বাঘা (রাজশাহী)প্রতিনিধি: মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকলেও,পরনের ভাল জামা নেই। একটি বা দুটি জামা-প্যান্টই হয়তো সম্বল। দরিদ্র পিতার সাথে দিনমজুরের কাজ কিংবা টিউশনি করে চালিয়েছে লেখাপড়া। দুবেলা দু’মুঠো অন্ন জোটানোও ছিল অনেক কষ্টের। এতো কষ্টের মাঝেও ছিল, লেখা-পড়ার প্রতি অদম্য আগ্রহ। আর তাকে পুঁজি করেই অসাধ্য সাধন করেছে ওরা। তবে দুঃচিন্তা হলো- সামনের কঠিন পথ পেরিয়ে সাফল্যের শেষ ধাপ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে কি-না? । কারন ওরা নামিদামি ধনীর দুলাল কিংবা দুলালী নয়। প্রতি বিষয়ে নামকরা শিক্ষকের কাছে পাঠ নেবার সামর্থ্য কিংবা প্রয়োজন মাফিক কাগজ-কলম-বই কেনার সামর্থ্যও ছিলনা, এখনো নেই। আর আনন্দ হল এই ভেবে যে, ওরাও পারে কৃতীদের কাতারে দাঁড়াতে। যে সম্পদ অনায়াসে ছুঁয়ে ফেলতে পারে তাদেরও,সমান কৃতিত্বের দবিদার করে দিতে পারে হতদরিদ্র পরিবারের ছিন্নবস্ত্র পরিহিত ছেলেমেয়েদেরও। এমন খুশির বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছে শিখা খাতুন ,সোহাগ, তুহিন ও শাকিলা।
শিখা খাতুন ঃ শাহদৌলা কলেজ থেকে এবার এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে শিখা। এসএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছিল হতদরিদ্র পরিবারের এই মেধাবী। মাতা মনোয়ার অনুপ্রেরণায় সকল বাঁধা বিপত্তি পার করে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে সে। তার এ সাফল্যের পেছনে রয়েছে শিক্ষকের সহযোগিতা। ৪ বোন ও ৩ ভাইয়ের মধ্যে ৬ষ্ট শিখা। ১ বোন ও ১ ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পিতা আরজেদ আলী উপজেলার আশরাফপুর গ্রামের বাসিন্দা। ৭ সদস্যের সংসার চালান ব্যবসার উপার্জিত টাকায়। আগামীতে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন শিখা খাতুনের।
সোহাগ ও তুহিন ঃ একই কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে উপজেলার দেবত্তবিনোদপুর গ্রামের সোহাগ ও মনিগ্রাম দক্ষিনপাড়ার তুহিন। তুহিনের বাড়ি ভিটার জমি থাকলেও সোহাগের তাও নেই। সীমিত আয়ের অস্বচ্ছল সংসারে নিজের লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছে টিউশনি করে। বাবার সাথে কাজ করে এসএসসি পাশের পর বৃত্তির টাকাই ছিল তার লেখা পড়ার একমাত্র সম্বল। দিন মজুর পিতা আকরাম আলী আর গৃহিনী মা চায়না বেগম গরু-ছাগল পালন করে অর্থ যোগান দিয়েছেন সংসারে। দুই ভাইয়ের মধ্যে সোহাগ বড়।
তুহিনের পিতা আলম সরকার মানষিক রুগী। তেমন কাজ কর্ম করতে পারেনা। সংসার পরিচালনার দায়ভার মাতা লতিফা বেগমের। দুই ছেলে ও ১ মেয়েসহ ৫ সদস্যর সংসার চলে হাঁস,মুরগী,গরু ছাগল পালন করে। নিজের অদম্য সাহস,মা আর শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় ভালো ফলাফল তার। কলেজে লেখা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে নিজের পড়া লেখার খরচ যোগাতে টিউশনি করতে হয়েছে তাকে। ছোট বোন লতিফা নবম শ্রেণীতে ও ছোট ভাই তুষার ক্লাশ থ্রিতে পড়া লেখা করছে। এসএসসিতে মনিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিল সোহাগ ও তুহিন। তাদের দু’জনেরই ইচ্ছা ডাক্তার হওয়ার।
শাকিলা খাতুন ঃ মহিলা বাণিজ্যিক এন্ড ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট থেকে এইচএসসিতে বানিজ্যিক (ট্রেড ব্যাকিং) বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে শাকিলা। ভ্যান চালক শাহাদতের ৩ মেয়ের মধ্যে বড় শাকিলা। বাড়তি কাজ করে অর্থ যোগান দিতেন মা নরজিমা বেগম। তিনি জানান, ছোট বেলা থেকেই লেখা পড়ার প্রতি চরম আগ্রহ ছিল তার। বাবার উপার্জনের টাকায় চলে ৫ সদস্যর সংসার। নিজস্ব জায়গা জমি না থাকলেও মেয়ের আগ্রহ দেখে থেমে থাকেনি বাবাও। ৩ বোন মিলে এক ঘরে থেকেই লেখা পড়া করেছে শাকিলা। জমি বলতে শ^াশড়ির নামে বসত ভিটার ২ কাঠা। শাকিলা জানান, তার মনজগতের স্বপ্ন প্রকৌশলী নতুবা বিএসসি নাসিং পড়ে অফিসার হবার। অদম্য এ মেধাবীর বাড়ি বাঘা উপজেলার মর্শিদপুর গ্রামে। স্বপ্ন যেন ভেঙে না যায়.এজন্য সবার কাছে প্রার্থনা
শাহদৌলা কলেজের অধ্যক্ষ নুরুদ্দিন সরকার ও মহিলা বাণিজ্যিক এন্ড ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট এর অধ্যক্ষ আবু সাঈদ বলেন, এমন চমৎকার ফলাফলে ছাত্র-ছাত্রীদের যেমন শ্রম দিতে হয়েছে,তেমনি তাদের বাবা-মা ও স্কুল কর্তৃপক্ষও সদাসতর্ক প্রহরীর মত সজাগ ছিলেন।
খবর ২৪ঘণ্টা/ নই