নিজস্ব প্রতিবেদক :
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী সিটি করপোরেশনে (রাসিক) ওয়ার্ডের সংখ্যা ৩০টি। ৩০ জুলাইয়ের সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে সব ওয়ার্ডেই চলছে প্রার্থীদের প্রচারযুদ্ধ। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি সক্রিয় কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। তবে পূর্বের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করার কারণে নগরীর বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই ভোটারদের পছন্দের তালিকায় নেই বর্তমান কাউন্সিলররা। ওয়ার্ড নেতা পরিবর্তন চাইছেন ভোটাররা। এমন একটি এলাকা নগরীর ৬ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে ভোটার সংখ্যা ১০ হাজার ২৭৯ জন। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে এখানে লড়াই হবে বর্তমান কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টুকু (টিফিন ক্যারিয়ার) ও বদিউজ্জামান বদির (ট্রাক্টর) মধ্যে।
এ ওয়ার্ডের অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন, রেজাউল করিম রিপন (ঘুড়ি)। মনিরুল ইসলাম মনি (ঠেলাগাড়ি), মশিউল হক মুন্না (লাটিম) ও তরিকুল ইসলাম স্বপন (মিষ্টি কুমড়া)। গত ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত বর্তমান কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টুকুর সঙ্গে মাত্র ২৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন বদিউজ্জামান বদি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, মশা নিধন, ভাঙাচোরা রাস্তা মেরামত ও মাদক বিস্তার রোধে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখতে পারেনি বর্তমান কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টুকু। বিশেষকরে, অন্যধর্মালম্বিসহ লক্ষীপুর বাগানপাড়া এলাকার মানুষরা বিপদ-আপদে কাউন্সিলরকে পাশে পায়নি। তাদের ভোট ছাড়াই টুকু গতবার নির্বাচিত হয়েছেন এমন দাবি করেই এ এলাকার নূন্যতম উপকারে আসেনি টুকু এমন অভিযোগ তুলেই পরিবর্তন চাচ্ছেন তারা। তবে এ ওয়ার্ডে লড়াই হবে হাড্ডা হাড্ডি।
তবে টুকুর সমর্থীতরা মনে করছেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা টুকু। তাছাড়া টুকুর পরিবারের রাজনৈতিক ঐতিহ্য রয়েছে। তার বড় ভাই আসাদুজ্জামান আসাদ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এসব মিলিয়ে এলাকায় টুকুর প্রভাব রয়েছে। এ কারণে শারিরীক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে ২০১৩ সালের নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে নেয় নুরুজ্জামান টুকু।
কাউন্সিলর টুকু বলেন, ওয়ার্ডে নানা ধরণের নাগরিক ভোগান্তি ছিল। মাত্র সাড়ে চার বছর দায়িত্ব পালন করছি। এই সময়ের মধ্যে ওয়ার্ডের সমস্যাগুলোর ৭০ ভাগ সমাধান করেছি। এখনও কিছু কাজ বাকি আছে। এবার নির্বাচিত হলে দ্রুততার সাথে সেসব কাজ শেষ করব।
বদি বলেন, আমি দীর্ঘ সময় থেকে মাঠে রয়েছি। গত নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছি। বর্তমানে ওয়ার্ডের বাসিন্দারা নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত। সামান্য বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়েন ওয়ার্ডবাসী। এছাড়াও ভাঙা রাস্তাঘাট মেরামত করা হয়নি। এলাকায় মাদকের বিস্তার ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। নিরাপত্তার জন্য নেই সিসি ক্যামেরাও। আমি নির্বাচিত হলে এসব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করব এবং ডিজিটাল ওয়ার্ড বানাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গহন করবো।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ত্রাণের টিন আত্মসাতের মামলা হয়। এছাড়াও প্রার্থীতা বৈধ করার লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে তার স্ত্রীকে দিয়ে গত ২১ জুন ২০১৮ তারিখে তালাক করানো হয়। কারণ, হলফ নামায় স্ত্রী ফরিদা ইসলামের সম্পদ গোপন করা হয়েছিল। স্বপনের স্ত্রী ফরিদা ইসলাম রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার ও সরবরাহকারী। যে কারণে প্রার্থিতা বৈধ করতে কাগজ কলমে স্ত্রীকে দিয়েই তালাক করান স্বপন। কিন্তু এখনও তাদের বসবাস একই সাথে। বিষয়টি ইতিমধ্যেই রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ হয়েছে। তারপর থেকেই লজ্জায় নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে বাসাতেই অবস্থান করছে বলেও জানা গেছে।
অপর প্রার্থী জামায়াত নেতা রেজাউল করিম রিপনের বিরুদ্ধেও রয়েছে নাশকতার মামলা। তার প্রতি এলাকার ভোটারদের মনোভাব ইতিবাচক নয়। অপর প্রার্থী ওয়ার্ড ছাত্র লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহসভাপতি মনিরুল ইসলাম মনির (ঠেলাগাড়ি) প্রচারণা লক্ষ্যনীয় নেই। তিনি পরিচিত হতেই প্রার্থী হয়েছেন দাবী এলাকাবাসীর। আর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য। তবে তিনি সুদ ব্যবসায়ী হিসাবে এলাকায় পরিচিত। তিনি তার সহচর বন্ধুর স্ত্রীকে ভাগিয়ে এনে ২য় বিয়ে করায় মুন্নাকে ভাল চোঁখে দেখছেন না এলাকাবাসী। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মশিউল হক মুন্না বলেন, প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে।
সবমিলিয়ে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর টুকু (টিফিন ক্যারিয়ার) ও বদিউজ্জামান বদির (ট্রাক্টর) মধ্যে লড়াই হবে হাড্ডা হাড্ডি। তবে বর্তমান কাউন্সিলর টুকুকে পুনরায় নির্বাচিত করতে দলীয়ভাবে যা যা করার তাই করা হবে বলেও দাবি করেছেন টুকুর দুই সহচর।
খবর২৪ঘণ্টাে/এমকে
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।