ওমর ফারুক :
রাজশাহী মহানগর ও জেলার ৮টি উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে এ বছর ৪ লাখ ১১ হাজার ৭৭ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৬৯ হাজার ২০৫ হেক্টর জমি থেকে এ ধান উৎপাদন হবে।
ধানের শিষ ফোটার সময় পর পর দু’বার শিলা বৃষ্টি হওয়ার কারণে কাঙ্খিত ফলন নাও হতে পারে বলে শঙ্কা করছেন কৃষকরা। এপ্রিল মাসে ৫ তারিখ ও ১২ তারিখ দু’দফায় এ শিলা বৃষ্টি হয়। শিলা বৃষ্টি ধান, আম ও মৌসুমি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ বছর আমন মৌসুমে ধানের শিষ ফোটার সময় বাতাসে ধান পড়ে যাওয়ার কারণে ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়েন কৃষকরা। তখন লোকসান গুনতে হয় কৃষকদের। সেই লোকসান পোষাতে কৃষকরা আমন ধান চাষ করেন। যদি শিলা বৃষ্টির কারণে ফলন বিপর্যয় হয় তাহলে লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন না কৃষকরা। অপরদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দাবি, শিলা বৃষ্টিতে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। ধানের কাঙ্খিত ফলন হবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগর ও জেলার ৮টি উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ৬৬ হাজার ২১২ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্ত তার চেয়ে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর বেশি জমি জমিতে বোরো চাষ হয়। ৬৯ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এই চাষকৃত জমি থেকে ৪ লাখ ১১ হাজার ৭৭ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৫১ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এরমধ্যে তানোর ১২ হাজার ৫৮০ হেক্টর, গোদাগাড়ী ১৫ হাজার ৩৮৫ হেক্টর, চারঘাট ৩৪০ হেক্টর, বাঘা ৭০০ হেক্টর, পুঠিয়া ২ হাজার ৯০০ হেক্টর, দুর্গাপুর ৫ হাজার ৬১২ হেক্টর, মোহনপুর ৭ হাজার ৪৪০ হেক্টর, বাগমারা ১৯ হাজার ৬০৫ হেক্টর, পবা ৪ হাজার ৫৮৫, মতিহার ৪৩ হেক্টর ও বোয়ালিয়া ১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে।
কৃষি অফিস সূত্র আরো জানায়, এ বছর বোরো মৌসুমে সেচসহ সার্বিক বিষয়ে পরিবেশ অনুকূল থাকায় উৎপাদনে তেমন প্রভাব পড়বে না। ধানের ভাল ফলন হতে পারে।
তবে বোরো ধানের শিষ যখন ফোটার সময় হয় তখন দু’বার শিলা বৃষ্টি হয়। এতে ধানের ক্ষতি হতে পারে বলে শঙ্কা করছেন কৃষকরা। যার কারণে ফলন কম হওয়ার শঙ্কা কৃষকদের। ফলন কম হলে লোকসানের মুখে পড়তে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মার্চ মাসের শুরুর দিকে ও চলতি এপ্রিল মাসের ৫ তারিখ ও ১২ তারিখে রাজশাহীতে শিলা বৃষ্টি হয়। এই শিলা বৃষ্টিতে আমসহ মৌসুমি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ওই সময় বোরো ধানের শিষ ফুটছিল। শিলার কারণে শিষ বাড়ি খায়। তারপর থেকেই কৃষকরা শঙ্কায় রয়েছেন। কারণ কাঙ্খিত ফলন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তারা। বোরো ধানের ফলন নিয়ে রাজশাহীর তানোর উপজেলার আব্দুল আওয়াল নামের এক কৃষকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এবার বোরো ধান ভালই হয়েছে। কিন্ত ধান ফোটার সময় দু’বার শিলা বৃষ্টি হয়। শিলায় ধানের ক্ষতি হয়েছে। তাই ফলন কমও হতে পারে।
আরেক কৃষক বলেন, এর আগে আমন মৌসুমে ধান পড়ে যাওয়ার কারণে ফলন কম হয়েছে। তখন যে লোকসান হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। যদি এই বোরো ধানেও লোকসান হলে তা পুষিয়ে নেওয়া কঠিন হবে।
গোদাগাড়ীর উপজেলার আতিক নামের এক কৃষক বলেন, ধান ভাল হয়েছে। শেষ সময়ে এসে শিলা হয়েছে। তাতে ধানের ক্ষতি হতে পারে। তারপরও ভাল ফলনের আশা করছি।
নগরীর মতিহার এলাকার এক বলেন, এবার বোরো ধান ভাল হয়েছে। তবে কিছুদিন আগে শিলা বৃষ্টি হয়েছে। তাতে ধানের ক্ষতি হতে পারে। ক্ষতি হলে লোকসান হবে। কারণ ধান চাষ করতে এখন অনেক বেশি খরচ হয়।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, চলতি মৌসুমে বোরো ধান উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে তা হতে পারে। হালকা যে শিলা বৃষ্টি হয়েছে তাতে কোন ক্ষতি হবে না।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে