, তাহলে রায় ও তা কার্যকর করার জন্য যা দরকার, সেটা আরও আগে হয়তো পেতাম। খুনিরা তো ঠান্ডা মাথায় নিজের অফিসারদের খুন করেছে, যার সাক্ষ্যপ্রমাণ যথেষ্টভাবে বিদ্যমান। তাহলে এত দেরি কেন? কেবল পদ্ধতিগত কারণে, না কি আসামি সংখ্যা নির্ধারণে দূরদর্শিতার পরিচয় না দিয়ে?

প্রথম আলো: এ ঘটনায় কোনো বিদেশি যোগসূত্র নাকচ করছেন?

মইনুল ইসলাম: কিছু কথাবার্তা শোনা গিয়েছিল, তার ভিত্তি ছিল না। বিদেশি একটি স্নাইপার রাইফেল কোম্পানির লোকেরা স্নাইপার রাইফেল প্রশিক্ষণের জন্য আলাপ-আলোচনা করছিলেন। আগেই তাঁরা পিলখানায় এসেছিলেন। কিন্তু গোলাগুলি থামার পর হেঁটে হেঁটে তাঁরা পিলখানার বাইরে চলে যান।

প্রথম আলো: বিদ্রোহের মূল কারণ কী ছিল? সরকার বদলের কোনো গূঢ় লক্ষ্য কি ছিল বিদ্রোহী বা তাদের সমর্থক কারও?

মইনুল ইসলাম: না। আমার জানামতে কোনোভাবেই তাদের এমন কোনো লক্ষ্য ছিল না।

প্রথম আলো: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আনিসুজ্জামানের কমিটিতে আপনি ছিলেন। আপনাদের রিপোর্ট তো সবটা প্রকাশ করেননি?

মইনুল ইসলাম: অপারেশন ডাল-ভাত কর্মসূচি যেটা ছিল, সেখানে কিছু অভিযোগ ও ক্ষোভের বিষয় ছিল, সেগুলো যদি যথাসময়ে দেখা সম্ভব হতো তাহলে মনে হয় এত বড় একটি ঘটনা এড়ানো সম্ভব ছিল। আমরা যদি ধুলোময়লা কার্পেটের নিচে রেখে দিই, তাহলে একটা সময় কিন্তু তা বেরিয়ে পড়ে। কর্তৃপক্ষ এ ধরনের ক্ষোভ দেখব দেখব বলে দেখেনি। সময়ে এক ফোঁড় দিলে, পরে দশ ফোঁড় লাগে না।

প্রথম আলো: বিচারিক আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সাংসদ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগেই সিপাহিদের দাবিদাওয়া সম্পর্কে জানতেন। এরপর ঘটনার আগে লিফলেট বিলি হয়েছে। সুতরাং বিডিআর বা অন্যান্য সংস্থার গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল কি?

মইনুল ইসলাম: রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়ে যেটা বলেছেন, সেটা বিডিআর বিদ্রোহের বিচারের জন্য পরিচালিত তদ‌ন্তের কার্যপরিধিতে ছিল না। কী কারণে বিদ্রোহ, খুন, অস্ত্রাগার লুণ্ঠন হলো তা আমরা খতিয়ে দেখেছি। দাবি আদায় করা যে বিদ্রোহীদের লক্ষ্য ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ঘটনার ৪-৫ দিন আগে লিফলেট বিতরণের বিষয়টি কেন অগ্রাহ্য করা হয়েছিল, সেটা যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের বিবেচনায় নেওয়া ও সে অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল।

প্রথম আলো: মূল ব্যর্থতাটা কাদের? বিডিআরের গোয়েন্দারা কী করেছিলেন? কারণ লিফলেট বিতরণের ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছিলেন প্রয়াত মহাপরিচালক।

মইনুল ইসলাম: সেটা ঠিক। কিন্তু আমি বিডিআরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেওয়ার পর পিলখানায় সব থেকে সাজানো-গোছানো অফিস দেখেছি বিডিআরের গোয়েন্দা দপ্তর। কেউ আঁচড়টুকুও দেয়নি। মনে হয়েছে বিদ্রোহে যাওয়ার আগে তাঁরা সবকিছু গুছিয়ে গেছেন।

প্রথম আলো: ওই বিভাগের সব সাজানো থাকলে অফিসারকে কেন তারা হত্যা করল?

মইনুল ইসলাম: হত্যাকাণ্ডের কোনো বাছবিচার ছিল না। যেখানে বিদ্রোহীরা অফিসার পেয়েছে, তাকেই মেরেছে।

প্রথম আলো: সেই যে সিপাহি-অফিসার বিরোধ, তেমন একটা মনোভাব এখানেও কি দেখেছেন? সময়ের বিরতিতে বারবার এটা আমাদের তাড়া করছে, কেন? গলদ কোথায়?

মইনুল ইসলাম: অবশ্যই তেমন একটি বিষয় এখানে ছিল। সে জন্য প্রায়ই আমি বলি, সশস্ত্র বাহিনীর আমরা অফিসারগণ যারা সুশৃঙ্খল বাহিনীতে পোশাক পরে কাজ করি, আমাদের মূল শক্তি হলো সৈনিক। অফিসাররা কেবল কর্মকর্তাই নন, আমরা তাদের লিডারও বটে। শা‌ন্তি বা ক্রান্তিকালে আমরা তাদের আদেশ দিই নিজ যোগ্যতাবলে এবং তারা আদেশ পালনে পিছপা হবে না। তাই অফিসারকে নেতৃত্বের গুণাবলি সব সময় বজায় রাখতে হবে। নেতৃত্বের কোনো খারাপ বা অসাধু কাজ অধীনেরা অনুধাবন করতে পারলে তারা ঠিকই স্যালুট দেবে, কিন্তু মন থেকে সম্মান বা আদেশ পালন করবে না।

প্রথম আলো: পিলখানা বিদ্রোহের তিনটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করতে বললে কী বলবেন?

মইনুল ইসলাম: বিডিআরের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সৈনিকদের একটি মনস্তাত্ত্বিক ব্যবধান ছিল। আমি আমার অধীনদের যদি বুঝতে না পারি তাহলে তাদের দুঃখ-কষ্ট থাকবে। হ্যাঁ, তাই বলে বিদ্রোহ ও হত্যার অধিকার তাদের নেই। চিকিৎসক যখন ধৈর্য ধরে রোগীর কথা শুনে রোগ নির্ণয় করেন, তখনই অর্ধেক অসুখ সেরে যায়। পিলখানার লিফলেটে এত কড়া কথা লেখা হলো, তার বিপরীতে কোনো প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? তখনই উচিত ছিল সকল পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসা।

প্রথম আলো: কিন্তু রাষ্ট্রের অন্যান্য সংস্থা কী করেছে? কেন ঘণ্টা বাজাতে সবাই একসঙ্গে ব্যর্থ হলো?

মইনুল ইসলাম: ব্যর্থতা এড়ানোর কোনো অবকাশ নেই। সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার উচিত ছিল বিষয়টি হালকা করে না নিয়ে যথা পদক্ষেপ নেওয়া।

প্রথম আলো: যদি বলি, বিডিআর নেতারা প্রাণ দিয়ে তার মাশুল দিয়েছেন, তাহলে অন্যদের জবাবদিহি গত আট বছরেও নিশ্চিত হয়েছে কি? অপরাধের বিচার চলছে, কিন্তু ওই ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি রোধের প্রস্তুতি কোথায়?

মইনুল ইসলাম: আমি একমত যে জবাবদিহি সবারই হওয়া দরকার। এত বড় একটা ঘটনা ঘটল, কেউ কিছু আগাম জানতে পারলাম না। ঘটনার আগের দিন আমাদের সরকারপ্রধান পিলখানায় গেলেন, তারপরের দিন এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল। লিফলেটের ভাষা ছিল পরিষ্কার। তদুপরি আমরা সেটাকে কেন এত হালকাভাবে নিলাম?

প্রথম আলো: কমান্ডো অভিযান না চালানো নিয়ে আপনার কী অভিমত? এর পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত। বলা হয়, মাঠপর্যায়ের অবস্থা বুঝে ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়া জেনারেলদেরই কাজ।

মইনুল ইসলাম: দেখুন রাজনীতি সবকিছুতেই সম্পৃক্ত, যেমন: রাজনৈতিক অবস্থা, বৈদেশিক সম্পর্ক ও জননিরাপত্তা ইত্যাদি। সবই বিবেচনায় নিতে হয়। তবে জীবন বাঁচানো আমাদের সবারই দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে আমি বলব, বাংলাদেশে ‘পিলো পাসিং’ নামের যে খেলাটি জনপ্রিয়, সেটি নিষিদ্ধ হওয়া দরকার। কারণ এর সঙ্গে দায়িত্ব অন্যের কাঁধে চাপানোর একটা মনস্তত্ত্ব তৈরি হয়। সবাই বলতে অভ্যস্ত যে কাজটি ঠিক আমার নয়, ওখানে যান ইত্যাদি।

প্রথম আলো: আপনার কথার ইঙ্গিত কি এটাও যে এ কথা সামরিক নেতাদের জন্যও প্রযোজ্য?

মইনুল ইসলাম: না, তা আমি বিশ্বাস করতে চাই না। তবে অনেক নেতা কোনো কিছু পাওয়ার আশায় জিরো এরর সিনড্রোমে ভোগেন। কাজ করলে ভুল হতেই পারে। কাজ না করলে তো ভুল হওয়ার আশঙ্কাই নেই। ভুল না থাকলে তো সে দৃশ্যত সফল ব্যক্তি। এতে করে ত্বরিত সমস্যা সমাধানের বা ব্যবস্থা গ্রহণে লিডারশিপ গঠনের পথে বাধা সৃষ্টি হয়।

প্রথম আলো: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে পিলখানায় ঢুকে সব থেকে বিস্ময়কর কী নজরে এল?

মইনুল ইসলাম: ঠিক বিস্ময়কর নয়, তবে বাস্তবতা। চারদিকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও গ্রেনেড ছড়ানো-ছিটানো। তবে যেখানে অপরাধ হয়েছে, সে এলাকায় কোনো রক্তের চিহ্ন নেই, সব খুব যত্নে ধুয়েমুছে ফেলা হয়েছে। ওই দিনই সন্ধ্যায় টিভিতে পিলখানাত্যাগীদের পিলখানায় ফিরে আসার আহ্বান। কে এই ঘোষণা দিল, আমি ডিজি অথচ আমিই জানি না। প্রত্যাগতদের এই ক্রাইম সিন এলাকায় কীভাবে ঢুকব? সর্বত্র অস্ত্রশস্ত্র, গ্রেনেড পড়ে আছে। এমনকি স্কুলগুলোতেও। দ্রুত জানালাম, এখন ঢোকানো যাবে না। তখন সবার মধ্যে একটা প্রতিশোধমূলক মনোভাব কাজ করছে। বেশ কয়েক দিন ফেব্রুয়ারি মাসের শীতে ড্রিল গ্রাউন্ডে শামিয়ানা টানিয়ে রাখা হলো। পিলখানায় রেশন আছে, খাবার রান্না করার বাবুর্চি নেই, রান্নাঘরেও অস্ত্র এলোপাতাড়িভাবে রাখা। আমাদের কারও হাতে নগদ টাকা নেই। ধানমন্ডির স্টার কাবাব হোটেল থেকে বাকিতে সবার জন্য খাবারের আয়োজন করা হলো। তাদের কাপড় ছিল ব্যারাক ও বাসায়, পুরোটাই অস্ত্রমুক্ত নয়। তাই আপাতত কাজ চালানোর জন্য নরসিংদী থেকে বাকিতে গামছা-লুঙ্গি ইত্যাদি এনে তাদের সরবরাহ করা হলো। সিআইডির কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দ সাহেবের সঙ্গে আলোচনা করে ক্রমান্বয়ে বাসস্থান এলাকা অস্ত্রমুক্ত করে তাঁদেরকে তাঁদের আবাসস্থলে নিরাপদে স্থানান্তর করা হয়।

প্রথম আলো: ওই ক্রান্তিলগ্নে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাল? কী ধরনের কথাবার্তা হয়েছিল ওই কঠিন সময়ে।

মইনুল ইসলাম: বিএসএফের তৎকালীন ডিজির সঙ্গে ফোনে কথা বলি। তিনি খুবই চমৎকার মানুষ ছিলেন। আমাদের কাছে এমন রিপোর্ট ছিল যে বিডিআরের কিছু সদস্য হয়তো অস্ত্র নিয়ে ভারতে চলে যেতে পারেন। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে এ রকম কেউ এপারে এলে আপনাদের কাছে দ্রুত সোপর্দ করা হবে। বাস্তবে অবশ্য এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে আশ্বাসটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ সীমান্ত অ্যালার্ট করার সামর্থ্য তখন তো সেভাবে আমাদের ছিল না।

প্রথম আলো: সীমান্ত কত দিন অরক্ষিত ছিল? অস্ত্র ও গোলাবারুদের হিসাব মিলেছে কি?

মইনুল ইসলাম: অরক্ষিত ঠিক বলব না, কয়েক মাসের জন্য কিছুটা শিথিল ছিল। পিলখানার কিছু অস্ত্রের হদিস পাইনি। তবে তদন্ত, বিচার-প্রক্রিয়া, সীমান্ত সুরক্ষা এবং বাহিনীর জন্য নতুন আইন প্রণয়ন ও বাহিনী পুনর্গঠনের কাজ আমাকে প্রায় একসঙ্গে শুরু করতে হয়েছিল।

প্রথম আলো: মিয়ানমারে?

মইনুল ইসলাম: সেই ক্রান্তিকালে একটা কথা উঠেছিল যে মিয়ানমারের সিত্তে অঞ্চলে তাদের নৌবাহিনী চলে এসেছে। সেখানে মিগ-২৯ অবতরণ করছে। আমি তখন বিষয়টি আমাদের সামরিক বাহিনী ও ডিজিএফআইকে অবহিত করি। আমরা তখন একটি তথ্য পাই, যে সূত্রে ওই খবর আমাদের আর্মি ও ডিজিএফআইকে দেওয়া হচ্ছিল, তা ছিল অভিন্ন। কারণ কণ্ঠস্বর ছিল একই ব্যক্তির। আর ওই খবর ছিল বানোয়াট। খবরদাতারাই সীমা‌ন্তে উত্তেজনা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। সীমা‌ন্তে উত্তেজনা বিরাজ করলে আমাদের রক্ষীরা সীমা‌ন্তে ব্যস্ত থাকে এবং সেই সুযোগে মাদক চোরাচালান ঘটে। পরে আমি সিত্তে সফর করি। লক্ষ করি সেখানে স্বাভাবিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই, সন্ধ্যার পর জেনারেটর চলে। সুতরাং কী করে সেখানে মিগ-২৯-এর ঘাঁটি করা সম্ভব? সিত্তে পোর্টে তখন জরাজীর্ণ কিছু পুরোনো স্থাপনা ছিল আর অল্প কিছু নৌসেনা চোখে পড়ল। ওই সময় এ রকম তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা হয়েছিল।

প্রথম আলো: ভারত ১৯৬৮ সালে ব্রিটিশ আইন হালনাগাদ করল, তাতে তিন ধরনের আদালত এবং হত্যা ও বিদ্রোহের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হলো। আর আমরা ৩৭ বছর ডিজিকে প্রধান করে তৈরি করা একটি আদালতের বিধান রাখলাম, আপনি যাঁর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, সেখানে মাত্র সাত বছর জেলের বিধান টিকে থাকল। পিলখানার বিদ্রোহে এমন দুর্বল আইনি কাঠামোর প্রভাব নাকচ করেন কি?

মইনুল ইসলাম: না, করি না। আমি মনে করি, দুর্বল ও অপ্রতুল আইনের প্রভাব অবশ্যই রয়েছে। ২০১০ সালে আমরা যে সংশোধনী এনেছি, সেটি অনেক কার্যকর, ভারসাম্যপূর্ণ ও সময়োপযোগী। আমরা আপিলের বিধান রেখেছি। তিন সদস্যের আপিল বোর্ডে ন্যূনতম উপমহাপরিচালক পদমর্যাদার কেউ সভাপতি থাকবেন, আবার অন্য বাহিনীর আইন কর্মকর্তা ও অ্যাটর্নি জেনারেলের মনোনীত প্রতিনিধি থাকবেন। প্রথম আদালত যা শাস্তি দেবেন, তা আপিলে আর বাড়বে না, বরং বেশি দিলে কমানো যাবে। আমি মনে করি, এ ধরনের আপিলের সুযোগ সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, বিচারক ও আপিল বোর্ডের জবাবদিহিতে ভারসাম্য এনেছে।

প্রথম আলো: কিন্তু ২০১০ সালের সংশোধনীতে ৩ বা ৫ জন সামরিক অফিসার বা তার বাইরের কর্মকর্তাদের দ্বারা মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ার বিধান করেছেন। কিন্তু ভারতে এটা নেই। বিএসএফের (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী) নির্বাহীরা সবাই পুলিশ অফিসার। তাই প্রশ্ন আছে।

মইনুল ইসলাম: আপনি ভালো প্রশ্ন করেছেন এবং অনেকেই এটা বলেন। মনে রাখতে হবে আমাদের বিজিবি কিন্তু একটি আধাসামরিক বাহিনী কিন্তু বিএসএফ তা নয়। ভারতের সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) আধাসামরিক বাহিনী, সেখানে আর্মি থেকে অফিসাররা আসেন। তাদের আইনটাও ভিন্ন।

প্রথম আলো: ভারতে সরকারিভাবে ওই দুটোই আধাসামরিক বাহিনী হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু দুটোর নেতৃত্বে আইপিএস অর্থাৎ পুলিশ অফিসাররা রয়েছেন। কখনো এর ব্যত্যয় ঘটেনি বলে জানি। বরং ইপিআরের ধারাবাহিকতায় আমরা সামরিক অফিসার রেখেছি, আজকের পাকিস্তান রেঞ্জার্সের আইনেও তা-ই দেখি।

মইনুল ইসলাম: ভারতে যেটা দুটি বাহিনী দিয়ে করছে, আমরা সেটা একটি বাহিনী দিয়ে করছি, এটি তো আমাদের সফলতা। শান্তি ও ক্রান্তিকালে বিজিবির দ্বৈত ভূমিকার কারণেই এই ব্যবস্থা।

প্রথম আলো: ডিজির ও তাঁর কর্তৃক নির্ধারিত প্রতিনিধির নেতৃত্বাধীন আদালত প্রায় ১০ হাজার বিডিআর জওয়ানের বিচার করলেন। ৬ হাজার মানুষ দণ্ডিত হলেন। কেউ উচ্চ আদালতে যেতে পারলেন না।

মইনুল ইসলাম: এটা আইন দ্বারা বারিত।

প্রথম আলো: শাহদীন মালিক আমাদের বলেছেন, তাঁর কাছে আপনাদের সিদ্ধা‌ন্তে সংক্ষুব্ধ অনেকেই এসেছিলেন। আধুনিক বিশ্বে একটা বিবর্তন চলছে। তাই ভারতের হাইকোর্ট বিএসএফ কোর্টের রায়ের বৈধতা যাচাই করছেন।

মইনুল ইসলাম: আপনি যে বিবর্তনের কথা বলছেন, সেটা নীতিগতভাবে মেনে নিতে আপত্তি নেই। তবে সেটা স্থান-কাল-পাত্রভেদে ভিন্ন হবে, সেটাই স্বাভাবিক

প্রথম আলো: আপনি ডিজি থাকতে চারটি সেক্টরের চারটি ব্যাটালিয়নের বিদ্রোহের বিচারের রায় দিয়েছিলেন। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

মইনুল ইসলাম: অনেক সেক্টরে বেশ কয়েকটি বিদ্রোহের বিচারিক প্রক্রিয়াও আমি শুরু করেছিলাম। একসময় দেশের প্রয়োজনে আমাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সিজিএস হিসেবে বদলির সিদ্ধান্ত হয়। চারটি রায় দিতে অভিযুক্ত তথা বাহিনীর সংবেদনশীলতা ও এই রায়ের সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য কী হবে, সেটা বিবেচনায় নিয়েছিলাম। মহাপরিচালক হিসেবে সাবেক বিডিআর সদস্যদের আমি বলেছি, সঠিক তথ্য দাও, সঠিক বিচার পাবে। ঢাকার বাইরে গুটিকয়েক ব্যাটালিয়ন ছাড়া প্রায় সব স্থানেই অফিসারদের উপদেশ-অনুরোধ-আদেশ অমান্য করা হয়েছে। অস্ত্রাগার থেকে অবৈধভাবে অস্ত্র বাইরে চলে গেছে। সীমান্ত তখন নাজুক ছিল। আমরা ঠিক করি, আগে সীমান্ত পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। ব্যাটালিয়নগুলোতে তথ্যপ্রবাহও ভালো ছিল। তা ছাড়া ঢাকার পিলখানায় অনেক ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। আবেগও ছিল প্রবল এবং অনেকের মধ্যে প্রতিশোধপরায়ণতার আবেগ ছিল। সে সময় একটা দাবিও ছিল, কোর্ট মার্শালে সেনা আইনে বিডিআর বিদ্রোহের বিচারের। পরে আমরা সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্সের মাধ্যমে একটি স্পষ্ট দিকনির্দেশনা পাই। বিচার যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, সে জন্য আমি ভেবেছি, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মনে ন্যায়বিচার লাভের আস্থা তৈরি করা দরকার। পরবর্তী বিচারকার্যের জন্য যাতে একটি উদাহরণ তৈরি হয়। তাই বিদ্রোহ ও হত্যাকা‌ণ্ডের মূল ঘাঁটি পিলখানার বিচারকার্য পরে করার পরিকল্পনা করি। কারণ হত্যা ও অস্ত্র আইনে অপর মামলার তদন্ত প্রক্রিয়াধীন ছিল।

চারটি সেক্টরের রায়ের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেওয়ার পরও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আসামি খালাস পেয়েছেন। কারণ আইন হলো স্বেচ্ছায় কেবল দোষ স্বীকার করলেই হবে না, প্রসিকিউশনকে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়ে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে।

প্রথম আলো: বিডিআরের আদালতে দোষ স্বীকার করেও খালাস পাওয়া জওয়ানের সংখ্যা কত হবে?

মইনুল ইসলাম: আমার ধারণা ৫ শতাংশের বেশিহবে।  

প্রথম আলো: কিন্তু আপনি স্বীকার করবেন যে কোর্ট মার্শাল বা সেনা প্রশাসনের তরফে অবিচার বা কখনো ত্রুটিপূর্ণ বা প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তের অতীত ইতিহাস আমাদের রয়েছে।

মইনুল ইসলাম: সেটা আমি স্বীকার করি। নিশ্চয় অবিচারের উদাহরণ আছে। ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকা‌ণ্ডের পর গঠিত কোর্ট মার্শালে বিচারের নামে প্রহসন কী করে হয় তা আমি দেখেছি।

প্রথম আলো: ১৯৮৯ সালে হিমাচল প্রদেশ থেকে বাংলাদেশে তিন জোড়া গরু চোরাচালানের দায়ে এক বিএসএফ জওয়ান চাকরিচ্যুত হন। তাঁর দায়ের করা রিটে হিমাচল প্রদেশের হাইকোর্ট বললেন, যেখানে বিনা কারণে ও আইনি কর্তৃত্বহীন আদেশ হবে সেখানে হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করবেন। কেন আমরা বাংলাদেশে এ রকম রিট চলতে দেব না? এই বন্ধ দুয়ার কি খুলব না?

মইনুল ইসলাম: আগেই বলেছি, বিবর্তন তো চলমান প্রক্রিয়া। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে অনেকবার গণতন্ত্র হোঁচট খেয়েছে। আমরা ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হচ্ছি। স্বাধীনতা ও দায়িত্ববোধ দুটো একসঙ্গে যেতে হবে। বিজিবির বর্তমান আইনে বাহিনীর কাঠামোর মধ্যেই আপিলের বিধান আছে। এখানে শাস্তিদানের ক্ষেত্রে সহনশীলতার বিষয়টি বিবেচনায়ছিল।

প্রথম আলো: এত বিপুলসংখ্যক প্রশিক্ষিতের পুনর্বাসনের কথা ভেবেছেন কি? দীর্ঘ বেকারত্বে তারা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে? ইংল্যান্ডসহ অনেক দেশ এদের পুনর্বাসনে আইন করেছে। আপনাদের নিরুদ্বেগ মনেহয়।

মইনুল ইসলাম: আমাদের স্বাভাবিক উদ্বেগ আছে। যারা অনধিক সাত বছর জেল খেটেছে, তারা ছাড়া পেয়েছে বা পাচ্ছে। দেশে কর্মসংস্থানের ঘাটতি রয়েছে। তবে আমি কিছু চাকরিরত ব্যক্তির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। তারা সবাই নিজ কর্মেরজন্য অনুতপ্ত।

প্রথম আলো: আপনার বড় সাফল্য বলুন। বড় ব্যর্থতা কী ছিল?

মইনুল ইসলাম: আমি সরকারের আস্থাভাজন হয়ে দায়িত্ব পেয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ আমি করিনি, কিন্তু বিদ্রোহ-পরবর্তী মহাপরিচালকের দায়িত্বভার পালন করার ওই সময়টা ছিল আমার জন্য মুক্তিযুদ্ধ। একটি কার্যকর বাহিনী পুনর্গঠনে আমি ঐকান্তিক চেষ্টা করেছি।

আর ব্যর্থতা বলতে ঢাকায় আবেগতাড়িত হয়ে গুটিকয়েক অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে কিছুটা বাড়াবাড়ি ঘটেছিল। যেখানে বল প্রয়োগের দরকার ছিল না, সেখানে বল প্রয়োগ হয়েছে। ঢাকার ঘটনাবলির তদ‌ন্তে আমি যদি আরও বেশি সময় দিতে পারতাম, তাহলে আরও ভালো হতো।

প্রথম আলো: যেকোনো শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বিপদকেই সুপ্রিম টেস্টের সময় ধরা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে কি আপনি সক্ষম হয়েছিলেন? আপনি কতটা আপস করেছিলেন?

মইনুল ইসলাম: যখনই অভিযোগ পেয়েছি, তখনই তার দায়িত্ব বদলে দিয়েছি। এ রকম তিন-চারজনের বিষয়ে ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়ার পর আর কিছু হয়নি। আপনজনকে হারালে একজনের মধ্যে একটা প্রতিশোধস্পৃহা কাজ করে। এখানে একটা বড় দুর্বলতা আমি মানি। আসলে সেই সময়ে অগ্রাধিকার ঠিক করাও দুরূহ ছিল। ঢাকার চেয়ে সীমান্তে মনোযোগ দিয়েছিলাম বেশি। সেসব বিডিআর স্থাপনা সেনা প্রহরায় চলে গিয়েছিল। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর বিভিন্ন সেক্টরে যাই এবং সেখানে আমি ডিজি হিসেবে সেনা প্রহরা ছাড়া বিজিবি প্রহরায় রাত কাটাই। এতে বাহিনীর আস্থা ফেরাতে সক্ষম হই।

প্রথম আলো: আপনি ডিজি থাকতে এমন একটা ধারণা ছিল যে হয়তো নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা জওয়ানরা নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। তখন এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা কঠিন ছিল।এখন কিছু বলবেন কি?

মইনুল ইসলাম: পিলখানায় ব্যক্তিবিশেষের অতি আগ্রহে কিছু বাড়াবাড়ি হয়েছে, আবার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে এটা ঘটেনি।

প্রথম আলো: এটা কি সত্য যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক আপনাকে ফোন করে বলেছিলেন যে রাতে আর্তনাদের শব্দে আবাসিক হলেরছাত্ররা ভীত ছিল।

মইনুল ইসলাম: তারা কিছুটা ভয় পেয়েছিল। নিউমার্কেট গেটের পাশে বিডিআরের একটি ভবনে কিছু অভিযুক্ত বন্দী রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে একজন পাচক ছিল, ভিডিওতে যাকে মাথায় পট্টি, দুই হাতে দুই বন্দুক ও কোমরে গ্রেনেড বাঁধা দেখা যায়। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে নিজেকে শনাক্ত করতে রাজি হচ্ছিল না। পরে তার বাবাকে সেখানে নেওয়া হয়। তার বাবাই তাকে চড় মারেন ও পরে ছেলের দুষ্কর্মে লজ্জিত বাবা ছেলেকে শনাক্ত করেন।

প্রথম আলো: পোশাক ও আইন পরিবর্তনের আগেই আপনি পোশাক পরেছিলেন, বিজিবির ডিজি হিসেবে ঈদ কার্ড বিলি করে কিছুটা সমালোচিত হন। সেটা অসাবধানতা ছিল?

মইনুল ইসলাম: অসাবধানতা বলব না। বিষয়টিতে উচ্চপর্যায়ে নীতিগত মৌখিক অনুমোদন ছিল। আমি পরেছিলাম, যাতে এর একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়। এখন মনে হয় ওভাবে পোশাক পরার কারণেই আমি বিজিবির পোশাক বদলাতে সক্ষম হয়েছিলাম। তবে দুঃখ হয় এটা দেখে যে ওই দেখুন (দেয়ালে ঝোলানো) আমি আপাদমস্তক বিজিবির র‌্যাঙ্কে একটা সবুজ ক্যাপ পরে আছি। সেনাবাহিনীতে কেউ কর্নেল র‌্যাঙ্কে উন্নীত হলে, তখন তিনি নিজ কোরের ক্যাপ ব্যারেট (সেনাদের বিশেষ টুপি) বাদ দিয়ে গভীর নীল একটা ক্যাপ ব্যারেট পরিধান করেন। কারণ কর্নেল পদবির ওপরে সবাই স্টাফ পর্যায়ে চলে আসে। কিন্তু বিজিবিতে কোনো ‘কোর’ নেই, সবাই ফাইটিং কোর। তাই বিজিবিতে আমি এই ক্যাপ পরতাম। কিন্তু আমি চলে আসার পর এটা বদলানো হয়েছে। সেনাবাহিনীতে ফুল কর্নেল হওয়ার পরের ক্যাপটা বিজিবিতে পরা চালু হয়েছে। বিজিবিতে পদাতিক, সাঁজোয়া, সিগন্যালস বলে কিছু নেই, সবাই একই ফাইটিং। তাই আমি মনে করি সৈনিক থেকে মহাপরিচালক পর্যন্ত সবারই একই ক্যাপ ব্যারেট থাকলেই ভালো হতো। আমি কিন্তু অনুমোদন নিয়ে ওটা বদল করেছিলাম, হয়তো আমার আসার পরে ওই সিদ্ধান্ত বদলানো হয়েছে। আমি বিজিবিতে সশস্ত্র বাহিনীর কালচার নিতে চাইনি, বিজিবি তার দীর্ঘদিনের অর্জিত নিজ চিন্তা, চেতনা, কালচারে চলাটাই ভালো।

প্রথম আলো: গণমাধ্যমের তখনকার ভূমিকা সম্পর্কে বলুন।

মইনুল ইসলাম: গণমাধ্যম দুপক্ষের কথাই বলবে, কিন্তু প্রথম দুদিন এক পক্ষের বিষয়টিই প্রাধান্যে এসে গিয়েছিল। কিছু বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। তবে মিডিয়ার ফুটেজ খুব কার্যকর হয়েছে। তখনো আমি ধন্যবাদ দিয়েছি, এখনো ধন্যবাদ জানাই। নিহত ৭৪ জনের লাশের হিসাবে একটু গরমিল হয়েছিল। এর কারণ ঘাতকেরা হত্যার পরে কিছু লাশ পুঁতে তার ওপর গ্রাউন্ড প্যারেডের জন্য আনা গাঁদা ফুলের গাছ লাগিয়ে দিয়েছিল। আমরা কিছু সময় তা বুঝতে পারিনি। স্থানীয় বাড়িঘরের লোকদের তা নজরে এলেও দুঃখজনক ছিল, তারা সে খবরটুকু আমাদের দেয়নি। তবে ফায়ার ব্রিগেডকে স্যালুট জানাই। তারা দেশপ্রেম, মানবতা ও পরম মমতায় দায়িত্ব পালনের অসাধারণ নজির স্থাপন করে।

প্রথম আলো: মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসেও যেখানে আমরা ৫৭ জন সেনা অফিসার হারাইনি, কিন্তু তাঁদের হত্যার বিচারে দীর্ঘসূত্রতাই ঘটল? হাইকোর্টের রায় পেতে আট বছর লাগল, এরপর আপিল বাকি।

মইনুল ইসলাম: মুক্তিযুদ্ধ নয়, বিশ্বের সামরিক ইতিহাসে কখনো একটি স্থানে এত বিপুলসংখ্যক সেনা কর্মকর্তা শহীদ হননি।

প্রথম আলো: সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৈনিকদের দূরত্ব ঘোচাতে করণীয় কী?

মইনুল ইসলাম: আমার জানামতে যেখানে জৌলুশ আসবে, যেখানে ভোগের সম্ভার বেড়ে যাবে, সেখানে সৈনিক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হবে। এটা কি ভারতীয়, কি ব্রিটিশ, বিশ্বের সব দেশের জন্য একই। এই দূরত্বের আশঙ্কা তৈরি হয়, যদি একটি বাণিজ্যিক মনোভাব এসে পড়ে। এ ধরনের মনোভাব থেকে আমাদের বাহিনীগুলোকে সর্বদা মুক্ত রাখতে হবে। তাদের সাধারণ মানুষের মতো থাকতে হবে। চূড়ান্ত বিচারে বাহিনীসমূহের সাফল্য নির্ভর করে জনগণের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কতটুকু, তার ওপর।

প্রথম আলো: সিভিল-মিলিটারি সম্পর্ক কেমন যাচ্ছে?

মইনুল ইসলাম: এই সম্পর্ক আগের থেকে অনেক ভালো হয়েছে। অনেকে যদিও বলেন, প্রলম্বিত শা‌ন্তি একটি বড় আকারের স্ট্যান্ডিং আর্মির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সাম্প্রতিক কালে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীতে কার্যকর ও প্রযুক্তিসমৃদ্ধ অস্ত্রশস্ত্র কেনা হয়েছে, এটা সন্তোষজনক। কিন্তু এর কোনো কিছুই কাজ দেবে না, যদি না অফিসার-সৈনিক সম্পর্ক উন্নত হয়। জাতিসংঘ শা‌ন্তিরক্ষী বাহিনীতে এ রকম হৃদ্যতাপূর্ণ থাকার নজির তৈরি হয়েছে।

প্রথম আলো: কিন্তু পোশাকের রং বদলিয়ে কি একটা উল্লেখযোগ্য গুণগত পরিবর্তন ঘটেছে?

মইনুল ইসলাম: না, এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে না। আগের শিক্ষা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। প্রশিক্ষণে পরিবর্তন আনতে হবে। সীমান্তচৌকিগুলোকে আরও কার্যকর করতে হবে। নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে আরও বিকেন্দ্রীকরণ লাগবে। সীমান্তচৌকিতে কী ঘটছে, সেটা যদি ডিজিকে খবর নিতে হয়, তাহলে হবে না। বিজিবির ব্যাটালিয়ন সদর ও সেক্টর-রিজিয়ন সদর দপ্তরসমূহকে নিজ অর্পিত দায়িত্ব স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করতে হবে

প্রথম আলো: বিজিবির নিজস্ব অফিসাররা ডিজিসহ উচ্চ পদপ্রত্যাশী হতে পারেন, এর যুক্তি আছে?

মইনুল ইসলাম: সেখানে একটি পয়েন্ট আছে। সেনাবাহিনীতেও এটা আছে। যদি কোনো সৈনিক মনে করেন, তিনি অফিসার হবেন, তাহলে প্রশিক্ষণ নিয়ে সে পথ তাঁর জন্য খোলা আছে। সৈনিক হিসেবে চাকরি শুরু করে মেজর জেনারেল হওয়ার নজির কিন্তু আমাদের আছে। বিজিবিতেও সেই বিধান আছে। একজনকে এগিয়ে যেতে তাকেও চেষ্টা করতে হবে।

[সাক্ষাৎকার গ্রহণ ২৪ নভেম্বর, ২০১৭, ঢাকা]

 

লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মইনুল ইসলামের সাক্ষাৎকার

পোস্টটি শেয়ার করুন

এ ধরনের আরো খবর

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By SISA HOST