ছেলের ছাগল চুরির অভিযোগে বাবা আঙ্গুর মিয়াকে (৫০) ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আটকে রেখে দিনভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান কাউছার রশিদ বিপ্লবের বিরুদ্ধে।
এসময় ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে এক লাখ টাকা দাবি করা হয় বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার খিদিরপুর ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে। পরে বুধবার (২৯ মার্চ) সকালে অসুস্থ অবস্থায় আঙ্গুর মিয়া মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার চরসাগরদী গ্রামের এক বাড়ি থেকে ছাগল চুরি হয়। এ ঘটনায় আঙ্গুর মিয়ার ছেলে সাদিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে তাঁর খোঁজে বাড়িতে আসেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. কাউছার রশিদের লোকেরা। এ সময় বাড়ির সব জায়গায় তাঁকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের দ্রুত খুঁজে বের করে দিতে বলে চলে যান তাঁরা। পরে সকাল ১০টার দিকে কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে আবার বাড়িতে আসেন চেয়ারম্যানের ১০-১২ জন কর্মী-সমর্থক। ওই সময় সাদিকুলকে না পেয়ে তাঁর বাবা আঙ্গুর মিয়া ও মা রিমা আক্তারকে টেনেহিঁচড়ে অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যান।
ইউপি কার্যালয়ে নেওয়ার পর রিমা আক্তারকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে সেখানে একটি কক্ষে আঙ্গুর মিয়াকে দিনভর আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। তাকে ছাড়িয়ে নিতে পরিবারের লোকজন ইউপি চেয়ারম্যান কাউছার রশিদ বিপ্লবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন চেয়ারম্যান। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত ভুক্তভোগীকে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আটক রাখা হয়ে। পরে রাত ২টার দিকে মুচলেকা নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আঙ্গুর মিয়া মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
ভুক্তভোগীর স্ত্রী রিমা আক্তার বলেন, আমার ছেলে নাকি ছাগল চুরি করেছে, এমন মিথ্যা অভিযোগে ছেলেকে বাসায় না পেয়ে চেয়ারম্যানের লোকজন আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে তার কার্যালয়ে আটকে রেখে নির্যাতন করেন। আমি রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে আমার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছি কিন্তু আমার অনুরোধ রাখেনি। উল্টো চেয়ারম্যান এক লাখ টাকা দাবি করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলে সাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার করা হোক। কিন্তু আমার স্বামীকে এভাবে ধরে এনে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মারধর করায় আমাদের মানসম্মানের হানি হয়েছে। আমি চেয়ারম্যানের বিচার চাই।
খিদিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. কাউছার রশিদ বিপ্লব বলেন, আঙ্গুর মিয়ার ছেলে সাদিকুল আগে এলাকায় অনেক গরু ছাগল চুরি করেছে। তার ছাগল চুরির সহযোগী মাহমুদুল হাসান নামে একজনকে (১৬) আটক করেছি। সে এখন আমার কার্যালয়ে রয়েছে। আঙ্গুরের ছেলেকে বাড়িতে না পেয়ে আমার লোকজন তার বাবাকে ধরে নিয়ে এসেছে।
ছেলেকে না পেয়ে কেন বাবাকে আটক করে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা হয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ছেলেকে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করায় বাবাকে আটক করা হয়েছে। তবে, তাকে মারধর করা হয়নি ও কোনো টাকাও চাওয়া হয়নি।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ছাগল চুরির অভিযোগে দুইজনকে আটক করা হয়েছে বলে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। খোঁজ খবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএ/