নিজস্ব প্রতিবেদক:
মিউজিক ভিডিওর শুটিংয়ের নামে কক্সবাজারে ইয়াবা আনতে গিয়ে র্যাব-৭ এর হাতে পুরো ইউনিটিসহ আটক হওয়া রাজশাহীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আসলাম সরকার মাদকের গড ফাদার কাল্লাম মোল্লার হয়ে কাজ করতো। তার হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মাদকের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল সে। লোক দেখানো মিউজিক ভিডিও ও ক্যাফে চালানোর নাম করে মাদকের রমরমা ব্যবসা চালাতো গ্রেফতার হওয়া আসলাম সরকার। আসলাম নগরীর রাজপাড়া থানার ডিঙ্গাডোবা এলাকার আজিজুর রহমানের ছেলে। ইয়াবা গড ফাদার রাজশাহী অঞ্চলের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী কালাম মোল্লা রাজশাহীর বাঘা থানার হেলালপুর গ্রামের আকছেদ আলীর ছেলে। তার নামে বাঘা-চারঘাট এমনকি রাজধানী ঢাকাতেও দুটি মামলা হয়েছে। চারটি থানায় তার নামে মোট ১৪টি মামলা রয়েছে। ঢাকার তুরাগ ও গুলশান থানায় একটি করে মামলা। বাকি ১২টির মধ্যে বাঘা থানায় ৯টি ও চারঘাট ৩টি মামলা রয়েছে। দুটি থানারই সে তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। পুলিশের ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে এই মাদকের গড ফাদার কালাম মোল্লা।
বাঘা থানার ওসি রেজাউল হাসান রেজা খবর ২৪ ঘণ্টাকে বলেন, কালাম মোল্লা থানার তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে ৯টি মামলা রয়েছে। তাকে ধরতে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্ত ধরা যায়নি।
চারঘাট থানার ওসি নজরুল ইসলাম খান খবর ২৪ ঘণ্টাকে বলেন, কালাম মোল্লা থানার তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তাকে ধরতে ইতমধ্যেই অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্ত তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়াও আরো ৪ জন তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে আফজাল, ওয়াকিল ও জয়নালকে ধরা হয়েছিল। তারা এখন জেলে আছে। বাকি ১ জনকে ধরা সম্ভব হয়নি।
অনুসদ্ধানে জানা গেছে, কালাম মোল্লার রাজশাহী মহানগরীতে দুটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে একটি হলো নগরীর ঘোষপাড়া মোড়ে অবস্থিত ব্ল্যাক ক্যাফে চাইনিজ ও অন্যটির নাম জানা যায়নি।
চাইনিজ রেস্টুরেন্টের আড়ালেই কালাম মোল্লা তার প্রধান সহযোগি আসলাম সরকার ও ভাইরা ভাই রবিউল ইসলাম ওরফে রবির মাধ্যমে ইয়াবা ও নারী ব্যবসা চালিয়ে আসছে। খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, ব্ল্যাক ক্যাফেতে খাবারের নামে যুবক-যুবতীদের টাকার বিনিময়ে বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে। রেস্টুরেন্টের ঘরগুলো প্রায় সময়ই অন্ধকার থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।আসলাম সরকার সুকৌশলে মিউজিক ভিডিওর নাম করে রাজশাহী অঞ্চলের অর্ধশতাধিক সুন্দরী কলেজ পড়–য়া মেয়েকে দিয়ে অনলাইনের মাধ্যমেই নারী ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এসব সুন্দরী মেয়েদের মাদক ব্যবসা চালানোর ক্ষেত্রে বিশেষ তদবির হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। অর্থবিত্তের প্রলোভন দেখিয়েই মেয়েদের এ ব্যবসাতে আকৃষ্ট করা হয়ে থাকে।
র্যাবের হাতে আসলাম সরকার ইয়াবাসহ আটক : সংগৃহীত
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একটি মিউজিক ভিডিও শুটিং ৫ হাজার টাকার মধ্যেই শেষ হয়ে যেতে পারে। কম বাজেটের সিনেমা ও নাটকের ২/৩ মিনিটের শুটিং করতেই কক্সবাজারে যেতে চায় না খরচ বেড়ে যাওয়ার ভয়ে। অথচ আসলাম সরকার শুটিংয়ের আড়ালে ১০জন টিম সদস্য নিয়ে মাদক নিতে যায় কক্সবাজারে। মাদক নিয়ে রাজশাহী ফেরার পথে র্যাবের হাতে আটক হয় আসলাসহ পুরো টিম। এটা লোক দেখানো শুটিং ছিল। এর নৈপথ্যে মাদক নিয়ে আসাই মূল্য উদ্দেশ্য ছিল আসলামের।
উল্লেখ্য, বুধবার দুপুরে এক লাখ আট হাজার পিস ইয়াবাসহ কক্সবাজারে লোক দেখানো মিউজিক ভিডিওর শুটিং করতে গিয়ে আসলাম সরকার ‘সরকার প্রোডাকশন হাউস’ নামের শুটিং টিমের ১০ সদস্যসহ র্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের একটি টিমের হাতে আটক হয়।
বুধবার দুপুরে পর্যটন শহরের কলাতলীর সার্ফিং চত্বর থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাসও জব্দ করা হয়। আটককৃতরা হলো, রাজশাহীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আসলাম সরকার (৪০), ড্রাইভার মাসুদ রানা (৩২) ও শুটিং টিমের ৮ সদস্য। পরে র্যাব শুটিং টিমের ৮ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়।
ছবি : ফেসবুক
র্যাব-৭ কক্সবাজারের কোম্পানি কমান্ডার মেজর আমিন বলেন, মিউজিক ভিডিও করার নামে কক্সবাজার গিয়ে ইয়াবা নিয়ে ফেরার পথে রাজশাহীভিত্তিক মাদকচক্র ‘সরকার প্রোডাকশন হাউস’র ১০ সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, আসলাম সরকার রাজশাহীর মাদক চক্রের প্রধান। তিনি নানা সময় নানা বেশ ধরে কক্সবাজার থেকে ইয়াবা নিয়ে যেতেন। এবার তিনি মিউজিক ভিডিওর শুটিংয়ের নাম দিয়ে ইয়াবা নিতে আসেন। ইয়াবা কিনে মাইক্রোবাসযোগে রাজশাহী ফেরার পথে তাদের আটক করা হয়।
দেশব্যাপী র্যাব-পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হলে কালাম মোল্লার সহযোগী এমনকি কালাম মোল্লাও আত্মগোপনে চলে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন কর্মকর্তা খবর ২৪ ঘণ্টাকে বলেন, গত ২০১৭ সালের মার্চ মাসের শেষের দিকে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে আবারো মাদক ব্যবসায় সক্রিয় হয়ে যায়। কালাম জেল থেকে বের হওয়ার একমাসের মাথায় তার ভাইরা ভাই রবিউল ইসলাম বরিও জেল থেকে জামিনে বের হয়। কালাম মোল্লাকে জেল থেকে বের করার জন্য যাবতীয় আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী সহযোগি আসলাম সরকার।
এ মাদক চক্রের সাথে আরএমপি ও জেলা পুলিশের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার যোগাযোগ রয়েছে বলেও একটি সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
খবর২৪ঘণ্টা/এম আর