খবর২৪ঘণ্টা.কম, ডেস্ক: চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নয় জেলায় ১১ জন নিহত হয়েছে। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোরের মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে কুমিল্লায় ২, নীলফামারীতে ২, চুয়াডাঙ্গায় ১, চট্টগ্রামে ১, নেত্রকোনায় ১, ফেনীতে ১, নারায়ণগঞ্জে ১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ এবং দিনাজপুরে ১ জন নিহত হয়েছে। নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী বলে দাবি করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
কুমিল্লা
মঙ্গলবার রাত পৌনে ১টার দিকে কুমিল্লা সদরের জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বাজগড্ডা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুই মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। সোমবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে বাজগড্ডা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- কুমিল্লা সদরের শুভপুর এলাকার আলী মিয়ার ছেলে পেয়ার আলী (২৪) ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা এলাকার মহেশপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে শরিফ (২৬)।
এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার ওসি আবু সালাম মিয়া বলেন, বাজগড্ডা এলাকায় একটি পাজারু গাড়িকে থামতে বলা হলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এসময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে দুই মাদক বিক্রেতা গুলিবিদ্ধ হন।
আহতদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে ওই গাড়ি তল্লাশি করে ৫০ কেজি গাঁজা ও একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়।
নীলফামারী
নীলফামারীর সৈয়দপুরের গোলাহাট বধ্যভূমি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এরা হল- শহরের নিচু কলোনী এলাকার জনী (৩৪) ও ইসলামবাগ এলাকার শাহিন (৩২)।
সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল জানান, মাদক ব্যবসায়ী জনী ও শাহিনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাতে গোলাহাট বধ্যভূমি এলাকায় জসিয়ার রহমান জসি ও নূর বাবু নামে দুইজন মাদকের বড় চালান নিয়ে আসবেন।
এরপর তাদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে মাদক বিক্রেতাদের সঙ্গে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ হয়। এতে জনী ও শাহিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় সৈয়দপুর থানার দারোগা ওয়াদুদ হোসেন ও কনস্টেবল মোকারম হোসেন আহত হয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান সাদু (৩৮) নিহত হয়েছে। সোমবার রাত পৌনে ২টার দিকে আলমডাঙ্গা রেল স্টেশনে পাশে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্রসহ এক বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত কামরুজ্জামান সাদু আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদী গ্রামের মৃত ইমদাদুল হকের ছেলে।
আলমডাঙ্গা থানার ওসি আবু জিহাদ ফকরুল আলম খাঁন জানান, আলমডাঙ্গা স্টেশনের পশ্চিম দিকের একটি জঙ্গলের ভেতরে ৮/১০ জন মাদক ব্যবসায়ী অবস্থান করছে এমন সংবাদ ভিত্তিতে পুলিশের একটি দল ওই স্থানে অভিযান চালায়। রাত দেড়টার দিকে পুলিশের টহল দলটি ঘটনাস্থলে পৌঁছালে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের ওপর অতর্কিত গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়।পরে গোলাগুলির খবর পেয়ে থানা থেকে আরো দুই প্লাটুন ফোর্স নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়।
প্রায় আধাঘণ্টা বন্দুকযুদ্ধের এক পর্যায়ে পুলিশের প্রতিরোধে পিছু হটে মাদক ব্যবসায়ীরা। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে গুলিবিদ্ধ কামরুজ্জামানের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ফেলে যাওয়া একটি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি ও এক বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধার করে পুলিশ। রাত তিনটার দিকে নিহত কামরুজ্জামানের মরদেহ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়।
তিনি আরো জানান, বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের গুলিতে আলমডাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক জিয়াউর রহমান, সহকারী উপ-পরিদর্শক আব্দুল হামিদ, কনস্টেবল মাসুদ রানা ও কনস্টেবল রাকিবুল হোসেন গুরুতর আহত হয়েছেন।
আলমডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কলিমুল্লাহ জানান, নিহত কামরুজ্জামান চুয়াডাঙ্গা জেলা আলমডাঙ্গা শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে আলমডাঙ্গা থানায় মাদক পাচারসহ ১২টি মামলা রয়েছে।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানাধীন ডেবারপাড় এলাকায় র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শুক্কুর আলী (৪৫) নামে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মিমতানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডেবারপাড় এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদকব্যবসায়ীরা গুলি শুরু করে। পরে র্যাবও পাল্টা গুলি করলে তারা পালিয়ে যায়।
পরে সেখান থেকে আহত অবস্থায় শুক্কুর আলীকে নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে র্যাব প্রায় ১০ হাজার পিস ইয়াবা, একটি ওয়ানশ্যুটার গান, বিপুল পরিমাণ গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
নেত্রকোনা
জেলার সদর উপজেলার মেদনী ইউনিয়নের বড়য়ারী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আমজাদ হোসেন নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।
নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বোরহান উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে মাদক ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে সদর উপজেলার বড়য়ারী এলাকায় অভিযান চালানো হয়।
ওই সময় আমজাদের সহযোগীরা পুলিশের ওপর হামলা চালালে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ শুরু হয়। এতে আমজাদ হোসেন নিহত হয়। সে নেত্রকোনা শহরের পশ্চিম নাগড়া এলাকার বাসিন্দা।
ওসি আরও বলেন, ওই ঘটনায় তিনিসহ উপপরিদর্শক মহসিন, মামুন, মকবুল ও কনস্টেবল মালেক আহত হয়। তাদের নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ফেনী
ফেনীতে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু (৪৯) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। র্যাব বলছে, নিহত মঞ্জু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত এক মাদক ব্যবসায়ী। মঙ্গলবার রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লেমুয়া নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার রুপকানিয়া গ্রামের হাজী আবদুল করিমের ছেলে। তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম জেলায় ডাকাতি ও মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় মঙ্গলবার ভোরে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে বাচ্চু খান (৩৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এসময় তাদের ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার, বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদক উদ্ধারে গেলে বাচ্চুসহ তিন মাদক ব্যবসায়ী দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে ও র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় র্যাবও পাল্টা গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলেই বাচ্চু নিহত হয় এবং বাকি দুজন পালিয়ে যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ধন মিয়া (৩০) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে উপজেলার সোনারামপুরে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তার স্ত্রী আরজিদা বেগমকেও মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়।
র্যাব-১০ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, রাতে স্ত্রী আরজুদা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে ধন মিয়া নারায়ণগঞ্জ এলাকার একটি কুরিয়ার সার্ভিস থেকে ইয়াবার প্যাকেট নিয়ে প্রাইভেটকারে রওনা দেন।
গোপন সংবাদে র্যাবের একটি দল তাদের পিছু নেয়। বিষয়টি আঁচ করে পেরে দ্রুত চালিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ঢুকে পড়লে সোনারামপুর এলাকায় একটি গর্তে তাদের গাড়ি ফেঁসে যায়।
গাড়ি থেকে নেমে ধন মিয়া পালানোর চেষ্টা করেন। র্যাব পিছু নিলে তারা এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে। র্যাবও পাল্টা গুলি চালালে ধন মিয়া ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
এ সময় তার স্ত্রী আরজুদা বেগমকে আটক করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে ১২ হাজার পিছ ইয়াবা, একটি বিদেশি পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলি, এক্স করোলা একটি প্রাইভেটকার ও মাদক বিক্রির ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
দিনাজপুর
দিনাজপুরের বিরামপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। তার নাম প্রবাল হোসেন মন্ডল (৩৫)।
পুলিশ জানায়, মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে প্রবাল হোসেন মন্ডলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার মনিরামপুর এলাকায় অভিযান শুরু করে পুলিশ।
এসময় আরেক দল মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের উপর ককটেল ও গুলি ছুটতে থাকে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছুঁড়ে। এ সময় আটক মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের নিকট থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে উভয় পক্ষের গোলগুলির মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়।
বিরামপুর থানার ওসি আব্দুস ছবুর জানায়, ভোরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রবাল হোসেন মন্ডলকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরো জানান, অভিযান চলাকালে বিরামপুর থানার এসআই খুশিদ জাহান ও এএসআই রামচন্দ্র আহত হন।
প্রসঙ্গত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সোমবার (২১ মে) যশোরে ৩ জন, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও টাঙ্গাইলে একজন করে নিহত হয়েছেন।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ