নাটোর প্রতিনিধি : নাটোর শহরের আলাইপুরের আশরাফুল উলুম হাফেজিয়া মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণীর (হেবজো) ছাত্র তানভীর (১১) হত্যার দ্রুত মামলার রায় ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় নাটোর প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানব বন্ধনে তানভীর হত্যার আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করা হয়।
মানব বন্ধনে তানভীরের বাবা মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান তার একমাত্র ছেলে তানভীর আলাইপুর বাটার গলির আশরাফুল উলুম হাফেজিয়া মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণীতে (হেবজো) আবাসিক ছাত্র হিসেবে লেখাপড়া করত। গত ২৫শে আগষ্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ৭টায় তার স্ত্রী মোঃ ফিরোজা বেগম (৩৫) তানভীরকে রাতের খাবার দিতে গেলে তাকে মাদ্রাসায না পেয়ে মাদ্রাসার শিক্ষকদের জিজ্ঞাসা করলে তানভীরকে তার বাবা নিয়ে গেছে বলে জানায়। কিন্তু তিনি বাড়িতে নাই বললে তারা তানভীর বাইরে ঘুরতে গেছে বলে তানভীরের মাকে বাড়িতে ফেরত যেতে বলে।
পরবর্তীতে নিকটস্থ আত্মীয় স্বজনের বাসায় খোজাখুজি করে না পেয়ে নাটোর থানায় জিডি করা হয় যার নং ১১৮০ তাং ২৬/০৮/২০১৫। আসামীরা ২৭শে আগষ্ট ২০১৫ দুপুর ১টায় অজ্ঞাতনামা মোবাইল নং ০১৭৪০ ০৫৮২২১ থেকে তানভীরের মায়ের মোবাইল নং ০১৭৪১ ০৭৩৪৯৪ এ ফোন করে তানভীরকে ছেড়ে দিবে মর্মে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে। বিষয়টি নাটোর শহর এলাকায় টহলরত র্যাব ৫ রাজশাহীকে জানালে তারা অজ্ঞাতনামা মোবাইল নং নিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করে।
১সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল সাড়ে ৯টায় র্যাব ৫ রাজশাহী ফোন করে একজন অজ্ঞাত ছেলের লাশ পাওয়া গেছে বলে শনাক্ত করার জন্য তাকে আলাইপুরস্থ আশরাফুল উলুম হাফেজিয়া মাদ্রাসায় যেতে বললে সেখানে সকাল সাড়ে ১০টায় গিয়ে র্যাব ৫ রাজশাহীর সহযোগীতায় অজ্ঞাতনামা মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ধৃত আসামীদের উপস্থিতিতে মাদ্রাসার পিছনে মোঃ আবুল কাশেমের পায়খানার সেফটি ট্যাংকির ভিতর থেকে গলাকাটা, দেহের সাথে ঘাড়ের চামড়া দ্বারা মাথা সামান্য লেগে থাকা অবস্থায় তানভীরকে সনাক্ত করেন।
ঘটনাস্থলে আসামী সিংড়া থানার জোড় মল্লিকার মোক্তার হোসেনের ছেলে মোঃ হুমাইদ হোসেন (১৫), বাগাতিপাড়া থানার নওপাড়ার মোঃ বাবুল হাসানের ছেলে মোঃ বাইজিদ হাসান (১৪) এবং সদর থানার কালুর মোড়ের মোঃ আব্দুর রহিমের ছেলে মোঃ নাইম (১৫) কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানায় ২৫শে আগস্ট ২০১৫ বিকাল সাড়ে ৫টায় তারা তানভীরকে মাদ্রাসার পিছনের মোঃ আতিয়ার রহমান মুকুলের অর্ধনির্মিত পরিত্যাক্ত দালানের একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে ঐ দিন বিকাল পোনে ৬টায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে তানভীরের হাতপা চেপে ধরে গলায় রশি পেচিয়ে শ^াসরোধ করে হত্যা চেষ্টার সময়ে গলায় ক্ষুর দিয়ে জবাই করে তাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে।
আসামীরা ২৬শে আগস্ট ২০১৫ লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ভোর ৫টায় মাদ্রসার পিছনের মোঃ আবুল কাশেমের বাড়ির ব্যবহৃত পায়খানার সেফটি ট্যাংকির ভিতরে তানভীরের লাশ ফেলে ট্যাংকির মুথ ঢেকে দেয়। যে ঘরে তানভীরকে হত্যা করা হয় সেখানে তার ব্যবহৃত মাথার টুপি, ১টি স্যান্ডেল, রশি, রক্তমাখা প্লাস্টিকের বস্তা এবং আসামী বাইজিদ ও হুমাইদের ঘর থেকে চাঁদা দাবি করার সিম, ক্ষুর ও আসামী হুমাইদের রক্তমাখা পাঞ্জাবী উদ্ধার করা হয়।
মানব বন্ধনে তিনি আরও বলেন আমার একমাত্র সন্তানকে যারা নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে তাদের দ্রুত মামলার রায় দিয়ে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি যেন আর কারো বাবা মায়ের সন্তান এমন হত্যার শিকার না হয়।
মানব বন্ধনে আশরাফুল উলুম হাফেজিয়া মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন তানভীর মেধাবি এবং খুব ভালো ছাত্র ছিল। মাদ্রাসার সবার সাথেই সে মেলামেশা করত। তাকে যারা হত্যা করেছে মাদ্রাসার সকল ছাত্র শিক্ষকদের পক্ষ থেকে তাদের সুষ্ঠু বিচার ও যথোপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি। মানব বন্ধনে আশরাফুল উলুম হাফেজিয়া মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মোঃ সাইফুল ইসলাম সহ উক্ত মাদ্রসার সকল ছাত্র উপস্থিত ছিলেন।
খবর ২৪ঘণ্টা/ নই
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।