রাজশাহী প্রেসক্লাবের উদ্যোগে যথাযথ মর্যদায় মহান বিজয় দিবস পালিত হয়েছে। রাত ১২ টা ১ মিনিটে বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে রাজশাহী কলেজ শহীদ মিনারে প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়।
এরপর সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এতে বক্তারা বলেন, নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়। আর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের মধ্য দিয়ে জাতি আজ নতুন করে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করছে।
রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাপাতি জনাব নজরুল ইসলাম জুলুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ২০২৪ স্বাধীনতার সম্মুখ যোদ্ধা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টার অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসুদ।
রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ সুফি মহিব্বুল আরেফিনের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) সহকারী মহাসচিব ড. সাদিকুল ইসলাম স্বপন, রাজশাহী প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক আবু সালে মো. ফাত্তাহ্, রাজশাহী প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য সাবেক রাবি কর্মকর্তা আহমেদ শফি উদ্দীন, যুগ্ম সম্পাদক ডালিম হোসেন শান্ত, রাজশাহী বিক্রয় প্রতিনিধ কর্মচারী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. নাজমুল ইসলাম, সহ-সভাপতি মো. সুমন ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম শিপলু।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে চলা স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়ে শেখ হাসিনা ঢাকার রাজপথে জন বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে উৎখাত হন। ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর নিপীড়ন চালানোর জন্য তার সরকার ক্ষুব্ধ জনতার রাজনৈতিক রোষানলের মুখে পড়ে ভারতে পালিয়ে যান। স্বৈরশাসককে ক্ষমতাচ্যুত করতে গিয়ে শত শত ছাত্র-জনতা শাহাদাত বরণ করে, সাত শতাধিক মানুষ চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, অনেকে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খুইয়েছেন, কমপক্ষে ২৪ হাজার মানুষ গুলিবিদ্ধ হন, বিপুলসংখ্যক মানুষকে জোরপূর্বক গুমের শিকার হতে হয়েছে, অনেক আহত মানুষ এখনও হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন এবং অনেকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কালাতিপাত করছে। আজ স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বাংলাদেশের নবযাত্রায় জাতি নতুন উদ্যম ও উদ্দীপনা নিয়ে স্বাধীনতা দিবস পালন করছে। আজ এই সময়টাকে স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পর দেশবাসী এ সময়টাকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বলেও স্বীকৃতি দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী হঠাতে এবং শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের কবল থেকে প্রিয় মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে যেসব শহিদ সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে নতুন করে শপথ গ্রহণ করবে এটাই জাতির প্রত্যাশা। দেশের সার্বভৌমত্ত্ব রক্ষা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার পাশাপাশি সবাইকে একতাবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে দেশে গণহত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানানো হয়।
সবশেষ সভাপতির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম জুলু বলেন, আজ আমরা বিজয় উদযাপন করছি। কিন্তু এখনো বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। দেশ থেকে হচ্ছে, দেশের বাইরে থেকে হচ্ছে। মনে হয়, আবার যুদ্ধ হবে। স্বৈরাচারের দোসরদের ক্ষমা করা হবে না বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
এ দিনের সভায় রাজশাহী প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান, ক্রীড়া ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক আশিকুর রহমান, দৈনিক নতুন প্রভাতের মফস্বল সম্পাদক ওমর ফারুক, নির্বাহী সদস্য জাহিদ হাসান, রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আব্দুল হাকিমসহ অন্যান্য সাংবাদিক ও পেশাজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত করে দোয়া পরিচালনা করেন মো. নাজমুল ইসলাম।
বিএ..