নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ৭ই মার্চ রাতে রাজশাহী মহানগরীর দড়িখড়বোনা এলাকায় বিএনপি’র দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের পারস্পরিক সংঘর্ষের সময় ছুরিকাঘাতে আহত রিক্সাচালক গোলাম হোসেন ওরফে রকি নিহতের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী পরিবানু বাদি হয়ে ১৩মার্চ (বৃহস্পতিবার) বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। বোয়ালিয়া থানা মামলা নং ১৩। উক্ত মামলার এজাহার কপি আমাদের হাতে এসেছে।
এজাহার কপি অনুযায়ী ৬ জন নামাঙ্কিত আসামির নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জনকে আসামী করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। রিকশা চালক গোলাম হোসেন হত্যা মামলার নাম ভূক্ত আসামীরা হলেন (১) মো: সোহেল রানা (৫০), (২)নাঈম(৪০) , (৩) মো: সুমন সরদার (৫০) (৪) মীর তারেক(৫০), (৫) মো: ফাইজুর রহমান ফাই(৫০) এবং (৬) মো: রনি (৩৮)। লিখিত এজাহারে পরিবানু উল্লেখ করেন গত ৭মার্চ রাত্রি আনুমানিক ৮টার সময় তার স্বামী গোলাম হোসেনকে আসামীরা চাকু,লোহার রড, বাঁশের লাঠি, কাঠের লাকড়ির চলা দিয়ে আঘাত করে। উপুর্যুপরি ছুরিকাঘাতে গোলাম হোসেনের শরীরে গুরুতর জখম হয়।
পরবর্তীতে তাকে গুরুতর অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ(রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হলে গত ১১মার্চ(মঙ্গলবার) রাত আনুমানিক ৭:৩০টার সময় গোলাম হোসেন চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান । বুধবার (১২মার্চ) নিহত গোলাম হোসেনের স্ত্রী পরিবানু সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, তার স্বামীকে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আপনারা হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করলেই সব দেখতে পারবেন কে কে আমার স্বামীর চিকিৎসায় বাধা দিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে তার স্বামী তাকে বলেছিলেন, “যারা আমাকে মেরেছে, আমি তাদের চিনি রে চিনি। সুস্থ হই, ক্লাবে মামাদের কাছে যাব। বলব, ‘মামা, আমি কী অপরাধ করেছিলাম? আমাকে এভাবে পঙ্গু করে দিলা? আমি আর কিছু কইরে খেতে পারব না তো আর।” পরিবানু জানান, তার পরিবার দড়িখড়বোনা এলাকায় প্রায় ১০ বছর থেকে ভাড়া থাকেন। তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে তার স্বামী গোলাম হোসেন হত্যার বিচার চান।
উল্লেখ্য, গত ৬ মার্চ নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় একটি বহুতল ভবনে বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ বাবু ওরফে ব্যাটারি বাবুর উপস্থিতির খবর পেয়ে দড়িখড়বোনা এলাকার মহিলা দলের নেত্রী লাভলী ও বিথি’র নেতৃত্বে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী উক্ত বহুতল ভবনটি ঘেরাও করে রাখেন। ভবনটির সিসি ক্যামেরার ফুটেজে মোস্তাককে তার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে ভবনে ঢুকতে দেখা গেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে সার্চ করে মোস্তাককে সেখানে পায়নি।
পরবর্তীতে সেখান থেকে মোস্তাক আহমেদের ভাই সাব্বির বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। মোস্তাকের ভাই সাব্বিরকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়াকে কেন্দ্র করেই গত ৭ মার্চ রাজশাহী মহানগরীর দড়িখড়বোনা এলাকায় শাহমখদুম থানা বিএনপির আহবায়ক সুমন সরদার ও সাবেক যুবদল নেতা মারুফ হোসেন জীবন এই দুই পক্ষের নেতা–কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটে। সংঘর্ষের সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে এবং কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ পাওয়া যায়। এ সময় বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে উঠে। সংঘর্ষের সময় এক সাংবাদিকের সহ মোট ৩টি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং সিটিএসবির সদস্য তোফাজ্জল সহ মোট ৮ জন আহত হয় বলে জানা যায়।
দুই গ্রুপের ধাওয়া পালটা ধাওয়ায় প্রায় চার ঘণ্টা ধরে দড়িখড়বোনা, উপশহর মোড়, রেলগেট, সপুরা ও শালবাগান এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবারের ভাষ্যমতে রিকশাচালক গোলাম হোসেন ওই রাতে দড়িখড়বোনা বিএনপি পার্টি অফিসের সামনে দিয়ে রিকশা রেখে হেঁটে ভাড়া বাসায় যাচ্ছিলেন। তখন শাহমখদুম থানা বিএনপির আহ্বায়ক সুমন সরদার ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মীর তারেক হোসেনের নেতৃত্বে থাকা বিএনপি কর্মীরা গোলাম হোসেনকে এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাত করেন। পরবর্তীতে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হলে তিনি চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান।
বিএ..