কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘মন্তব্য’ ও মধ্যরাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের পাশের প্যারিস রোডে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। অবস্থান কর্মসূচি শেষে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। রবিবার কোটা আন্দোলন কে কেন্দ্র করে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে অবমাননা দাবি করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা আজ সারাদেশের সাথে সমন্বয় করে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। দুপুর ১ টায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।অবস্থান কর্মসূচি তে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন নিয়ে রোববার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন থেকে আসা বক্তব্যকে ‘অবমাননাকর’ আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ করে রাবি শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী কলেজে ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অনেক শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। অবস্থান কর্মসূচি থেকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা।শিক্ষার্থীরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আপত্তিকর। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের এই অবস্থান কর্মসূচি চলছে।রোববার দিবাগত মধ্যরাতেও শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে। অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ‘তুমি নও, আমি নই, রাজাকার রাজাকার”চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘কে বলেছে কে বলেছে, সরকার, সরকার’, ‘এক দুই তিন চার, মেধাবীরা রাজাকার’, ‘কে বলেছে কে বলেছে, সরকার সরকার,’— স্লোগানে রাবি ক্যাম্পাস মুখরিত করে তোলে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে
সোমবার বিকাল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে ছাত্রলীগের দলীয় টেন্টে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের হুঁশিয়ারি করে বলেন, এখন থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের আর কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেবে না রাবি ছাত্রলীগ। যদি কোটা আন্দোলনকারীরা মাঠে নামে তাহলে প্রতিহত করা হবে। ছাত্রলীগ সভাপতি আরও বলেন,সেখানে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বলেন, রাবি ছাত্রলীগ সর্বোচ্চ ভদ্রতা দেখিয়েছে। সর্বোচ্চ ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে। এবার যদি জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা আর একবার রাজাকার বলে স্লোগান দেয় তাহলে রাবি ছাত্রলীগ আর ছাড় দেবে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ছাত্রলীগ কাজ করছে এবং করবে। আমি নির্দেশ দিচ্ছি আপনারা এখন থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকবেন, যাতে এই জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা আর সাউন্ড না
করতে পারে।
এইদিকে, সোমবার বিকেল সাড়ে ৬টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্স ভবনের সামনে কোটা আন্দোলনের জেরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের ৪ নেতা-কর্মীর ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। হামলায় আহত চার নেতা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক তারেক আশরাফ, ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকার, ছাত্র ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব হাসান ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পাসের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা একজোট হয়ে ক্যাম্পাসে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। একপর্যায়ে তারা ডিনস কমপ্লেক্স ভবনের সামনে গেলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মোটরসাইকেলে করে গিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। মারধর করার সময় তাদের হলে চলে যেতে বলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এই ঘটনার অন্যতম
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মনু মোহন বাপ্পা বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। এ রকম কোনো বিষয়ে আমার জানা নেই।’
হামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, বিষয়টি শুনেছি। তবে ছাত্রলীগের কে বা কারা এ হামলা চালিয়েছে সেটি এখনো জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’ সব মিলিয়ে রাবি ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও রাবি ছাত্রলীগের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
বিএ…