1. abir.rajshahinews@gmail.com : Abir k24 : Abir k24
  2. bulbulob83@gmail.com : bulbul ob : bulbul ob
  3. shihab.shini@gmail.com : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. omorfaruk.rc@gmail.com : khobor : khobor 24
  5. k24ghonta@gmail.com : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. omorfaruk.rc@gamail.com : omor faruk : omor faruk
  7. royelkhan700@gmail.com : R khan : R khan
  8. test11420330@mail.imailfree.cc : test11420330 :
  9. test12896658@mailbox.imailfree.cc : test12896658 :
  10. test1293098@mailbox.imailfree.cc : test1293098 :
  11. test13275105@mailbox.imailfree.cc : test13275105 :
  12. test13475213@mailbox.imailfree.cc : test13475213 :
  13. test13543551@mail.imailfree.cc : test13543551 :
  14. test13762386@mailbox.imailfree.cc : test13762386 :
  15. test13868509@email.imailfree.cc : test13868509 :
  16. test14255896@email.imailfree.cc : test14255896 :
  17. test14330478@mail.imailfree.cc : test14330478 :
  18. test15132593@mail.imailfree.cc : test15132593 :
  19. test1536634@email.imailfree.cc : test1536634 :
  20. test15379070@email.imailfree.cc : test15379070 :
  21. test15946637@inboxmail.imailfree.cc : test15946637 :
  22. test16663312@mailbox.imailfree.cc : test16663312 :
  23. test16891500@mail.imailfree.cc : test16891500 :
  24. test17576521@mail.imailfree.cc : test17576521 :
  25. test17601359@mailbox.imailfree.cc : test17601359 :
  26. test17743763@mailbox.imailfree.cc : test17743763 :
  27. test18184333@email.imailfree.cc : test18184333 :
  28. test18461371@email.imailfree.cc : test18461371 :
  29. test18678693@mail.imailfree.cc : test18678693 :
  30. test18779299@email.imailfree.cc : test18779299 :
  31. test19231963@email.imailfree.cc : test19231963 :
  32. test19762677@mail.imailfree.cc : test19762677 :
  33. test19928154@email.imailfree.cc : test19928154 :
  34. test20831644@mailbox.imailfree.cc : test20831644 :
  35. test20838901@inboxmail.imailfree.cc : test20838901 :
  36. test21813915@email.imailfree.cc : test21813915 :
  37. test22191406@mail.imailfree.cc : test22191406 :
  38. test22836094@mailbox.imailfree.cc : test22836094 :
  39. test22923208@email.imailfree.cc : test22923208 :
  40. test23265417@email.imailfree.cc : test23265417 :
  41. test2347444@mail.imailfree.cc : test2347444 :
  42. test23625427@mailbox.imailfree.cc : test23625427 :
  43. test2363463@mailbox.imailfree.cc : test2363463 :
  44. test24510302@mail.imailfree.cc : test24510302 :
  45. test2478528@email.imailfree.cc : test2478528 :
  46. test24908177@mail.imailfree.cc : test24908177 :
  47. test25305728@mailbox.imailfree.cc : test25305728 :
  48. test26154981@mailbox.imailfree.cc : test26154981 :
  49. test26401846@email.imailfree.cc : test26401846 :
  50. test26447438@inboxmail.imailfree.cc : test26447438 :
  51. test26899936@inboxmail.imailfree.cc : test26899936 :
  52. test27380861@mail.imailfree.cc : test27380861 :
  53. test28004998@inboxmail.imailfree.cc : test28004998 :
  54. test28011938@mailbox.imailfree.cc : test28011938 :
  55. test28288539@mailbox.imailfree.cc : test28288539 :
  56. test29118826@email.imailfree.cc : test29118826 :
  57. test29445101@email.imailfree.cc : test29445101 :
  58. test29513884@mail.imailfree.cc : test29513884 :
  59. test30496502@mailbox.imailfree.cc : test30496502 :
  60. test31009826@email.imailfree.cc : test31009826 :
  61. test31219618@mailbox.imailfree.cc : test31219618 :
  62. test31616110@mail.imailfree.cc : test31616110 :
  63. test31749267@inboxmail.imailfree.cc : test31749267 :
  64. test31866636@email.imailfree.cc : test31866636 :
  65. test32366529@mail.imailfree.cc : test32366529 :
  66. test32910446@email.imailfree.cc : test32910446 :
  67. test33007654@mailbox.imailfree.cc : test33007654 :
  68. test33455735@mailbox.imailfree.cc : test33455735 :
  69. test33734902@inboxmail.imailfree.cc : test33734902 :
  70. test33890875@mail.imailfree.cc : test33890875 :
  71. test34283033@mailbox.imailfree.cc : test34283033 :
  72. test34869573@mailbox.imailfree.cc : test34869573 :
  73. test35056285@inboxmail.imailfree.cc : test35056285 :
  74. test35227909@email.imailfree.cc : test35227909 :
  75. test35229007@email.imailfree.cc : test35229007 :
  76. test35623449@mailbox.imailfree.cc : test35623449 :
  77. test35630181@mailbox.imailfree.cc : test35630181 :
  78. test35686898@mail.imailfree.cc : test35686898 :
  79. test36175749@mail.imailfree.cc : test36175749 :
  80. test36341496@mail.imailfree.cc : test36341496 :
  81. test36977015@mail.imailfree.cc : test36977015 :
  82. test3751157@mailbox.imailfree.cc : test3751157 :
  83. test37658124@mailbox.imailfree.cc : test37658124 :
  84. test38122318@mailbox.imailfree.cc : test38122318 :
  85. test3827626@mailbox.imailfree.cc : test3827626 :
  86. test38612551@mailbox.imailfree.cc : test38612551 :
  87. test39194505@email.imailfree.cc : test39194505 :
  88. test39402010@email.imailfree.cc : test39402010 :
  89. test39497422@mail.imailfree.cc : test39497422 :
  90. test39643554@mail.imailfree.cc : test39643554 :
  91. test39759042@email.imailfree.cc : test39759042 :
  92. test3993488@inboxmail.imailfree.cc : test3993488 :
  93. test40382627@email.imailfree.cc : test40382627 :
  94. test41115613@mailbox.imailfree.cc : test41115613 :
  95. test41349760@email.imailfree.cc : test41349760 :
  96. test4153441@mailbox.imailfree.cc : test4153441 :
  97. test41714738@mailbox.imailfree.cc : test41714738 :
  98. test423119@mailbox.imailfree.cc : test423119 :
  99. test43207879@email.imailfree.cc : test43207879 :
  100. test44644163@mailbox.imailfree.cc : test44644163 :
  101. test45104237@mailbox.imailfree.cc : test45104237 :
  102. test4518598@mailbox.imailfree.cc : test4518598 :
  103. test45241928@inboxmail.imailfree.cc : test45241928 :
  104. test45397932@mail.imailfree.cc : test45397932 :
  105. test45999971@mail.imailfree.cc : test45999971 :
  106. test467797@mailbox.imailfree.cc : test467797 :
  107. test4726959@mailbox.imailfree.cc : test4726959 :
  108. test47614766@mail.imailfree.cc : test47614766 :
  109. test47971920@email.imailfree.cc : test47971920 :
  110. test48020819@email.imailfree.cc : test48020819 :
  111. test48246114@email.imailfree.cc : test48246114 :
  112. test48333678@mailbox.imailfree.cc : test48333678 :
  113. test48408659@mailbox.imailfree.cc : test48408659 :
  114. test48476039@email.imailfree.cc : test48476039 :
  115. test48929797@email.imailfree.cc : test48929797 :
  116. test48984676@email.imailfree.cc : test48984676 :
  117. test4928801@inboxmail.imailfree.cc : test4928801 :
  118. test49309277@mail.imailfree.cc : test49309277 :
  119. test5507623@mail.imailfree.cc : test5507623 :
  120. test5509564@mailbox.imailfree.cc : test5509564 :
  121. test5968180@mail.imailfree.cc : test5968180 :
  122. test6062590@mail.imailfree.cc : test6062590 :
  123. test6708697@mail.imailfree.cc : test6708697 :
  124. test7273044@mail.imailfree.cc : test7273044 :
  125. test7560684@email.imailfree.cc : test7560684 :
  126. test906774@mailbox.imailfree.cc : test906774 :
  127. test9557191@inboxmail.imailfree.cc : test9557191 :
  128. test974262@mail.imailfree.cc : test974262 :
সেই ভাষণের অজানা ইতিহাস - খবর ২৪ ঘণ্টা
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৯ অপরাহ্ন

সেই ভাষণের অজানা ইতিহাস

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৭

নূরে আলম সিদ্দিকী: স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের বক্তৃতাটি জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্বসম্পদ (মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড) হিসেবে স্বীকৃতি লাভ আমাদের জাতির জন্য একটি অনন্যসাধারণ সম্মাননা। এটা বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বকে আন্তর্জাতিকভাবে ভিন্নমাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে।

আমাদের চিরচেনা মুজিব ভাইয়ের অন্তর্নিহিত অভিব্যক্তিকে ‘উদ্যত উদ্গত পূর্ণায়ত পদ্মটির মতো’ জগত্বাসীর কাছে প্রতিভাত করেছে। মরুভূমির নিষ্কলুষ সূর্যোদয়ের মতো এটি সত্য, শব্দচয়ন, বাচনভঙ্গি ও দেহের ভাষায় এটি অনন্য সাধারণ ও অবিস্মরণীয় ইতিহাস প্রসিদ্ধ ভাষণগুলোর অন্যতম। ওইদিন বঙ্গবন্ধু মঞ্চে আসার আগে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃচতুষ্ঠয় মঞ্চে আসেন এবং মাইকের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। এর আগে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়িতে ৭ মার্চের প্রদেয় ভাষণের ওপর নানা ধরনের মতামত উপস্থাপিত হয়। এটা ইতিহাস-স্বীকৃত, তখন ছাত্রলীগ দুটি আলাদা গ্রুপে সরাসরি বিভক্ত না হলেও রাজনৈতিক মতামত, চিন্তাচেতনা, মননশীলতা ও মানসিকতায় যে বিভাজন সেটা শুধু ছাত্রসমাজই নয় রাজনৈতিক অঙ্গনের সর্বস্তরে সর্বজনবিদিত ছিল। সমাজতান্ত্রিক মতধারায় উজ্জীবিত গোষ্ঠীটি নির্বাচনকে প্রহসন মনে করতেন, বন্দুকের নলকেই ক্ষমতার মূল উৎস ভাবতেন, নিষ্ফল নির্বাচনের আগেই একমাত্র সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমেই স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব বিশ্বাস করে তারা সশস্ত্র বিপ্লবের স্লোগান দিতেন, তাদের কণ্ঠে বজ্র নিনাদে উচ্চারিত হতো— ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’; ‘নির্বাচন নির্বাচন বর্জন বর্জন’, ‘ভোটের বাক্সে লাথি মারো বাংলাদেশ স্বাধীন কর…। ’ তার প্রতিউত্তরে আমরা (সত্যি বলতে আমরা তখন নিদারুণভাবে সংখ্যালঘিষ্ঠ) সমগ্র সত্তায়, উপলব্ধিতে, চিন্তাচেতনায়, প্রত্যয়ে, মননশীলতায় ও মানসিকতায় লালন করতাম— বন্দুকের নল নয়, বাংলার জাগ্রত জনতাই সব ক্ষমতার উৎস এবং স্বাধীনতার চেতনাকে পরিপূর্ণ করে পরাধীনতার বক্ষ বিদীর্ণ করতে হলে একটা নিরঙ্কুশ গণম্যান্ডেট প্রয়োজন; আর সত্তরের নির্বাচনই সেই ম্যান্ডেট প্রদান করতে পারে। আমার বলতে কোনো দ্বিধা নেই, কারণ এটি ঐতিহাসিক সত্য, বঙ্গবন্ধু এ দুটি চিন্তাকেই একইভাবে উৎসাহিত ও প্রণোদনা প্রদান করতেন। প্রায়শই আমাকে প্রত্যয়দৃঢ় কণ্ঠে বলতেন, ‘নির্বাচনে আমাদের যেতে হবেই, ম্যান্ডেট আমাদের জন্য অনিবার্য, তোদের এই বিশ্বাসটাই সত্য। ওরা চিৎকার করছে করতে দে। নির্বাচন এড়িয়ে মুজিবুর রহমান কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদীর পথে পা রাখবে না। ক্যান্টনমেন্টের বাঙালি অংশটুকু পরিপূর্ণভাবে আমার সঙ্গে থাকবে, কিন্তু জনগণ তাতে বিভ্রান্ত হবে। প্রতিপক্ষ আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করে জনসমর্থনে একটা বিরাট ফাটল ধরাতে সক্ষম হবে। ’ তিনি আমাকে আরও স্পষ্ট করে বলতেন— ‘তুই তো জানিস, আমি গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর হাতেগড়া একজন কর্মী, একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও আমি শেখ মুজিব কাগমারি সম্মেলনে মওলানা (ভাসানী) সাহেবের সঙ্গে না থেকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পক্ষ অবলম্বন করেছিলাম। আমার জন্য এ সিদ্ধান্ত আমার গণতান্ত্রিক মানসিকতারই ফসল। ’ তিনি আবেগাপ্লুত হৃদয়ে বলতেন— ‘আলম, আমি তোকে স্নেহ করি, তোর মধ্যে যে গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ সেটাকেও বুঝতে পারি। তোর ভাষা আছে, আবেগ আছে, হৃদয়ের উচ্ছ্বাস আছে, তোর প্রতি আমার দোয়া ও সমর্থন রয়েছে। তুই সারা বাংলাদেশ চষে বেড়া। ’ এখানে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক, আমাকে ছাত্রলীগের সভাপতি বানানোর ব্যাপারে তিনি অনড় ছিলেন, আপসহীন ছিলেন। নেতার সমর্থন ও শুভেচ্ছাসহ ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পর সারা বাংলাদেশে দিগন্তবিস্তৃত পথ চারণের মতো ঘুরে বেড়ানোর লক্ষ্যে আমার জন্য উন্মোচিত হয়ে যায়। সারা বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমি চারণকবির মতো, গণতন্ত্রের পক্ষে অবিরত গান গেয়ে ফিরতাম। আমি নিশ্চিত, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের প্রধান নেতা সিরাজুল আলম খান ভাইকেও তিনি ভীষণ স্নেহ করতেন এবং তার পথে এগিয়ে যেতে তাকেও একইভাবে উৎসাহিত করতেন। এ দ্বিমুখী সমর্থন আমাকে অনেক সময় স্তম্ভিত করত, দ্বিধা-শঙ্কিত করত, আমার চেতনাকে-বিশ্বাসকে অনেক সময় প্রচণ্ডভাবে আঘাত করত। কিন্তু এটা একটা অদ্ভুত ম্যাজিক, বঙ্গবন্ধুর কাছে গেলে সবকিছুই যেন ঠিকঠাক হয়ে যেত। আমার প্রতি তাঁর সমর্থনে কোনো ঘাটতি আছে, তা তো মনে হতোই না, বরং প্রতিটি দিনই আমার প্রতি প্রদত্ত সমর্থন বৃদ্ধি পেত বলেই আমার মনে হতো এবং আজও মনে হয়। আমাদের উভয়ের প্রতি সমর্থনই তাঁর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতা অথবা কৌশলগত ছিল কিনা, সে বিষয়ে আমার ভাবনাটাকে অনুদঘাটিত রেখেই ইতিহাসের কাছে তার বিচারভার দিয়ে রাখলাম। এ কথাগুলোর অবতারণা করলাম এ কারণে যে, সত্তরের নির্বাচনের নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেট তাঁর হাতে না থাকলে ৭ মার্চের ভাষণ প্রদানের ক্ষেত্রটি প্রস্তুত হতো না এবং কোনোভাবেই তাঁর অথরিটির দাবিদারও তিনি হতে পারতেন না। ৭ মার্চের ভাষণটির বিশ্ব স্বীকৃতির পর্যালোচনায় তাই অনিবার্যভাবেই নির্বাচনের ম্যান্ডেটটির কথা ওঠে আসে।

যাই হোক, আমাদের মতানৈক্যের মধ্যেও দৃশ্যত বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা ও স্বাধীনতা অর্জনের প্রত্যয়বোধে কোনো দ্বিমত ছিল না। আমাদের ছাত্র নেতৃচতুষ্টয়ের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল মধুর এবং আন্তরিক। ইকবাল হলের (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) হাউস টিউটর মহব্বত আলীর তিন কক্ষবিশিষ্ট কোয়ার্টারটি আমাদের ছেড়ে দেওয়া হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। আজকের প্রজন্ম বিস্মিত হবেন, ফ্ল্যাটটিতে তিনটি শয়নকক্ষ এবং ড্রইংরুম থাকা সত্ত্বেও আমরা একটি কক্ষেই চারটি খাট পেতে অবস্থান করতাম। প্রায় একসঙ্গেই খেতাম। পায়জামা-পাঞ্জাবি আমাদের প্রধান পরিধেয় বস্ত্র ছিল। কালো কোট এবং তার ওপর কাঁধের দুপাশ দিয়ে চাদর ঝুলিয়ে আমরা ওই পোশাকেই সবসময় ঘোরাফেরা করতাম। যদিও এটা মুজিব ভাইয়েরই ব্যবহৃত পোশাক ছিল। স্বাধীনতা-যুদ্ধের প্রস্তুতিলগ্ন এতই বিস্তৃত ও বিস্তীর্ণ যে, ৭ মার্চ সম্পর্কে কথা বলতে গেলে প্রাসঙ্গিকভাবে নানা কথা এসে যায়। কোনোভাবেই এড়ানো সম্ভব হয় না।

এখন বিশ্বস্বীকৃত ৭ মার্চের বক্তৃতার প্রসঙ্গে আসা যাক। ৭ মার্চ সকাল প্রায় ১০টা থেকেই রেসকোর্সের মাঠে বক্তৃতায় মুজিব ভাই কী বলবেন তা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়িতে তর্ক-বিতর্কের ঝড় ওঠে। মুজিব ভাইয়ের একটা গুণ ছিল, তিনি সব পক্ষের কথাগুলো গভীর মনোযোগের সঙ্গে শুনতেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের তাঁর স্টাইলকে অনেকে স্বৈরাচারী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ বলে প্রচার করলেও তাঁর প্রদত্ত সিদ্ধান্তটাই সবাই হৃষ্টচিত্তে মেনে নিতেন। কোনো বিষয়ের ওপর উনি চূড়ান্ত মতামত দিয়ে দিলে ছাত্রলীগের দুটি ভিন্ন মতাবলম্বী গ্রুপই বিনা প্রতিবাদে মেনে নিত। উগ্র বাম বিপ্লবীদের প্রতিনিধিত্ব করতেন সিরাজুল আলম খান। আর আমাদের চেতনার পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, কে এম ওবায়েদুর রহমান, এনায়েতুর রহমান, সৈয়দ মাযহারুল হক বাকী প্রমুখ প্রথিতযশা সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। কিন্তু বাস্তবটা ছিল এই, সিরাজুল আলম খানের মতো এরা কেউই মুজিব ভাইয়ের সঙ্গে আঁঠার মতো লেগে থাকতেন না। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও মূল বোঝাটি বা দায়ভারটি আমার স্কন্ধেই অর্পিত হতো। আর এ দায়ভার বহন করা যে কতটা দুঃসাধ্য ছিল, তা আজকের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সেটি বোঝানো যাবে না। অবশ্য উভয়পক্ষের নেতৃবৃন্দই সেদিন ৩২ নম্বরে যুক্তিতর্কে সরব থেকে মুজিব ভাইকে প্রভাবান্বিত করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রপন্থিদের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি চাপ ছিল, তিনি যেন তাঁর ভাষণে ‘জনগণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ নামে সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যদি তা করতেন, তাহলে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি যে হতো তা ভেবে আজও আমার গা শিউরে ওঠে। যাই হোক, আমাদের নেতৃবৃন্দ সম্মিলিতভাবেই অগ্রগামী দল হিসেবে প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি আগে আমাদের রেসকোর্সে পাঠিয়ে দেন। আমরা চারজন একই পোশাকে একসঙ্গে রেসকোর্সের মঞ্চে উঠার সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র রেসকোর্স বজ্র নির্ঘোষে গর্জে ওঠে। আগেই বাংলার জাগ্রত জনতা আমাদের চারজনকে চার খলিফা হিসেবে জানত। তারা এটাও জানত, বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের স্পন্দন ছিলাম আমরা। সাংবিধানিক রাজনীতির বাধ্যবাধকতার কারণে তাঁর (বঙ্গবন্ধু) না বলা কথাটি আমাদের কণ্ঠে বজ্র নির্ঘোষে ধ্বনিত হতো। সমগ্র জনতা আমাদের কণ্ঠে উচ্চারিত শব্দসমূহকে বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্ত হিসেবেই গ্রহণ করত। ৭ মার্চে আমরা ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে বাংলার জাগ্রত জনতার উদ্বেলিত চিত্তকেই শুধু তুলে ধরিনি, বরং স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার চেতনায় শানিত করেছি। নির্বাচনের আগে স্বাধীনতার ডাককে যেমন বিচ্ছিন্নতাবাদী পদক্ষেপ বলে মনে করতাম, নির্বাচনে ম্যান্ডেট প্রাপ্তির পর সেই স্বাধীনতার আহ্বান আমাদের অধিকারে রূপান্তরিত হয়। নির্বাচনের আগে যারা স্বাধীনতা চাইতেন, স্পষ্ট মতানৈক্য সত্ত্বেও নির্বাচনের পরে, বিশেষ করে পুরো মার্চ মাস থেকে চূড়ান্ত বিজয়লাভ পর্যন্ত স্বাধীনতা প্রশ্নে আমরা উভয় গ্রুপই অনড় ছিলাম, দ্বিধাহীন ও আপসহীন ছিলাম। স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু একই সত্তা হিসেবে আমাদের কাছে প্রতিভাত ছিল। এর একটিকে ছেড়ে অন্যটি চাওয়া ছিল কল্পনাতীত। বঙ্গবন্ধু মঞ্চে আসার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা মাইক আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং এর প্রায় অর্ধেক সময় আমি প্রচণ্ড আবেগাপ্লুত উত্তেজনা ছড়ানো বক্তৃতায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা ও বিদ্বেষ তৈরির যে উন্মাদনা সৃষ্টি করতে পেরেছিলাম তা আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঘটনা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, রেসকোর্সে ঢোকার মুহূর্তে এবং মঞ্চে উঠার প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু আমার বক্তৃতার কিছুটা শ্রবণ করেছিলেন। মঞ্চে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে আমরা মুজিব ভাইকে স্বাগত জানাই। তাঁর দৃপ্ত মুখে আমাদের দিকে তাকানোর সময় যে প্রসন্নতা অবলোকন করেছি তা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার স্মরণ থাকবে। ৭ মার্চের ভাষণটি যে সমগ্র জাতিকে একটি অনবদ্য ঐতিহাসিক অদৃশ্য রাখিবন্ধনে আবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিল, সেই নিরিখে তা সন্দেহাতীতভাবে পৃথিবীর ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ বক্তৃতাসমূহের মধ্যে প্রধানতম। ১৮ মিনিটের বক্তৃতায় এত কুশলী শব্দচয়ন, এত অনন্যসাধারণ প্রত্যয়দৃঢ় উচ্চারণ এবং স্বাধীনতার এমন স্পষ্ট দিক-নির্দেশনা! সত্যি বলতে, এটিই ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা এবং পরাধীনতার বক্ষ বিদীর্ণ করে স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত সূর্যকে ছিনিয়ে আনার জন্য প্রদর্শিত রণকৌশল। তিনি সুনিশ্চিত হয়ে বলেছিলেন, ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো’। তাঁর প্রত্যয়দৃঢ় কণ্ঠে সেদিন উচ্চারিত হয়েছিল, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব, দেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ’।

ইউনেস্কো কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর এ বক্তৃতাটিকে বিশ্বসম্পদ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের মহান গৌরবের আলোকে আমি আবারও জাতির কাছে উল্লেখ করতে চাই, ৭ মার্চের পর রাজনৈতিকভাবে তো বটেই, প্রশাসনিকভাবেও বাংলার শাসনভার সরাসরি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এসে যায়। তাঁর নির্দেশেই সেনাবাহিনী ছাড়া বেসামরিক প্রশাসন, কলকারখানা, দোকানপাট, যানবাহনসমূহ এমনকি ব্যাংক পর্যন্ত খোলা ও বন্ধ থাকে। তবুও কিছু কিছু বিষয় সাংবিধানিক কারণে তিনি কৌশলে অনুচ্চারিত রাখলে সেটি উচ্চকিত হতো আমাদের কণ্ঠে অথবা বিবৃতিতে। এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো, স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২৩ মার্চ সমগ্র বাংলাদেশে পাকিস্তানের পরিবর্তে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত লাল-সবুজের পতাকা উড্ডয়নের আহ্বান জানায়। সেনাছাউনি ছাড়াও মোহাম্মদপুর ও মিরপুরের অবাঙালি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বাংলাদেশের পতাকা ওড়েনি বিধায় ২৪ তারিখে সংগ্রাম পরিষদের বিবৃতিতে মোহাম্মদপুর ও মিরপুরের ওইসব এলাকার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আহ্বান জানানো হলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি কার্যকর হয়। কিন্তু এ বিবৃতিটি বঙ্গবন্ধু নিজে দেননি। কারণ, তাঁর শুধু শাসনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতাই ছিল না, সমগ্র জাতির প্রতিনিধিত্বে তাঁর যে বিশ্বজোড়া খ্যাতি প্রতিস্থাপিত হয়েছিল, এ বিবৃতি তার সঙ্গে মানায় না।

সে যাই হোক, ৭ মার্চের পর আমাদের অনেক চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে। ওরা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অস্ত্র ও সেনাবাহিনী নিয়ে এসেছে। আমরা সবই অবলোকন করেছি, উপলব্ধি করেছি, বাধাপ্রদান করেছি। তারচেয়ে বড় কথা, সমগ্র জাতিকে তিল তিল করে একটি জাতীয় ঐক্যের মোহনায় এনে দাঁড় করিয়েছি। ৭ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত এ সময়টা আমরা তাদের প্রদান করলাম কেন? কিছু রাজনৈতিক আহাম্মক এ প্রশ্নটি আমাদের দিকে অভিযোগ হিসেবে উত্থাপন করলে আমরা দ্বিধাহীন চিত্তে জবাব দিতাম— ওরা যেমন সামরিকভাবে প্রস্তুত হয়েছে, আমরাও তেমনি জনগণের চিন্তাকে শানিত করেছি, ঐক্যবদ্ধ করেছি এবং একটি চেতনার মোহনায় এনে দাঁড় করিয়েছি। ৭ মার্চের ভাষণটি যেমন আজকে স্বীকৃতি লাভ করেছে, আমাদের এ কৌশলটিও স্বাধীনতা-যুদ্ধের মহাযজ্ঞের উপযুক্ত ও যথাযথ কৌশল হিসেবে স্বীকৃত হবে, ইনশাল্লাহ।

লেখক : স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা।

পোস্টটি শেয়ার করুন

এ ধরনের আরো খবর

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By SISA HOST