ওমর ফারুক :
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টা ৩০ মিনিট। ইফতারের আর ১৭ মিনিট বাকি। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের সামনে বেশ কয়েকজনকে রাস্তার মধ্যেই বসে পড়তে দেখা যায়। এরপর কাছে গিয়ে পলিথিনের ব্যাগ থেকে মুড়ি ও ছোলা বের করতে দেখা গেলো তাদের।
কাছে গিয়ে কথা বলতে চাইলে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে হাসতে শুরু করে তারা। চেহারাই মনিলনতার চিহ্ন। ময়লা-নোংরা-ছেঁড়া জামা-কাপড় পরিহিত থাকলেও এসব লোকদের চোখে মুখে দুঃখের ছাপ মোটেও নেই।
প্রত্যেকের বয়স ৪৫-৫০ বছরের মধ্যে। ইফতারের ঠিক আগ মুর্হর্তেই তারা সেখানে বসে পড়েন। মুড়ি ও ছোলাই তাদের ইফতারি। সাথে দু’একজনকে ডিম খেতেও দেখা যায়।
তাদের মধ্যে রহিম নামের একব্যক্তি জানালেন, আমাদের বাড়ি ঘর নেই। যেখানে রাত হয় সেখানেই শুয়ে পড়ি। তবে রেলস্টেশনে থাকা বেশি সুবিধা হয়। রোজা রাখার চেষ্টা করি।
তার পাশেই অন্য একটি দলকে ইফতারের প্রস্তুতি নিতে দেখে তাদের কাছে গিয়ে কথা বলতেই একজন বলে উঠলেন, ভাই আমরা কামলা মানুষ। স্টেশনে পৌঁছতে দেরি হওয়ায় রাস্তার মধ্যে বসেই ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কাজের সন্ধানে বাইরের জেলাই যাবো। রোজার দিন বাইরে কাজ না করতে গেলেই নয় এমন এক প্রশ্নের জবাবে মধ্যবয়সি লোকটি বলেন, গরিব মানুষের আবার রোজা। রোজার দিন বসে খেলে ছেলেমেয়ে খেতে পাবে না। তাদের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দিতেই কাজ করা। রোজার দিন বলে বসে থাকলে চলবে না। রোজা থাকলে সন্ধ্যা বেলায় খেতে হয় তাই খাওয়া। ইফতার কিনা বুঝি না?
আরেক ব্যক্তি বলেন, এই রাস্তার মধ্যে বসে শুধু মুড়ি খেলেও আমরা সন্তুষ্ট। এই আমাদের জন্য আল্লাহ ভাগ্যে লিখে রেখেছিল।
অন্যদিকে রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে কয়েকজন টোকাইকে দেখা গেল মুড়ি ও ছোলা নিয়ে বসতে। এদের প্রত্যেকেই মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু নিয়ে এসেছে। এখানেই সবাই প্রতিদিন ইফতার করে। কেউ রোজা না থাকলেও ইফতার করে। বিভিন্ন দোকান থেকে তারা এসব ইফতারি চেয়ে নিয়ে এসেছে।
বেশিরভাগ টোকাইয়েরই বাবা-মায়ের ঠিক নেই। দু’একজন মায়ের কথা জানাতে পারলেও বাবা আছে কিনা তা জানায়নি। প্রত্যেকের বয়স ৮-১০ বছরের মধ্যে হবে।
প্রায় প্রতিদিনই রাজশাহী মহানগরীর রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, কোর্ট স্টেশন, সাহেব বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় এভাবে জড়ো হয়ে ইফতার করতে দেখা যায়।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে