খবর২৪ঘণ্টা.কম, ডেস্ক: ময়মনসিংহের গৌরীপুরে চার সন্তানকে হত্যার পর স্ত্রীকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে রিপন চৌহান নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে রিপন তার স্ত্রী রীতা চৌহানের উপর গরম পানি নিক্ষেপ করেন। জীবন বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ দেন রীতা। পরে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনার ৪দিন অতিবাহিত হলেও স্বামী বা তার পরিবারের লোকজন সোমবার পর্যন্ত হাসপাতালে রীতার কোন খোঁজ খবর নেয়নি।
পুর্বধলা উপজেলার হারধলা গ্রামের মৃত কানাই চৌহানের কন্যা রীতা চৌহান জানান, প্রেমের সম্পর্ক সূত্র ধরে প্রায় ১৩বছর পূর্বে বোকাইনগর ইউনিয়নের মমিনপুর গ্রামের শ্রীরাম চৌহানের পুত্র রিপন চৌহানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এ বিয়ে তার পরিবারের লোকজন মেনে নিতে চায়নি।
রীতা বলেন, ভাসুর পল্লাদ চৌহান ও শাশুড়ী কুসুমি চৌহান ষড়যন্ত্র করে আমাকে জোরপূর্বক তাড়িয়ে দিতে চেয়েছিলো। তাড়াতে না পারায় স্বামী আমার চার সন্তানকে মেরে ফেলেছে।
তিনি বলেন, বিয়ের ৩বছরে মাথায় প্রথম সন্তান সূর্য চৌহানকে ১৯মাস বয়সে পানিতে ডুবিয়ে মেরে ফেলেছে। ৫ বছরের মাথায় দ্বিতীয় সন্তান জয় চৌহানকে ১২মাস বয়সে ঘরের ভিতর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। পাখি চৌহান নামে আরেক সন্তানকেও পানিতে ফেলে মেরে ফেলেছে। অমর চৌহানের সঙ্গে জমজ জন্ম নেয়া শ্রাবনী চৌহানকেও ১৩দিন বয়সে মেরে ফেলা হয়েছে। সংসার টিকিয়ে রাখতে ও পরিবারের লোকজনের চাপে সন্তান হত্যার বিচারও চাইতে পারি নাই।
রীতা চৌহান জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার পর তার শাশুড়ির সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাকে মেরে ফেলতে তার স্বামী রিপন চৌহান পাতিলভর্তি গরম পানি পুরো শরীরে ঢেলে দেন। এ সময় বাঁচার জন্য দগ্ধ শরীর নিয়ে বালুয়া নদীতে ঝাঁপ দেন তিনি। সেখান থেকে এলাকাবাসী উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় তাকে।
চার সন্তানের মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে রিপন চৌহান জানায়, ওরা সবাই মারা গেছে, কাউকে মেরে ফেলা হয়নি। কোন বাবাই তার সন্তানকে হত্যা করতে পারে না।
এদিকে হাসপাতাল সূত্র জানায়, এক সিএনজি চালক দগ্ধ রীতা চৌহানকে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রেখে যান। এরপর তাকে ভর্তি করে হাসপাতালে যেসব ওষুধ আছে-তা দিয়ে চিকিৎসা চলছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. মো. রবিউল ইসলাম বলেন, সোমবার থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখা দিয়েছে। অভিভাবক না থাকায় অন্যত্র পাঠাতো পারছি না। আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।
খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি রাবেয়া ইসলাম ডলি। উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. ইসতিয়াক আহাম্মেদ সমাজসেবা অধিদফতরের রোগী কল্যাণ তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করে দেন।
ইউএনও মর্জিনা আক্তার ও গৌরীপুর থানার ওসি দেলোয়ার আহম্মদ, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) তারিকুজ্জামান নির্যাতিত এ নারীর পক্ষে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এদিকে গরম পানি দিয়ে স্ত্রীর শরীর ঝলসে দেয়ার অভিযোগে রিপন চৌহানকে আটক করা হয়েছে বলে জানান গৌরীপুর থানার ওসি দেলোয়ার আহাম্মদ। তিনি জানান, নির্যাতনের শিকার রীতা চৌহানের পরিবারের লোকজনকে খোঁজা হচ্ছে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ