খবর২৪ঘণ্টা.কম, ডেস্ক: পহলে দর্শন ধারি, ফির গুণ বিচারি।’
আজ নয়। বছরের পর বছর ধরে এই ধারণা সকলের মনের মধ্যে গেঁথে রয়েছে। সবাই চান নিজেকে সুন্দর দেখাতে। কিন্তু সব সময় কি তা সম্ভব হয়?
হয় না। বরং কখনও জন্মগত কারণে, কখনও আবার দুর্ঘটনা জনিত কারণে আমাদের শরীরের কোনও অংশের বিকৃতি ঘটে। আর সেই বিকৃতিকে মুছে ফেলতে বহু বছর আগে কসমেটিক্স সার্জারির প্রবর্তন করেছে চিকিৎসা বিজ্ঞান।
যদিও সেই চিকিৎসা খরচ সাপেক্ষ। সাধারণের নাগালের বাইরে। তাই সাধ হলেও সাধ্য থাকে না অনেকের।
এবার সেই কসমেটিক্স সার্জারিকেই সুলভ করার ব্যবস্থা করছে কলকাতার একদল বিজ্ঞানী। বেশ কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় তাঁরা আবিষ্কার করে ফেলেছেন কসমেটিক্স সার্জারির অন্য উপায়। বিজ্ঞানীরা জানালেন, এতদিন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শরীর থেকেই কার্টিলেজ নিয়ে কসমেটিক্স সার্জারি করা হত। এবার সেই পদ্ধতি বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে ছাগলের কানের কার্টিলেজ।
পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. পূর্ণেন্দু বিশ্বাস জানালেন, এই কাজ দু’টি ভাগে ভাগ করে করা হয়েছে। প্রথম ভাগটিতে ছাগলের কানের কার্টিলেজকে কসমেটিক্স সার্জারির জন্য উপযোগী করা হয়েছে। এই কাজ তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন প্রাণী বিজ্ঞানী করেছেন। সেই দলে ছিলেন ড. বিকাশকান্তি বিশ্বাস, প্রফেসর শুভাশিস বটব্যাল, পিয়ালি বিশ্বাস। আর এই গবেষণার মুখ্য গবেষক ছিলেন প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সমিতকুমার নন্দী। এই বিজ্ঞানীরা ছাগলের কার্টিলেজকে কসমেটিক্স সার্জারির জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলার পর তা মানুষের উপর প্রয়োগের কাজটি হয়েছে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেই কাজ করেছেন ওই হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারির সার্জেন অধ্যাপক রূপায়ণ ভট্টাচার্য।
রূপায়ণবাবু জানালেন, ইতিমধ্যেই বেশ কিছু মানুষের নাক ও কানের সমস্যা সমাধানে কসমেটিক্স সার্জারি করতে ছাগলের কানের কার্টিলেজ ব্যবহার করা হয়েছে। আর এই কাজ সাফল্যের সঙ্গেই তাঁরা করেছেন বলে রূপায়ণবাবু জানিয়েছেন।
এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ড. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানালেন, মুখে এখন ব্যাখ্যা করা যতটা সহজ মনে হচ্ছে। কাজটা মোটেও এতটা সহজ ছিল না। কারণ, কার্টিলেজ অন্য যে শরীরে প্রতিস্থাপন করা হবে, সেই শরীরের সঙ্গে খাপ খাচ্ছে কি না, সেটাও দেখা জরুরি। সেই কাজও তাঁদের করতে হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। খাপ খাওয়ানোর বিষয়টিতে তার পরই সাফল্য মেলে।
তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না, সেদিকেও নজর রাখতে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। এর জন্য প্রয়োজনীয় সমস্তরকমের জৈব রাসায়নিক পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানালেন ড. শুভাশিস বটব্যাল। তার পরই এটা প্রাণী ও মানুষের উপর প্রয়োগ করা হয়।
গবেষণার মুখ্য গবেষক সমিতকুমার নন্দী জানালেন, এই কাজে প্রশাসনিক সাহায্য পেয়েছেন তাঁরা। গবেষণার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৪৪ লক্ষ টাকা। গবেষণার এই সাফল্যের পর তাঁরা চান এর পেটেন্ট নিতে। সেই পেটেন্টের জন্য তাঁরা এবার আবেদন করবেন বলে অধ্যাপক নন্দী জানালেন।
শুধু পেটেন্ট নেওয়াই নয়, ওই বিজ্ঞানীরা চান মানুষের মধ্যে সফল ভবে প্রয়োগ হোক এই পদ্ধতি। আর তা হবে বলেই আশাবাদী ড. বিকাশকান্তি বিশ্বাস। তিনি জানালেন, ছাগলের কান ফেলে দেওয়া হয়। ব্যবহার করা হয় না। তাই ওই কার্টিলেজ ব্যবহারের খরচ অনেক কম। তাই কসমেটিক্স সার্জারির নাম শুনলেই সাধারণ মানুষ যেভাবে খরচের কথা ভেবে পিছিয়ে যেতেন। এবার তা হবে না। বরং এখন থেকে কসমেটিক্স সার্জারি চলে আসবে সাধারণের নাগালের মধ্যে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ