খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: আজ রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার অনুমতি মিলেছে বিএনপির। এ জন্য তারা বড় জনসমাগমের প্রস্তুতিও নিয়েছে। ঢাকা মহানগরীসহ আশপাশের জেলা থেকেও নেতা-কর্মীদের আসতে বলা হয়েছে। ঢাকার এই জনসভা থেকে সরকারকে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আল্টিমেটাম দেবে বিএনপি। একইসঙ্গে ৭ দফা ও ১২টি লক্ষ্য উদ্দেশ্য ঘোষণা দেয়া হবে। এতে তুলে ধরা হবে সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দলের অবস্থান ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা। একইসঙ্গে আন্দোলন কর্মসূচিরও ঘোষণা আসতে পারে।
প্রায় এক বছর আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে (১২ নভেম্বর) সমাবেশ করেছিলো বিএনপি। আর সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ আট মাস যাবত কারাবন্দী রয়েছেন দলীয় প্রধান তাই এবার সমাবেশে উপস্থিত থাকছেন না তিনি।
সমাবেশ উপলক্ষে রাজপথে নামছে দলটি। এদিন রাজধানীতে ব্যাপক শোডাউন করতে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। সর্বত্র সাজ সাজ রব দেখা দিয়েছে। শর্ত থাকলেও বিএনপি নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই সমাবেশস্থলে জড়ো হবেন। শুধু রাজধানীই নয়, ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকেও নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নেবেন। সূত্র বলছে, এই সমাবেশের পর আগামী মাসেই আন্দোলনে নামবে বিএনপি। কারণ এই আন্দোলনের সাথেই গাঁথা দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন।
জানা গেছে, অন্য সমাবেশ থেকে এবারের সমাবেশে একটু ভিন্ন চিত্র দেখাতে চায় বিএনপি। প্রস্তুতি সেরকমেরই। কারণ নির্বাচনের বাকি আছে মাত্র তিন মাস। আগামী মাসেই নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হবে। আর এমন সময় সরকার কঠোর হতে পারবে না বলে বিশ্বাস নেতাকর্মীদের। দলীয় প্রধান কারাবন্দী হওয়ার পর বড় ধরনের কোনো আন্দোলনে যায়নি দলটি। এই সময়ের জন্যই অপেক্ষা করেছে দলের নীতি নির্ধারকরা।
এই সমাবেশের জন্য তিন দফা সময় পরিবর্তন করতে হয়েছে তাদের। গত সোমবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার ঘোষণা দেন। পরদিন মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে রিজভী জানান, ২৭ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ২৯ সেপ্টেম্বর শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও সমাবেশ ঘোষণা করে। এই সমাবেশ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেয় দুই দলের নেতারা। শুক্রবার দলের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন জানায়। কিন্তু শনিবারের পরিবর্তে ৩০ তারিখে জনসভা করার পরামর্শ দিয়ে একটি লিখিত আবেদন দিতে বলা হয় পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে। এরপর শনিবার পুলিশের পক্ষ থেকে আগামীকাল রোববার ২২ শর্তে সমাবেশ করার আনুমতি দেয়া হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী মাস থেকেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে রাজপথে সোচ্চার থাকবে বিএনপি। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে বাধ্য করতে নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা করবে বিএনপি। সমাবেশ থেকে নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি দ্রুত মেনে নিতে সরকারকে আল্টিমেটাম দেয়া হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। অক্টোবরকে টার্গেট করে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। সমাবেশের মাধ্যমেই দলের নেতাকর্মীরা সক্রিয় হওয়ার মধ্য দিয়ে মাঠে নামবেন।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, জনসভায় ঘোষণার লক্ষ্যে বিএনপি ৭ দফা দাবি ও ১২ দফা লক্ষ্য ঠিক করেছে। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে দাবিগুলো মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবে তারা।
সাত দফা দাবির মধ্যে আছে ১. (ক) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই জাতীয় সংসদ বাতিল, (খ) খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তাঁর বিরুদ্ধে করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।
২. (ক) সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, (খ) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো মামলা না দেওয়া, (গ) পুরোনো মামলায় কাউকে গ্রেফতার না করা, (ঘ) কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্রছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি।
৩. সরকারের পদত্যাগ ও সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
৪. ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা।
৫. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে তাদের ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ না করা।
৬. সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী নিয়োগ।
৭. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা।
জেএন