গত ২২শে জুন শনিবার বাঘার পৌরমেয়র আক্কাস আলীর অনিয়ম ও দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে শনিবার সকাল ১০টায় বাঘা উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগ।
ঠিক একই সময়ে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখকদের আধিপত্য বিস্তার, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং দলিল প্রতি অতিরিক্ত ফী আদায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা করেন আক্কাস আলী ও তার সমর্থকরা। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির এক পর্যায়ে বাঘা উপজেলা পরিষদের সামনে সংঘর্ষ শুরু হলে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এই সময় উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ইটপাটকেল, পাথর নিক্ষেপসহ বেশ কয়েকটি হাতবোমা বিস্ফোরণ করা হয়। উভয়পক্ষের উত্তেজিত সমর্থকেরা ধারালো অস্ত্র, লোহার পাইপ নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়ে।পরে পুলিশ লাঠিপেটা ও কাদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। উক্ত সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছিলেন।
আহতদের মধ্যে ১৮ জনকে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল ও আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে গত ২৬শে জুন বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবির পরিচর্যা কেন্দ্রে ( আইসিইউতে) চিকিৎসারত অবস্থায় মাথায় আঘাত প্রাপ্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মৃত বাবুলের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাঘা পৌরসভার ৫ নম্বর ওযার্ডের গাঁওপাড়া গ্রামে পারিবারিক গোরস্থানে বাবা আমিরুল ইসলাম আমুর কবরের পাশে ছেলে বাবুলকে দাফন করা হয়।জানাজা নামাজের আগে জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন আ. লীগ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মরহুমকে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।
বাবুল হত্যাকাণ্ড কে কেন্দ্র করে জানাজার পূর্বমুহূর্তে স্থানীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ও বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রাক্তন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের দেওয়া বক্তব্যে রাজশাহী আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রাঙ্গণ ফের সরগরম হয়ে উঠেছে। শাহরিয়ারের দেওয়া বক্তব্যে শাহরিয়ায়-লিটন কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। মরদেহ সামনে রেখে বক্তব্য দেওয়ার সময় এমপি শাহরিয়ার বাবুল নিহতের ঘটনায়
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ-সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ এবং বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলুকে দোষারোপ করেছেন। তার হত্যায় এ তিন নেতার মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এসকয় শাহরিয়ার আলমের পাশেই ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আব্দুল ওয়াদুদ (দারা), জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর ইকবাল, রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও এলাকাবাসী অংশ নেন।
জানাজার আগে শাহরিয়ার আলম বলেন, খুনি আক্কাছ, খুনি মেরাজ। তাদের পেছনে মদদদাতা আছে। দুই বছর আগে আক্কাছ বহিষ্কৃত হয়েছিল আওয়ামী লীগ থেকে। খায়রুজ্জামান লিটন নিজের মুখে সেই কথা এখানে বলেছিলেন। এস এম কামাল বলেছিলেন সে বহিষ্কৃত। এই ঘোষণার সাত দিনের মাথায় খায়রুজ্জামান লিটনের গাড়িতে আক্কাছ ও মেরাজকে ঘুরতে দেখা গেছে। আমরা জবাব চাই, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে। তিনি আজ জানাজায় অনুপস্থিত কেন? তাঁর সৎসাহস নেই কেন? অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিনের (লাভলু) কাছে জবাব চাই, সে কেন আজ পলাতক? খুনের মামলায় দুজন সশরীর উপস্থিত ছিল। পেছন থেকে মদদদাতা হিসেবে আসাদুজ্জামান, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান, লায়েব উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হবে। তাঁদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।’
বাঘা শান্তিপূর্ণ জায়গা উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, বাঘা শান্তিপূর্ণ জায়গা, পুণ্যভূমি। সেই বাঘাকে অশান্ত করার অপচেষ্টা শুরু আজ থেকে দু–তিন বছর আগে। এর আগে একাধিক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে আরও অনেকেই মারা যেতে পারত। তাঁরা ছাড় দিয়েছেন বারবার। কখনো বাবুলের (আশরাফুল ইসলাম) ওপর দিয়ে গেছে, কখনো অন্যদের মাথার ওপর দিয়ে গেছে। আজ বাবুলের জীবনের ওপর দিয়ে গেল। তারা অব্যাহতভাবে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি চেষ্টা করছে।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘কারা বাঘা থেকে রাজশাহীতে গিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে? আমি প্রশাসনকে বলব- এই যে ব্যক্তি কয়েকজনের নাম বললাম, আসামিদের টেলিফোন নাম্বারের সাথে, সাতদিনের টেলিফোন কল মিলায়ে নিবেন। তাদের সাথে যদি দিনে পাঁচবার করে কথা না হয়, আমি সংসদ সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে যাব। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি প্রশাসনকে।’ জানাজায় গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন লিটনের অনুসারী রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল সরকার। তাকে সেখান থেকে হাত ধরে টেনে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার সঙ্গে সভাপতি অনিল কুমারের মতবিরোধ রয়েছে।
অনিল কুমার সরকার অভিযোগ করেছেন, তাঁকে শারীরীকভাবে লাঞ্ছিত করে জানাজার স্থান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নিহত বাবুলকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি ফুলের ডালাও নিয়ে গিয়েছিলেন। সেটিও মরদেহে দিতে দেওয়া হয়নি।
অনিল কুমার সরকার বলেন, ‘আমাকে দেখে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পুঠিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ মোল্লা অপমানজনক কথা বলেন। আমাকে বলা হয়, “আপনি এখানে কেন? আপনি বেরিয়ে যান।” এরপর পুঠিয়া উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি রাজিবুল হক হাত ধরে টেনে আমাকে সেখান থেকে বের করে দেয়।’
এদিকে শাহরিয়ারের অভিযোগের তীব্র এর প্রতিক্রিয়ায় রাজশাহী সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ রকম একটি নিন্দনীয় ঘটনার সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকার কোনো কারণ নেই, যুক্তি নেই। জানাজায় তাঁকে জড়িয়ে, তাঁর নাম-পদবি উল্লেখ করে আরেকজন সংসদ সদস্য আরও কয়েকজনকে জড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি (শাহরিয়ার) যে এ রকম হিংসাপরায়ণ হয়ে এমন একটি মন্তব্য করতে পারেন, এটা তাঁর বোধগম্য নয়। কিছুদিন আগেও তিনি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। জানাজার মতো একটি পবিত্র জায়গায় তিনি এভাবে মামলা করা হোক, কললিস্ট চেক করা হোক, এ রকম ঘটনা খুব কমই শুনেছেন। তিনি এটা কোন উদ্দেশে করেছেন, এটা তিনিই বলতে পারবেন।
এ এইচ এম খায়রুজ্জামান আরও বলেন, ‘এ ঘটনা খুবই কষ্টকর। আমরা ত্যাগী নেতাকে হারালাম। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত চাই, বিচার চাই। মনে হচ্ছিল যেন এই লাশটির দরকার ছিল একটি রাজনৈতিক পক্ষের। যেটাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কোনো প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা যায়। এ রকম একটা ষড়যন্ত্র বা চক্রান্ত একটা গোষ্ঠীর ছিল বা আছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। এ লাইনেও এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার।’
জানাজায় না যাওয়ার বিষয়ে খায়রুজ্জামান বলেন, আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর গতকাল তিনি সন্ধ্যায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছেন। সেখানে তাঁর সন্তানকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। জানাজায় যাওয়ার তাঁর ইচ্ছা ছিল। আজকে সিটি করপোরেশনের পূর্বনির্ধারিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ সভা ছিল। যেগুলো বাতিল করা সম্ভব হয়নি। ‘
জানাজায় আসার সৎ সাহস নেই কেন—শাহরিয়ার আলমের এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. লায়েব উদ্দীন (লাভলু) বলেছেন, ‘বাঘার মানুষ আমাকে কিছুদিন আগে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। আমার সৎ সাহস আছে কি না তা বাঘার মানুষ ভালো করেই জানেন। জানাজায় দাঁড়িয়ে লাশ সামনে নিয়ে অপরাজনীতি করছেন শাহরিয়ার আলম। আমরা সেই রাজনীতি করি না।’
লায়েব উদ্দীন আরও বলেন, ‘আমরা জনগণের ও দলিল লেখকদের ন্যায্য দাবির সমর্থন দিয়ে তাঁদেরই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছিলাম। এতেই তাঁদের জ্বালা ধরে যায়। তাঁরা আক্কাছের দুর্নীতি নিয়ে পরের দিনই পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করলেন এবং সংঘাতে জড়ালেন। শাহরিয়ার আলম আজ লাশ সামনে নিয়ে রাজনীতি করছেন। এই পাল্টা কর্মসূচির মদদদাতা কে, এটা বাঘার সবাই জানেন।’
লিটন সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়ে বলেন, ‘আমরা যারা আওয়ামী লীগের রক্ত নিয়ে বড় হয়েছি, তাদেরকেই এখন হেনস্থা করার অপচেষ্টা করছেন নতুনেরা।’ তিনি দলের প্রকৃত ও ত্যাগী নেতাদের হেনস্থা করার অভিযোগ করেন হাইব্রিড নেতাদের উপর।
শাহরিয়ার আলমের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘বাবুল ত্যাগী নেতা। তাঁর খুনের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, সবার বিচার হওয়া উচিত। সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম আমাদের মদদাতা হিসেবে উল্লেখ করে সাতদিনের কলরেকর্ড তুলতে বলেছেন। আমি ডিআইজি-এসপিকে ফোন করে বলেছি, সাতদিন না, সাত মাসের কল রেকর্ড তুলে দেখেন।’
আসাদ বলেন, ‘শাহরিয়ার সাহেব যা বলেছেন, তা তাঁকে প্রমাণ করতে হবে তা না হলে তাকেও মামলার মুখোমুখি হতে হবে।’
এদিকে এমপি শাহরিয়ার আলমের বক্তব্য রাজশাহী আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক প্রাঙ্গণে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে। শাহরিয়ারের বক্তব্যের প্রতিবাদে তাকে
রাজশাহী মহানগরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।শুক্রবার (২৮ জুন) বিকেলে নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে আয়োজিত সমাবেশে মহানগর যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা শাহরিয়ারের কুশপুত্তলিকায় আগুন দেন। এর আগে, নগরীর কুমারপাড়ায় মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলকে হত্যার বিচারের দাবিতে এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে নিয়ে শাহরিয়ার আলমের আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালিত হয়।কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর যুবলীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির। তিনি বলেন, ‘শাহরিয়ার আলম হেলিকপ্টারে চড়ে ঢাকা থেকে বাঘা যাতায়াত করেন। বাবুল আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পড়ে ছিলেন। তাকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় নিয়ে যাননি। চিকিৎসার কোনো খোঁজ নেননি। বাবুল মারা যাওয়ার পর তিনি বাঘায় কোথা থেকে যেন ছুটে এসেছেন। আসলে রাজনীতি করার জন্য শাহরিয়ার আলমের একটা লাশের প্রয়োজন ছিল। সেই লাশ নিয়ে তিনি এখন রাজনীতি করছেন। বাবুলকে কারা হত্যা করেছে, আমরা তার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’
জেলা যুবলীগের সভাপতি মাহমুদ হাসান ফয়সল সজল বলেন, ‘শাহরিয়ার আলম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি দলের একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যকে নিয়ে যে ধরনের মন্তব্য করেছেন, তা তিনি করতে পারেন না। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে আলাপ করেই এ কর্মসূচিতে এসেছি। কেন্দ্র বলেছে, শাহরিয়ার আলমের এ ধরনের কথা বলা সাজে না। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিকে বলব, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য যেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি শাহরিয়ার আলমকে রাজশাহী শহরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বলেন, ‘একটা উপজেলার সভাপতি দলের প্রেসিডিয়াম মেম্বারকে নিয়ে কথা বলার দুঃসাহস কোথায় পান? সাহস পাচ্ছেন এ শহরের কিছু কুলাঙ্গারের কারণে। তারপরেও আপনাকে আজ রাজশাহীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। খায়রুজ্জামান লিটনকে নিয়ে আর একবার বাজে কথা বললে আপনি রাজশাহীতে ঢুকতে পারবেন না।’
মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক বলেন, ‘শাহরিয়ার আলম জাসদ, বিএনপি করে আওয়ামী লীগে ঢুকেছেন। তিনি হাইব্রীড। আওয়ামী লীগে ঢুকে তিনি ব্যবসা বাড়িয়েছেন। কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার পক্ষেই দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতাকে নিয়ে আপত্তিকর কথা বলা সম্ভব। তিনি যে কথা বলেছেন, তা তাকে সাতদিনের মধ্যে প্রমাণ করতে হবে। তা না করতে পারলে আমরা ধরে নেব, শাহরিয়ার আলম প্রতারক।’
তিনি বলেন, ‘শাহরিয়ার আলম পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছিলেন। তার প্রার্থী হেরেছেন। আক্কাস মেয়র হয়েছেন, লাভলু উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন। নির্বাচনে শাহরিয়ার নিজে কীভাবে জিতেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। শাহরিয়ার আলমের বউ তাকে ছেড়ে চলে গেছে। এসব কারণে তার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তিনি আবোল-তাবোল বকছেন।’
সব মিলিয়ে রাজশাহীর রাজনৈতিক প্রাঙ্গণ আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল হত্যাকান্ড কে ঘিরে পাল্টাপাল্টি অভিযোগে বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে। এর ফলে রাজশাহীর স্থানীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যকার কোন্দল প্রকাশ্যে রুপ নিয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় সেদিন রাতেই থানায় মামলা করেন উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি পিন্টু। এ মামলায় বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলীসহ ৪৬ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক ২০০-৩০০ জন অজ্ঞাত জন কে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় পুলিশ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা মেরাজুল ইসলাম এখন কারাগারে রয়েছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে মেয়র আক্কাস আত্মগোপনে রয়েছেন বলেও জানা যায়।
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, সংঘর্ষের দিন আশরাফুল ইসলাম বাবুলকে কুপিয়ে ফেলে রাখা হয়েছিল। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মারামারির ঘটনায় যে মামলাটি হয়েছিল, সেটিই এখন হত্যা মামলায় রূপ নিয়েছে।শুক্রবার (২৮ জুন) দুপুরে বাবুলকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজ-সহ ৭ আসামির একদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সোয়েব খান ২৩ জুন তাদের রিমান্ড আবেদন করলে আসামিদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। মামলায় গ্রেফতার ৭ আসামিকে এক দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে প্রেরণ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাঘা থানা পুলিশের ভারভাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম।
বিএ…