1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
চুরি ও ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন পাচার হচ্ছে বিদেশে - খবর ২৪ ঘণ্টা
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩২ পূর্বাহ্ন

চুরি ও ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন পাচার হচ্ছে বিদেশে

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৩ মারচ, ২০২৪

রাজধানীর রমনা পার্কে মোবাইল ফোন হারিয়ে ফেলেন কাপল ব্লগ করা এক দম্পতি। ফোনসেটে ব্যক্তিগত কিছু ছবি ও ভিডিও ছিল। তাতেই হলো বিপদ। তিন ধাপে লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েও সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় (ভাইরাল) এক দুর্বৃত্ত। এতে মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছিলেন তাঁরা।

মোবাইল ফোনসেট হারানোয় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এবং ভিডিও-ছবি ভাইরাল ও টাকা আদায়ের ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টারে অভিযোগ করেন। কিন্তু দুই মাসেও ফোনসেট উদ্ধার হয়নি এবং ওই দুর্বৃত্তও ধরা পড়েনি। মোবাইল খোয়া যাওয়ায় এমন বিপদে আরও অনেকে পড়ছেন। তবে বেশির ভাগই পুলিশ পর্যন্ত যান না। আবার অনেকের মোবাইলে থাকে গুরুত্বপূর্ণ নথি। মোবাইল হারালে তাঁরাও পড়েন বিপদে।

পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রের তথ্য, রাজধানীতে প্রতি মাসে গড়ে ১১ হাজারের বেশি মোবাইল ফোন চুরি হয়, ছিনতাই হয় বা হারায়। অর্ধেকের বেশি ভুক্তভোগীই এ নিয়ে থানায় আসেন না। যাঁরা জিডি করেন তাঁদের মোবাইল উদ্ধারের সংখ্যাও নামমাত্র। অন্য ব্যস্ততা থাকায় মোবাইল উদ্ধারে পুলিশের সময়ও কম। পুলিশ বলছে, খোয়া যাওয়া দামি মোবাইলের অর্ধেকের বেশি চলে যাচ্ছে বিদেশে। তাই এগুলোর হদিস পাওয়া যায় না। কম দামি মোবাইল আইএমইআই বদলে দেশেই বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়। চুরি ও ছিনতাই হওয়া ফোনসেট উদ্ধার করতে না পারা নিয়ে গত সোমবার পুলিশ সদর দপ্তরে অপরাধ পর্যালোচনা সভায়ও আলোচনা হয়। সভায় পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. আতিকুল ইসলাম হারানো মোবাইল উদ্ধারে অভিযান জোরদার করতে এবং মোবাইল ছিনতাই/চুরি প্রতিরোধে টহল বাড়াতে পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেন।

খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনসংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে কাজ করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। জানতে চাইলে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মাদ আলী  বলেন, মোবাইল হারানো অর্ধেকের বেশি মানুষই থানায় জিডি করেন না। যাঁরা আসেন, তাঁদের মোবাইল ছিনতাই বা চুরি হলেও হারিয়ে গেছে দাবি করে জিডি করেন। জিডি করার কারণে গুরুত্ব কম থাকায় মোবাইল উদ্ধার হয় না। তিনি বলেন, মামলার সংখ্যা কমানোর জন্য থানার পুলিশ জিডি করতে উৎসাহ দিলেও মোবাইল ছিনতাই হলে মামলা করতে হবে। গত বছর সিআইডির কাছে প্রায় দেড় হাজার অভিযোগ আসে। এর মধ্যে ৪৭১টি মোবাইল উদ্ধার হয়েছে। তিনি যাচাই ছাড়া পুরোনো মোবাইল না কেনারও পরামর্শ দিয়েছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীতে মোবাইল ফোন ছিনতাই ও চুরির ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে ৯ মার্চ ডিএমপির ৫০টি থানায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ৮ মার্চ (শুক্রবার) সাপ্তাহিক ছুটির দিনেই মোবাইল ফোন হারানো নিয়ে এসব থানায় ৩৭১টি জিডি হয়। এ হিসাবে প্রতি মাসে মোবাইল খোয়া যাওয়ার সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ হাজার ১৩০টি। আর বছরে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৬০টি। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কর্মব্যস্ত দিনে মোবাইল হারানোর জিডি হয় আরও বেশি। ভুক্তভোগীদের অর্ধেকের বেশি জিডি না করায় মোবাইল খোয়া যাওয়ার প্রকৃত সংখ্যা জিডির দ্বিগুণের বেশি।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনসেটটি যদি অন্য কেউ ব্যবহার করে, তবেই সহজে সেটি উদ্ধার করা সম্ভব, না হলে নয়।

পুলিশ বলছে, মোবাইল ছিনতাই, চুরি বা হারানো গেলে সেই মোবাইলে থাকা সবকিছু চলে যায় অপরাধীর হাতে, যা দিয়ে দুর্বৃত্তরা ভুক্তভোগীকে ব্ল্যাকমেল করে। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে মোবাইল হারিয়ে এমন ঘটনারই শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের এক শিক্ষার্থী। শাহবাগ থানায় জিডি করেন। কিন্তু মোবাইলে থাকা ব্যক্তিগত ছবি দিয়ে তাঁকে ভয় দেখিয়ে টাকা চায় এক দুর্বৃত্ত। তিনি শাহবাগ থানায় হয়রানির মামলা করেন। কিন্তু ফল হয়নি। উল্টো ছবি ভাইরাল করার হুমকি পাচ্ছেন এখনো।

এমন চক্রের ২০ জনকে সিআইডি গ্রেপ্তার করেছে। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, কুমিল্লা থেকে রাজিব নামের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছেন তাঁরা। রাজিবের কাজই হলো চোরাই মোবাইল কিনে সেখানে থাকা ছবি দিয়ে মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায় করা। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কোনো ছবি, ভিডিও বা ডকুমেন্ট মোবাইলে সংরক্ষণ না করাই ভালো। এতে মোবাইল হারালেও বাড়তি বিপদের ঝুঁকি থাকে না। তারপরও এমন কিছু হলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাতে হবে।

৮ মার্চ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হওয়া জিডি অনুযায়ী, সে দিন সবচেয়ে বেশি মোবাইল খোয়া যায় মিরপুর, মোহাম্মদপুর, শাহবাগ ও খিলগাঁও থানা এলাকায়। সর্বোচ্চ মিরপুরে ২১টি। বাকি তিন থানায় ১৮ থেকে ২০টি। তবে অন্যান্য থানা এলাকায়ও গড়ে আটটি মোবাইল খোয়া গেছে।

পুলিশ ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্পর্শকাতর ও ব্যক্তিগত এবং প্রয়োজনীয় নথি মোবাইলে না রাখাই ভালো। হারানো মোবাইলে থাকা তথ্য উদ্ধারের বিষয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর জোহা হাসান বলেন, মোবাইলের কোনো তথ্য সংরক্ষণ করলে সেটা জিমেইলের সঙ্গে সংযুক্তি আছে এমন জায়গায় রাখা উচিত। এতে ওই ডিভাউস হারিয়ে গেলেও ই-মেইল আইডি দিয়ে সেটা উদ্ধার করা সম্ভব।

৩-৫ সেকেন্ডে আইএমইআই বদল
ডিবি পুলিশ জানায়, একটি চক্র চোরাই মোবাইলের ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি নম্বর বা আইএমইআই নম্বর বদলে ফেলে বাজারে বিক্রি করে। আইএমইআই নম্বর বদল করায় হারানো মোবাইলের অবস্থান শনাক্ত করা যায় না। চক্রটি আইএমইআই নম্বর বদল করতে খুব দক্ষ। বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে ল্যাপটপের সঙ্গে সংযুক্ত করে মাত্র ৩ থেকে ৫ সেকেন্ডেই তাঁরা আইএমইআই নম্বর বদলে ফেলে। সম্প্রতি রাজধানীতে এমন একটি চক্রের কয়েকজনকে আটক করা হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা অপরাধ।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি ও সম্প্রতি অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত (অপরাধ ও অপারেশন) আনোয়ার হোসেন বলেন, হারানো ফোনসেট ফিরে পাওয়াসহ সাইবার অপরাধ ঠেকাতে একটি ‘সাইবার থানা’ স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিল সিআইডি। সাইবারে অপরাধ কমাতে এমন একটি থানা চালুতে জোর দিচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তর।

দামি মোবাইল পাচার হয় বিদেশে
ডিএমপি ও সিআইডির কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশে চুরি হওয়া মোবাইল ফোনসেটগুলো কয়েকটি হাত বদল হয়। খোয়া যাওয়া দামি মোবাইলের অর্ধেকের বেশি চলে যাচ্ছে বিদেশে, আন্তর্জাতিক চক্রের কাছে। সেগুলো পাচার হচ্ছে ভারত, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে। গোয়েন্দা পুলিশ চুরি হওয়া মোবাইল বিদেশে পাচার করা একাধিক চক্রের সন্ধান পেয়েছে। সম্প্রতি বাড্ডা থেকে এমন একটি চক্রের ৯ জন ভারতীয়সহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন রাজা শাও, পঙ্কজ বিশ্বাস, উৎপল মাইটি, দীপঙ্কর ঘোষ, রাজু দাস, সুজন দাস, এস কে আজগর আলী, লারাইব আশ্রাব, সমরজিৎ দাস এবং বাংলাদেশি মুরাদ গাজী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা বলেছেন, তাঁরা চোরাই ফোনসেট কিনে চক্রের মাধ্যমে ভারতের পাশাপাশি মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে বিক্রি করেন। এসব মোবাইল মূলত অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই চক্র আইফোন, স্যামসাংসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দামি স্মার্টফোন চুরি করে ভারতে পাচার করছে। সেখান থেকে অন্য দেশে পাচার হচ্ছে। এ কারণে দেশে মোবাইল ফোন হারালে বা চুরি গেলে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

অনাগ্রহের মধ্যে ব্যতিক্রম
অনেক জিডি হলেও মোবাইল ফেরত পাওয়া যায় হাতে গোনা। পুলিশের সূত্র বলছে, নানা কাজের ব্যস্ততায় হারানো মোবাইল খুঁজতে পুলিশের আগ্রহ কম থাকে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়মিত কাজ এত বেশি থাকে যে হারানো মোবাইল খোঁজার সময় পান না।

অবশ্য এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও আছে। দেশের বিভিন্ন থানার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা মোবাইল উদ্ধারে সাফল্যও দেখিয়েছেন। তাঁদের একজন খিলগাঁও থানার উপপরিদর্শক মিল্টন কুমার দেব দাস। তাঁর দাবি, গত আট-নয় বছরে তিনি ৬ হাজারের বেশি মোবাইল ফোনসেট উদ্ধার করেছেন। এই দক্ষতার জন্য অনেকে তাঁকে নামে চেনেন। কেউ কেউ ডাকেন ‘মিল্টন কেডি’ বলে। তিনি বলেন, যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি বা বিদেশে পাচার না হলে হারানো মোবাইল খুঁজে পাওয়া যায়।

জ/স

পোস্টটি শেয়ার করুন

এ ধরনের আরো খবর

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By SISA HOST