বিশেষ প্রতিবেদক :
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের নানা অনিয়মের কারণে বেহাল অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। ট্রাফিক নিয়ম অমান্য করে নিত্যদিন নগরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে ট্রাক। অন্যদিকে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে দীর্ঘ সময় রাস্তার মধ্যেই দাঁড়িয়ে থেকে মালামাল আনলোড করছে ট্রাকগুলো। অথচ সকাল ৮টার আগেই এসব কাজ সেরে ফেলার নির্দেশ রয়েছে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে। কিন্তু এসব নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিনের বেলায় নগরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে ট্রাক। এরা যত্রতত্র নগরীতে প্রবেশ করে রাস্তায় যানজট বৃদ্ধি করছে। আবার নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে প্রবেশ করায় যেকোন ধরণের দুর্ঘটনার ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রাফিক বিভাগের টিআই-১ মোফাক্কারুল ইসলামের ছত্রছায়ায় ট্রাক চালকরা এসব করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মোফাক্কারুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে আরএমপিতে থাকার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া তার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী হওয়ায় নিজেই গড়ে তুলেছেন এসব সিন্ডিকেট বলেও অভিযোগ উঠেছে। নানা অনিয়মের মাধ্যমে তিনি হাতিয়ে নিচ্ছেন অর্থ। বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটার জন্যই অনেকাংশেই দায়ী ফিটনেসবিহীন গাড়ী, চালকদের অদক্ষতা ও অসাবধানতা। তারপরও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলতে দেওয়া হয় মাসোয়ারার বিনিময়ে। ট্রাফিক বিভাগের গুটিকয়েক অসাধু কর্মকর্তার অনিয়মেই ভেঙ্গে পড়েছে নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা। কন্সটেবল বেলালসহ আরো কয়েকজনের মাধ্যমে এসব অনিয়ম করা হয়। নগরীতে চলাচল অবৈধ ও ফিটনেসবিহীন যান অটো, ভুটভুটি, ট্রলি, সিএনজি, ইমা, বাস, ট্রাক চলাচল করতে দেওয়ার জন্য নেওয়া হয় মাসোয়ারা। অপরদিকে ইমা স্ট্যান্ড , সিএনজি স্ট্যান্ড, বাস স্ট্যান্ড , ট্রাক স্ট্যান্ড থেকেও প্রতি মাসে মাসোয়ারা নেওয়া হয়। কুরিয়ার কোম্পানি থেকেও নেওয়া হয় মাসিক চাঁদা অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ সদস্য বলেন, বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ১৫-২০ লক্ষ টাকা চাঁদা উঠান ট্রাফিক পুলিশ। আর এসবের পেছনে নের্তৃত্ব দেন টিআই-১। শুধু তাই নয় নগরীর লক্ষীপুর এলাকার রামেক হাসপাতাল বহির্বিভাগের সামনের রাস্তায় মাইক্রোবাস রাখতে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন যাবৎ এসব মাইক্রোবাস চালকরা রাস্তায় রেখে আসলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এদিকে রাজশাহী, নাটোর, নঁওগা, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যানবাহন যারা মাসিক চাঁদা দেয় তাদের কোন সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় না। আর যে সব পরিবহনের মাসিক চাঁদায় নাম নেই তাদের সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে । অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, চাপাইনবাবগঞ্জ ঢাকা রুটে চলা প্রত্যেকটা নাইট কোচ গাড়ী থেকে মাসিক মাসোয়ারা নেওয়া হয় ১ হাজার টাকা। আন্তঃজেলা ট্রাক সোনা মসজিদ স্থল বন্দর এলাকা হতে বের হলেই গাড়ী প্রতি নেওয়া হয় ৭০০ টাকা।
রেলগেট সিএনজি মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে নেওয়া হয় টাকা । রাজশাহী শহরের প্রতিটি মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড থেকে নেওয়া হয় ৫ হাজার টাকা প্রতিমাসে । নসিমন করিমন নামের অবৈধ এই যানকে টাকার বিনিময়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।
নগরীর সবচেয়ে বড় গরুর হাট সিটি হাট থেকেও গরুর ট্রাক থেকে নেওয়া হয় টাকা ।
রাজশাহী লোকাল বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন কেও দিতে হয় মাসিক মাসোয়ারা না দিলে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক সিএনজি চালক বলেন, ট্রাফিক পুলিশকে টাকা দেওয়া ছাড়া সিএনজি নিয়ে রাস্তায় বের হওয়া কঠিন। প্রতিমাসেই টাকা দিতে হয়।
রাজশাহী মহানগরীর এক ট্রাক মালিক অভিযোগ করে জানান, গাড়ির কাগজপত্র ঠিক থাকলেও টাকা দিতে হয়। আর যাদের কাগজপত্র ঠিক নাই তাদের ভোগান্তি আরো বেশি।
রাজশাহী রেলগেট এলাকার শাহিন নামের এক দোকানদার বলেন, দিনের বেলায় ইট বালু ভর্তি ট্রাক নগরীর মধ্যে চললেও ট্রাফিক পুলিশ তাদের কিছু বলেন না, কারণ তারা মাসিক টাকা দেয়।মুনসুর নামের এক মোটরসাইকেল চালক বলেন, সার্জেন্টরা মুল পয়েন্ট বাদ দিয়ে ওলি-গলিতে এসে বসে থাকে। পাড়া-মহল্লায় মোটসাইকেলের কাগজপত্র চেক করে। নগরবাসীর পক্ষ থেকে আরো অভিযোগ রয়েছে, আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের চেকপোস্টগুলোতে শুধু মোটরসাইকেলের কাগজপত্র চেক করা হয়। অন্যান্য যানবাহনকে আটকানো হয় না। কখনোই অন্য যানবাহনকে আটকাতে দেখা যায়না। ট্রাফিক সপ্তাহে মোটরসাইকেল ছাড়া কিছু অন্য যানবাহন জব্দ করা হয়। এটা নিয়মিত করলে আরো ভাল হবে। এ বিষয়ে কথা বলতে আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের টিআই-১ মোফাক্কারুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার ইফতেখায়ের আলম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি কেউ অনিয়মের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে তাহলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া সব ধরণের যানবাহন চেক করা হয়।
খবর২৪ঘণ্টা/আর