লালপুরা প্রতিনিধিঃ লালপুর তথা নাটোর জেলার সাংবাদিকতায় অনন্য ব্যাক্তিত্ব, বিশিষ্ট কলামিস্ট, লালপুর ও নর্থ বেঙ্গল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন নানা ভাই (৮৫) আর নেই। তিনি বুধবার রাত সাড়ে দশ টার সময় নাটোরের লালপুর উপজেলার গৌরীপুরস্থ নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে নানা রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন পুত্র,এক কন্যা, নাতি নাতনি সহ অসংখ গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) বাদ জোহর লালপুরের গৌরীপুর স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে। ২০১৭ সালে এই প্রতিবেদক তার সাক্ষাৎকার ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত জীবনী লিখেছেন, যা দৈনিক প্রাপ্তি প্রসঙ্গসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এখানে তার অংশ
বিশেষ তুলে ধরা হলোঃ
জন্ম পরিচয়ঃ মোসাদ্দেক হোসেন নানা ভাই ১৯৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সোমবার লালপুর উপজেলার গৌরীপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম মৃত ইব্রাহিম হোসেন পেশায় শিক্ষক ও মাতা সবুরজান নেছা গৃহিনী। ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে তিনি সর্ব কনিষ্ঠ।
মোসাদ্দেক হোসেন থেকে নানা ভাইঃ নানা ভাই উপাধী প্রসঙ্গে তিনি জানান, তৎকালীন সময়ে তিনিই সবার চাইতে বয়োজেষ্ঠ্য এবং সবার প্রিয় ছিলেন, সবার সাথে তার বন্ধুর মত সম্পর্ক। আর এ ঘনিষ্টতা থেকেই তার এ উপাধি।
সাংবাদিকতায় নানভাইঃ ছোট বেলা থেকেই তার লেখা লেখির হাত খুব ভালো ছিল। কৈশরে “চেতনার অবক্ষয়” নামের ৭২ লাইনের একটি কবিতা রচনা করেন। এর পর থেকে একা ধারে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ লেখা শুরু করেন। ধিরে ধিরে তার লেখার ধার, ভার সবই বাড়তে থাকে। সমাজের না অসঙ্গতি নিয়ে রচনা করেছেন অনেক গল্প,কবিতা ও প্রবন্ধ। এ ভাবে তিনি সাহিত্যে অনুপ্রবেশ করেন। দেশ ও মানুষের কল্যানে কাজ করার ইচ্ছা থেকেই সাংবাদিকতায় প্রবেশ। সমাজের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার কলম ছিল আপোসহীন। সাধারনত সকলে সাংবাদিক থেকে কলাম লেখক হয়, কিন্তু তার ক্ষেত্রে ঘটেছে এর উল্টো। তিনি প্রথমে পত্রিকার জগতে প্রবেশ করেন কলাম লেখক হিসাবে। ১৯৮০ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে কলাম লেখনির মাধ্যমে তিনি এ জগতে প্রবেশ করেন। ‘শ্রমে নারীর মর্যদা’ শিরোনামের লেখাটি তার প্রথম কলাম হিসাবে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় ছাপা হয়। পরবর্তিতে সেটি বাংলাবাজার পত্রিকায় পুনঃমুদ্রিত হয়। এর পর থেকে নিয়মিত লিখতে থাকেন। তার লেখা কলাম দৈনিক বাংলা বাজার, আজকের কাগজসহ তৎকালীন সময়ের বড় বড় পত্রিকায় ছাপা হতো। তখন থেকে প্রায় দুই দশক আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক লেখা ছাপা হয়েছে সে সকল পত্রিকায়। এ সময়ে তিনি দর্শন বিষয়ে গবেষনামুলক প্রায় অর্ধ শতাধিক পান্ডুলিপি তৈরী করেন। এছাড়া নাটোর ও লালপুরের মুক্তি যুদ্ধ নামে একটি পান্ডুলিপি তৈরি করেন যা মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি সম্বলিত পুস্তুকে স্থান করাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান ড. দেলোয়ার হোসেনের নিকট জমা আছে। তিনি ২০০০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন। শারিরিক অসুস্থতার কারনে এর পর তিনি পত্রিকায় কাজ করা ছেড়ে দেন, তবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লেখা লেখি করেছেন।
উল্লেখযোগ্য লেখাঃ তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি দুই শতাধিক কবিতা ও গল্প এবং পৌনে দু’শোর মত প্রবন্ধ রচনা করেন। এ ছাড়া দর্শনতত্ব সম্বলিত জীবনধর্মী প্রায় সাড়ে চার হাজার বহু বিচিত্র সংলাপের রচয়িতা তিনি। এসব কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। কিন্তু হৃদয়বান প্রকাশকের অভাবে তা বই আকারে প্রকাশ করতে পারেননি। তার উল্লেখযোগ্য কবিতা হলো অবলম্বন, সংকেত, রাঙ্গামাটির পথ,দিকভ্রান্ত প্রভিতি। উল্লেখযোগ্য গল্প গুলো হলো স্বর্গ নরকের মরন নাচ,নাভেতা,তরঙ্গ ভাঙ্গা তরী,হাসেম মাষ্টারের প্রেম ইত্যাদি। প্রবন্ধ-বিভ্রাটের বিভ্রম,পারের ঘন্টা, লজ্জাহীনের লজ্জা,অজ্ঞতার অতলে,ঈমান কেন বেঈমান, সহজ সরল ও সুন্দর মানুষ,তীরন্দাজের তীর, কার গোয়ালে কে দেয় ধুঁয়ো, ভ্রষ্টা মায়ের নষ্টা মেয়ে, পরকালের পঞ্চতত্ব, আলোকে অন্ধকার, হেঁসেল ঘরে ও কে, কাশিতে বিন্দাবনের বাঁশি, ধর্মের ভঙ্গি ও তার প্রকাশ ইত্যাদি। রম্যরচনাঃ প্রাণের বিড়ম্বনা। এ ছাড়াও তিনি প্রায় সাড়ে চার হাজারের মত সংলাপ লিখেছেন। তার লেখায় বিদ্রহের প্রকাশ রয়েছে।
দেশ ভ্রমনঃ তিনি একজন ভ্রমন পিপাষু মানুষ। জ্ঞ্যন অন্বেষনের জন্য তিনি ছুটে বেড়িয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। তিনি মায়ানমার,ভারত,পাকিস্থান ফিলিপাইন,ফিলিস্তিন,তুরস্ক,বুলগেরিয়াসহ মোট ১১ টি দশ সফর করেছেন।
তার অনেক দামি দামি পান্ডুলিপি আছে যা অর্থের সংকুলানের অভাবে বই আকারে ছাপাতে পারছেন না। যদি কেহ তার লেখা ছাপানোর ব্যবস্থা করে তবে আমাদের সমাজ ও দেশের সাহিত্য সমৃদ্ধ হবে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ